Ajker Patrika

নারী ও শিশুরা রাতে পালায়, দিনে ফেরে

মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষংছড়ি (বান্দরবান)
নারী ও শিশুরা রাতে পালায়, দিনে ফেরে

অংচেই তঞ্চঙ্গ্যা গৃহিণী। বয়স চল্লিশোর্ধ্ব। তাঁর চার সন্তান। এদের তিনজন পড়ালেখা করে স্থানীয় ভাজাবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্বামী উচাইন তঞ্চঙ্গ্যা বেকার। আগে শ্রমের বিনিময়ে সংসার চালাতেন, বর্তমানে কাজ নেই। এর কারণ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ ও সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রাখা। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা আর বিকেল ৫টা থেকে সারা রাত গোলাগুলি করে সীমান্তে।

অংচেই তঞ্চঙ্গ্যা আরও বলেন, এ ছাড়া সীমান্তে নতুন করে স্থলমাইন বসিয়ে রেখেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী। সেখানে গেলেই মাইন বিস্ফোরিত হয়। গত শুক্রবার সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে অন্ন থোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা নামের তাঁদের এক প্রতিবেশীর একটি পা উড়ে যায়। সে কারণে বনের দিকে যাওয়া এখন বন্ধ। কেউ বনে গিয়ে লাকড়ি, বাঁশ-গাছ কেটে বাজারে বেচা-বিক্রি করতে পারছেন না। যুদ্ধাবস্থায় সীমান্তের সব ধরনের কাজ ও আয়-রোজগার বন্ধ। তাই তাঁরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। স্বামীকে বাড়িতে পাহারায় রেখেই তাঁরা অন্যত্র আশ্রয় নেন আর পরের দিন সকালে বাড়ি ফেরেন। এভাবে এ পাড়ার ২৮ পরিবারের অধিকাংশেরই এই অবস্থা।

এ পাড়ার চিংলাথাইন তঞ্চঙ্গ্যা, থাইমং তঞ্চঙ্গ্যা, মংহ্লা তঞ্চঙ্গ্যা, উজাইনমেই তঞ্চঙ্গ্যা ও চন্দ্রমোহন তঞ্চঙ্গ্যা—সবার দাবি, বিজিবি তাঁদের বেশি চাপাচাপি করে। সীমানাঘেঁষা বলেই তাঁরা সামান্য দূরে গিয়ে নিরাপদ থাকতে চান।এ পাড়ার প্রায় ৩০ নারী-শিশু অন্যত্র আশ্রয় নিতে চলে যাচ্ছে। তারা টমটম খুঁজছিল। তখন একটি টমটম এসে পড়লে তারা সেটাতেই উঠে পড়ে। ঠিক সে মুহূর্তে স্থানীয় বিজিবি জওয়ানরা এসে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে দেয় এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এতে তারা বাড়ি ফিরে গেলেও অনেকে গভীর রাতে ঠিকই অন্যত্র আশ্রয় নেয়; যা বিজিবির অগোচরে। তবে তারা পরদিন সকালে আবারও নিজ নিজ বাড়ি ফিরে আসে। এ সময় তাদের বিজিবি সদস্যরা আশ্বস্ত করে বলেন, বিজিবি সীমান্তে চোরাচালান রোধ ও সীমান্তের লোকজনকে যথাসম্ভব নিরাপত্তা দেবে। তাই দেশের কোনো নাগরিক নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যাবে কেন? বিজিবি সতর্ক আছে। তবে এ বিষয়ে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি কর্তৃপক্ষ বা তাদের কোনো সদস্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টানটু সাহা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব থানা-পুলিশের হলেও বিজিবি কয়েক কিলোমিটার এলাকায় কাজ করে থাকে।নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্তের এ পরিস্থিতিতে নাগরিক সমস্যা বেড়ে গেছে। তবে নাগরিক অধিকার যেন ঠিক থাকে, সবাইকে সেদিকে সুনজর রাখতে হবে।

চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গত সোমবার বিকেলে অজ্ঞাত স্থান থেকে খবর আসে, আরাকান আর্মি বা মিয়ানমার সরকারি বাহিনী তাঁদের ওপর গুলি চালাবে, হামলা করবে; তাই তাঁরা পালাতে চেয়েছিলেন, যা ছিল গুজব। তবে অনেকে হোয়াইক্ষ্যং চলে গেছে গোলাগুলির আতঙ্কে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত