শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইল সদর থানায় আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন। বাদীর অভিযোগ, আতিকুর রহমান প্রতারণা করে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন। মামলার কিছুদিন পরই আতিকুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দেড় বছর হতে চললেও টাঙ্গাইল সদর থানা-পুলিশ সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এতে বিচার শুরু হওয়ার আগেই আতিকুরকে দেড় বছর ধরে হাজতবাস করতে হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা মানছে না পুলিশ। এই আইন অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে ব্যর্থ হলে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে তদন্তের সময়সীমা অতিরিক্ত ১৫ দিন বাড়াতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তারা বর্ধিত সময়েও প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না। এতে একদিকে যেমন আইনের ব্যত্যয় ঘটছে, অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই আসামিদের মাসের পর মাস কারাভোগ করতে হচ্ছে।
তদন্তে ধীরগতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই মামলার তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব হয় না। তবে পুলিশ চেষ্টা করে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে তদন্ত শেষ করার।
আইনজীবীরা বলছেন, সময় ক্ষেপণের ফলে মামলাগুলো আইনের দৃষ্টিতে বৈধতা হারাচ্ছে। আদালত চাইলে এসব ক্ষেত্রে মামলা খারিজ করে দিতে পারেন। আর মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু মামলা খারিজ নয়; বিনা কারণে জেল খাটানোয় ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান করা জরুরি।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্ধিত সময় নিয়েও যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদন জমা দিতে না পারেন, তাহলে পয়েন্ট অব ল থেকে মামলার বৈধতা থাকে না। আদালত চাইলে তখন মামলা খারিজ করে দিতে পারেন। আবার কোনো ভুক্তভোগী সিআরপিসি অনুযায়ী ৫৬১ ধারায় হাইকোর্টকেও বিষয়টি অবহিত করতে পারেন।’
১,৪৭১ মামলায় আসামি ৩,৪২১
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবমতে, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১ হাজার ৪৭১টি মামলা হয়েছে। তাতে অভিযুক্ত করা হয়েছে ৩ হাজার ৪২১ জনকে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেড়-দুই বছর আগে দায়ের হওয়া ৭৫০টির বেশি মামলা এখনো তদন্ত পর্যায়ে। মামলার পরপর আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার আগেই ৮-১০ মাস করে কারাভোগ করতে হচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী, মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যাও বেশ কম। যদিও এই আইনের বিচার হয় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি জাতিসংঘ থেকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই বাদী
২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হওয়া এই আইনটি সে বছরের ৮ অক্টোবর কার্যকর হয়। তার পর থেকে সাড়ে চার বছর ধরে এই আইনের অপপ্রয়োগের নানা অভিযোগ, উদ্বেগ আর বিতর্ক যেন থামছেই না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা সম্পর্কে খোঁজ রাখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণামতে, এই আইনের মামলার অভিযোগকারীদের মধ্যে ৬৩৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করে দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে পুলিশ ও সরকারি কর্মচারী ১৯২ জন; আর রাজনীতিবিদ ২৪৯ জন। এই রাজনীতিবিদের মধ্যে ১৯৮ জনই ক্ষমতাসীন দলের। তাঁদের মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে বিপক্ষ দলের নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও ফেসবুক ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষকে। আসামিদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন বলছে, ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমন করতে এবং সর্বোপরি মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে।
অপপ্রয়োগের বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও একাধিকবার স্বীকার করেছেন গণমাধ্যমে।
সব মামলায় থাকছে জামিন-অযোগ্য ধারা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৩টি ধারার মধ্যে ১৪টি জামিন-অযোগ্য। ধারাগুলো হচ্ছে ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪। শুরু থেকে এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলায় একটি হলেও জামিন-অযোগ্য ধারা রাখতে দেখা গেছে। এ কারণে ৯ মাস ধরে আটক থাকা লেখক মুশতাক আহমেদ মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছয়বার আবেদন করেও জামিন পাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বেশ কয়েকটি ধারা ফৌজদারি আইনে জামিনযোগ্য হলেও এই আইনে জামিন-অযোগ্য। এখানে ধারা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। আইনটি বাতিল ছাড়া কোনো উপায় নেই। এসব ধারায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করা ভুক্তভোগীদের মানসিক ট্রমার কথা চিন্তা করে তিনি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
কারাগারে কত আসামি, হিসাব নেই
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি মামলায় প্রায় আট মাস ধরে কারাগারে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। বিচারিক আদালতে দুবার ওই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ।
আরেক মামলায় পাঁচ মাস জেল খেটে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়েছিলেন দিদারুল ভূঁইয়া। তাঁর বিরুদ্ধে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল। দিদারুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিএসএ ভিকটিম নেটওয়ার্ক নামে তাঁরা একটি সংগঠন গড়েছেন। সংগঠন থেকে এই আইনে হওয়া মামলার আসামিদের খোঁজখবর রাখা হয়। তাঁদের তথ্যমতে, খাদিজার মতো অনেক আসামি এসব মামলায় কারাগারে আছেন।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সারা দেশে কারাগারে আছেন শতাধিক আসামি। যদিও এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল সুজাউর রহমান বলেন, ‘মামলার ধারা অনুযায়ী কারাগারে আসামিদের সংখ্যা গণনা করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি ধারা ফৌজদারি মামলার ধারার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় সুনির্দিষ্ট হিসাব রাখা যাচ্ছে না। ফলে আসলে কত আসামি এখন কারাভোগ করছেন, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।’
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি আসামি কারাগারে আছেন। আলোচিত ব্যক্তি না হলে তাঁদের কথা আলোচনায় আসছে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবহারে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে উল্টো নিরাপত্তার নামে সংবিধান পরিপন্থী প্রক্রিয়া এবং আপামর জনগণের জন্য আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইল সদর থানায় আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন। বাদীর অভিযোগ, আতিকুর রহমান প্রতারণা করে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন। মামলার কিছুদিন পরই আতিকুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দেড় বছর হতে চললেও টাঙ্গাইল সদর থানা-পুলিশ সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এতে বিচার শুরু হওয়ার আগেই আতিকুরকে দেড় বছর ধরে হাজতবাস করতে হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা মানছে না পুলিশ। এই আইন অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে ব্যর্থ হলে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে তদন্তের সময়সীমা অতিরিক্ত ১৫ দিন বাড়াতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তারা বর্ধিত সময়েও প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না। এতে একদিকে যেমন আইনের ব্যত্যয় ঘটছে, অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই আসামিদের মাসের পর মাস কারাভোগ করতে হচ্ছে।
তদন্তে ধীরগতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই মামলার তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব হয় না। তবে পুলিশ চেষ্টা করে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে তদন্ত শেষ করার।
আইনজীবীরা বলছেন, সময় ক্ষেপণের ফলে মামলাগুলো আইনের দৃষ্টিতে বৈধতা হারাচ্ছে। আদালত চাইলে এসব ক্ষেত্রে মামলা খারিজ করে দিতে পারেন। আর মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু মামলা খারিজ নয়; বিনা কারণে জেল খাটানোয় ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান করা জরুরি।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্ধিত সময় নিয়েও যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদন জমা দিতে না পারেন, তাহলে পয়েন্ট অব ল থেকে মামলার বৈধতা থাকে না। আদালত চাইলে তখন মামলা খারিজ করে দিতে পারেন। আবার কোনো ভুক্তভোগী সিআরপিসি অনুযায়ী ৫৬১ ধারায় হাইকোর্টকেও বিষয়টি অবহিত করতে পারেন।’
১,৪৭১ মামলায় আসামি ৩,৪২১
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবমতে, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১ হাজার ৪৭১টি মামলা হয়েছে। তাতে অভিযুক্ত করা হয়েছে ৩ হাজার ৪২১ জনকে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেড়-দুই বছর আগে দায়ের হওয়া ৭৫০টির বেশি মামলা এখনো তদন্ত পর্যায়ে। মামলার পরপর আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার আগেই ৮-১০ মাস করে কারাভোগ করতে হচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী, মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যাও বেশ কম। যদিও এই আইনের বিচার হয় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি জাতিসংঘ থেকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই বাদী
২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হওয়া এই আইনটি সে বছরের ৮ অক্টোবর কার্যকর হয়। তার পর থেকে সাড়ে চার বছর ধরে এই আইনের অপপ্রয়োগের নানা অভিযোগ, উদ্বেগ আর বিতর্ক যেন থামছেই না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা সম্পর্কে খোঁজ রাখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণামতে, এই আইনের মামলার অভিযোগকারীদের মধ্যে ৬৩৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করে দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে পুলিশ ও সরকারি কর্মচারী ১৯২ জন; আর রাজনীতিবিদ ২৪৯ জন। এই রাজনীতিবিদের মধ্যে ১৯৮ জনই ক্ষমতাসীন দলের। তাঁদের মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে বিপক্ষ দলের নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও ফেসবুক ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষকে। আসামিদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন বলছে, ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমন করতে এবং সর্বোপরি মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে।
অপপ্রয়োগের বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও একাধিকবার স্বীকার করেছেন গণমাধ্যমে।
সব মামলায় থাকছে জামিন-অযোগ্য ধারা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৩টি ধারার মধ্যে ১৪টি জামিন-অযোগ্য। ধারাগুলো হচ্ছে ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪। শুরু থেকে এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলায় একটি হলেও জামিন-অযোগ্য ধারা রাখতে দেখা গেছে। এ কারণে ৯ মাস ধরে আটক থাকা লেখক মুশতাক আহমেদ মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছয়বার আবেদন করেও জামিন পাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বেশ কয়েকটি ধারা ফৌজদারি আইনে জামিনযোগ্য হলেও এই আইনে জামিন-অযোগ্য। এখানে ধারা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। আইনটি বাতিল ছাড়া কোনো উপায় নেই। এসব ধারায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করা ভুক্তভোগীদের মানসিক ট্রমার কথা চিন্তা করে তিনি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
কারাগারে কত আসামি, হিসাব নেই
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি মামলায় প্রায় আট মাস ধরে কারাগারে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। বিচারিক আদালতে দুবার ওই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ।
আরেক মামলায় পাঁচ মাস জেল খেটে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়েছিলেন দিদারুল ভূঁইয়া। তাঁর বিরুদ্ধে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল। দিদারুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিএসএ ভিকটিম নেটওয়ার্ক নামে তাঁরা একটি সংগঠন গড়েছেন। সংগঠন থেকে এই আইনে হওয়া মামলার আসামিদের খোঁজখবর রাখা হয়। তাঁদের তথ্যমতে, খাদিজার মতো অনেক আসামি এসব মামলায় কারাগারে আছেন।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সারা দেশে কারাগারে আছেন শতাধিক আসামি। যদিও এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল সুজাউর রহমান বলেন, ‘মামলার ধারা অনুযায়ী কারাগারে আসামিদের সংখ্যা গণনা করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি ধারা ফৌজদারি মামলার ধারার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় সুনির্দিষ্ট হিসাব রাখা যাচ্ছে না। ফলে আসলে কত আসামি এখন কারাভোগ করছেন, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।’
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি আসামি কারাগারে আছেন। আলোচিত ব্যক্তি না হলে তাঁদের কথা আলোচনায় আসছে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবহারে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে উল্টো নিরাপত্তার নামে সংবিধান পরিপন্থী প্রক্রিয়া এবং আপামর জনগণের জন্য আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে