লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় বিএনপির ২৮ নেতার নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। দ্রুত এসব তালিকা বাদ দিয়ে নতুন কাউন্সিলরের তালিকা তৈরি করার দাবি জানান তাঁরা। তাঁদের দাবি, শুধু চরআলগী ইউনিয়নেই নয়, উপজেলার আরও ৯টি ইউনিয়নে একই ধরনের তালিকা করা হয়েছে। চরআলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনু এই ইউনিয়নের কাউন্সিলরের তালিকা করেন।

জানা গেছে, চরআলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য ২৫১ জনকে কাউন্সিলর করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মজিবুর রহমানকে একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দেখিয়েও কাউন্সিলর করা হয়। ৭ এপ্রিল সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই তারিখে সম্মেলন হয়নি। পরবর্তী সম্মেলনের তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

বিতর্কিত অন্য কাউন্সিলররা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন, আবদুল কুদ্দুস, আবদুল হাসিম; ২ নম্বর ওয়ার্ডে জয়নাল আবেদিন, আবুল কাশেম; ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মো. সেলিম; ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আফছার উদ্দিন, মো. সিরাজ, অবদুর রব, আবুল কাশেম, মো. দিদার, বেলাল উদ্দিন; ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মো. জামাল, আবদুজ জাহের, মো. মোস্তফা; ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মো. কামাল, মো. সিরাজ; ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মহি উদ্দিন হেজু, জাহের উদ্দিন মাল, মো. নিজাম (আবদুল মুন্সি), সাইফ উদ্দিন; ৯ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ ফরিদ, মো. লিটনসহ ২৮ জন। তাঁরা প্রত্যেকে ওয়ার্ড বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা।

গত মঙ্গলবার চরআলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. আবদুর রব সুমন কাউন্সিলর তালিকায় বিএনপি নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে এই অভিযোগ করেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়সহ সংশ্লিষ্ট আট নেতার কাছে তথ্যপ্রমাণাদিসহ একটি অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগে বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাউন্সিলর করা হয়। এতে করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির নেতাদের কাউন্সিলর কমিটি থেকে দ্রুত বাদ দিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাউন্সিলর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে নেতাদের প্রতি অনুরোধ করা হয়।

ইতিমধ্যে উপজেলা কমিটির সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের তদন্ত প্রতিবেদনেও এসব অনিয়মের সত্যতা মিলেছে বলে দাবি করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ইতিমধ্যে চরআলগী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় ২৮ জনের নাম রয়েছে বলে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি জেলার নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অন্য কোনো ইউনিয়নে এমন অভিযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলাল বলেন, শুধু যে চরআলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় বিএনপি নেতাদের নাম রয়েছে, তা নয়। প্রতিটি ইউনিয়নে উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতারা তাঁদের স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম বাদ দিয়ে বিএনপি নেতাদের দিয়ে কাউন্সিলর তালিকা করা হয়। পরে কাউন্সিল শেষে আবার ওই সব বিএনপি নেতার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। এভাবে চলছে রামগতি উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। দ্রুত এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সামনে ত্যাগী ও যোগ্য নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও ফোন রিসিভ না করায় তাঁর মতামত পাওয়া যায়নি।