Ajker Patrika

নগরের কোথাও হাঁটুপানি কোথাও কোমরপানি

সিলেট প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১১: ২৩
নগরের কোথাও হাঁটুপানি কোথাও কোমরপানি

‘ঘরে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। মাটির চুলা ছিল সেটাও পানিতে তলিয়ে গেছে, তাই রান্না করতে পারছি না। খাবার পানিও নেই। আমার এক আত্মীয় কিছু খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছেন, তাই দুপুরে খেতে পারছি। রাতে কী করব জানি না।’

কথাগুলো বলছিলেন নগরীর কাজিরবাজার এলাকার বস্তির বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম। তাঁর মতো একই অবস্থা বন্যাকবলিত নগরীর বিভিন্ন এলাকার বস্তির বাসিন্দাদের। অন্য সমস্যাগুলোর পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তাঁরা।

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর পানি উপচে গত সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকা। গতকাল মঙ্গলবার প্লাবিত এলাকায় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে নগরীর বন্যা পরিস্থিতি।

গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সুরমার উপচে পড়া পানি সড়ক, দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে। সোমবারে যেখানে হাঁটু পানি ছিল সেখানে মঙ্গলবার কোমরপানি হয়ে গেছে। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচলও। এসব এলাকার বাসিন্দাসহ এই প্লাবিত সড়কগুলো ব্যবহারকারীরা নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নগরীর অভিজাত এলাকা উপশহরের প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। পানি ঢুকেছে উপশহরসহ আশপাশের এলাকার বাসাবাড়িতেও।

নগরীর মাছুদিঘীর পাড় এলাকার বাসিন্দা অনিল পাল বলেন, বাসার সামনে জলে ছল ছল করছে। বাসা দুতলায় হওয়াতে রক্ষা পাইছি। কিন্তু ঘর থেকে বের হলেই হাঁটুপানি। এই হাঁটু পানি মাড়িয়ে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছি। প্রতিনিয়ত পানি বাড়তেছে। সকালের চেয়ে বিকেলে অনেক পানি বাড়ছে। এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে দেখিনি।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে সকাল ৬টায় ছিল ১৪.১৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১৪.১৮ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ছিল ১৪.২৪ সেন্টিমিটার, বিকেল ৩টায় ছিল ১৪.১৭ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির ডেন্জার লেভেল হচ্ছে ১২.৭৫ সেন্টিমিটার।

সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ছিল ১০.৯৪ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১১.০৯ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ছিল ১১.১২ সেন্টিমিটার, বিকেল ৩টায় ছিল ১১.২১ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির ডেন্জার লেভেল হচ্ছে ১০.৮০ সেন্টিমিটার।

এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে সোমবার। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ছিল ১৬.৭৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১৬.৭৮, দুপুর ১২টায় ছিল ১৬.৮৮ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির ডেন্জার লেভেল হচ্ছে ১৫.৪০ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে সোমবার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ছিল ১৩.৪৬ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ছিল ১৩.৫০, দুপুর ১২টায় ছিল ১৩.৫১ সেন্টিমিটার, বিকেল ৩টায় ছিল ১৩.৫৪ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে পানির ডেন্জার লেভেল হচ্ছে ১৩.০৫ সেন্টিমিটার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত