Ajker Patrika

আমদানির ধাক্কা রাবারশিল্পে

বদরুল ইসলাম মাসুদ, বান্দরবান
আমদানির ধাক্কা রাবারশিল্পে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী রাবারশিল্প নগরী হিসেবে খ্যাত। আশির দশকে ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত রাবারশিল্প গড়ে ওঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বাইশারী ইউনিয়ন ‘রাবারশিল্প নগরী’ হিসেবে পরিচিত। এই শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে অনেক মানুষের। এই শিল্পের কারণে বাইশারী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও পরিচিতি পেয়েছে।

রাবারের চাহিদা ও জোগানের সমতা, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, উদ্যোক্তাদের আগ্রহ রাবার চাষ প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ফলে তৈরি হয়েছে শত শত ব্যক্তিমালিকানাধীন রাবার বাগান; কিন্তু বাইশারীতে বিকাশমান রাবারশিল্প এখন ধ্বংসের মুখে। বিদেশ থেকে রাবার আমদানির ফলে দেশীয় রাবারশিল্প চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। রাবার বিদেশে রপ্তানি হতো বিধায় এটি ‘রপ্তানি ফসল’ হিসেবে গণ্য করা হতো। তবে রপ্তানিপণ্য এখন কাগজে-কলমে আছে, বাস্তবে এখন রাবার আমদানি করা হয়।

জানা গেছে, বাইশারীসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে রাবার বাগান রয়েছে। তবে দেশের সব চেয়ে বেশি রাবার চাষ হয় বান্দরবানের বাইশারীতে। বর্তমানে বাইশারীতে ব্যক্তিমালিকানা ও ঘরোয়া বাগান মিলে ১৫ হাজার একরের বেশি জমিতে রাবার বাগান রয়েছে। বাগানগুলোতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন আট হাজারের বেশি লোক। রাবারশিল্প বন্ধ হলে এসব শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে তিন দফায় বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় প্রায় ১৩ হাজার একর পাহাড়ি ভূমিকে রাবার চাষ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩০০ জুম্মু পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। উঁচু ভূমি বন্দোবস্তিকরণ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে বান্দরবানে পরিবারপ্রতি ৫ একর ২৫ শতক করে জমিতে এক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।

সূত্র মতে, আগে প্রতি মাসে ১২০ টন প্রক্রিয়াজাত রাবার শিট উৎপাদন করে বছরে ৪০ কোটি টাকার রাবার বিক্রি করা যেত, যাতে খরচ হচ্ছিল ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বর্তমানে একই ব্যয়ে উৎপাদিত একই পরিমাণ রাবার বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪ কোটি টাকায়।

দুই মাস ধরে বিদেশ থেকে রাবার আমদানির ফলে রাবারের দাম একেবারেই নিচে নেমে গেছে বলে জানান একাধিক বাগানমালিক। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতি কেজি রাবার ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে; কিন্তু বর্তমানে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। হঠাৎ দরপতনে বাগানমালিকেরা হতাশ। এই অবস্থায় রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের মাসিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান তাঁরা।

রাবার ব্যবসায়ীরা বলেন, একটি মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশীয় পণ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে বিদেশি পণ্য আমদানি করেছে অথচ রাবারের দরপতন হলেও তা থেকে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর দাম কমেনি। ব্যবসায়ী ও রাবার বাগানমালিকেরা দেশীয় এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

নাজমা খাতুন রাবার বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক শামশুল আলম বলেন, নামমাত্র আমদানি শুল্ক বসানোর কারণে আমদানিকারকেরা বিদেশ থেকে চাহিদার তুলনায় বেশি রাবার আমদানি করছেন, ফলে দেশীয় রাবারের চাহিদা কমে যাচ্ছে।

মো. আল আমিন আরও বলেন, কৃষিপণ্য হলেও শুকনো রাবার বিক্রির সময় সরকার ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও ৪ শতাংশ আয়কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক করেছে। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত বর্তমানে রাবারশিল্পের উন্নয়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ শিল্পকে বাঁচাতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং রাবারের ওপর ভ্যাট ও আয়কর প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।

নাজমা খাতুন রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন বলেন, বর্তমানে উৎপাদিত রাবার পণ্যও বিক্রি হচ্ছে না। গত মাসের উৎপাদিত রাবার এখনো গুদামে মজুত রয়েছে।

পিএইচপি ল্যাটেক্স অ্যান্ড রাবার প্রোডাক্ট লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক আমিনুল হক আবুল বলেন, তাঁর বাগানে  নিয়মিত-অনিয়মিত মিলে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। বিগত মাসের উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছেন। তবে এ অবস্থায় চলতে থাকলে তাঁরা উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন। এখন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে গেছে, যা এ শিল্পকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত