আবু সাইম, ঢাকা
জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে, তখনই ঘুম ভাঙে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। নানা অসংগতির এই প্রকল্পটি এখন তড়িঘড়ি করে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে প্রায় ২০ হাজার কোটিতে তুলে; বিদেশভ্রমণ, বিলাসী গাড়ি কেনাকাটাসহ বিচিত্র সব ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়ে মোক্ষম সময়ে প্রকল্পটি পাস করিয়ে নেওয়ার যাবতীয় আয়োজন এখন প্রায় চূড়ান্ত। বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে আরও নানা সন্দেহজনক খরচের খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কেন এত খরচ বাড়ল, কেন বিদেশভ্রমণে এত অপচয় করতে হবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবের পরই তা উঠবে অনুমোদনের জন্য। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিষয়গুলো কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় তোলা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল মজুতের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি যথাসময়ে শুরু করা গেলে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতো। আর প্রতিবছরে সরকারের সাশ্রয় হতো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমান মজুত সক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হতো ৪৫ লাখ টন। অথচ এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পটিকে হিমঘরে রাখা হয়। এখন জ্বালানি তেলের দাম লাগামহীন হওয়ায় টনক নড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির। অথচ করোনার শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তখন এ রকম একটি শোধনাগার করা গেলে, জ্বালানি তেলের বিশাল মজুত রাখার পাশাপাশি এর পেছনে খরচও অনেকাংশে কমানো সম্ভব ছিল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের নথিপত্র বলছে, প্রকল্পে বিশাল বহরের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সভা করার জন্য বিদেশে ভ্রমণ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। দামি আসবাব, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও গাড়ি ক্রয়, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ধারণাভিত্তিক বেশি ব্যয়ের কথাও বলা হয়েছে।
কেন এই প্রকল্প?
প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে ইআরএল বলছে, রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল শোধনাগার রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। বর্তমানে সেখানে বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রসেসিং ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশের পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান পরিশোধন প্ল্যান্টটি ৫০ বছরের পুরোনো। সেখানে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ জন্য আরও ৩ কোটি মেট্রিক টন পরিশোধনক্ষমতার ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এতে ইআরএলের বার্ষিক ক্রুড প্রসেসিং ক্ষমতা প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা মোট চাহিদার ২০ শতাংশ বেড়ে ৭০ শতাংশের মতো হবে। এর মাধ্যম গ্যাসোলিন ও ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাতে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রাখা যাবে।
দফায় দফায় কেন বাড়ল ব্যয় প্রস্তাব
ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তবে গত এক যুগে এ প্রকল্পের প্রস্তাব কমপক্ষে ১০ বার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব সংশোধন করে অঙ্ক বাড়ানো হলেও কেন তা অনুমোদন হলো না, কেন এক যুগেও বাস্তবায়ন শুরু করা গেল না, ইআরএল বা বিপিসি এ প্রশ্নে নিরুত্তর।
প্রকল্পের অসংগতি ও অতিরিক্ত ব্যয়
এ শোধনাগারের আয়ুষ্কাল ২০ বছর হলেও জমি লিজ নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জন্য। এ ছাড়া ১ হাজার ১২২ স্কয়ার মিটারের খাবারের ক্যানটিন, আবাসিক এরিয়ায় দুটি মসজিদ, মসজিদ কোয়ার্টার, ৬ তলা ব্যাচেলর অফিসার্স হোস্টেল, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাবসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার বর্গমিটারের অফিস ও আবাসিক ভবনের জন্য ব্যয় হবে ৪৫৬ কোটি টাকা।
এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশাসনিক ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা প্রকল্পের সঙ্গে যায় না। তা ছাড়া নতুন করে যেসব স্থাপনার কথা বলা হয়েছে, তা ইআরএল-১ ইউনিটের আওতায় আগেই তৈরি করা হয়েছে। তাই খুবই জরুরি ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা বাদ দিতে হবে। আবার দুই তলা অনেকগুলো ভবনের পরিবর্তে জমি সাশ্রয়ে বহুতল ভবনে জোর দিতে হবে।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ও সভা
প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ৩৮৯ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনীতে তা কমে ১৮৪ জন হয়েছে। তবে এ তালিকার তিন ভাগের দুই ভাগ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের জন্য ঠিকাদার অফিসে যাতায়াত, ভেন্ডরের কারখানা পরিদর্শনসহ মোট ১৬টি সভা বিদেশে করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশিক্ষণ ও মিটিং ব্যয়ে লাগাম টানতে হবে।
আরও যত খরচের খাত
প্রকল্প প্রস্তাবে অন্যান্য মূলধন ব্যয় খাতে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, ইপিসি ঠিকাদারের মালিকপক্ষের ব্যবস্থাপনাকাজে ১১ কোটি টাকা, ভেন্ডর খরচ ১৩৫ কোটি টাকা, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা, তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ইপিসি ডিজাইন-বিষয়ক সমীক্ষায় বা পরামর্শক খাতে ২৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কমিশন বলছে এসব কাজ, এ প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস অফ দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’-এর আওতায় করার কথা। এ ক্ষেত্রে এই কাজ দুই প্রকল্পে করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন না করে অনুমানভিত্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এর মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট এডিটিভস অ্যান্ড লুবরিক্যান্টস খাতে ২০১ কোটি টাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ১৩৫ কোটি টাকা, প্রকৌশল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, গবেষণাগার ও রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামে ১৪১ কোটি টাকা। কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা রাখার পরও ইপিসি ঠিকাদারের ১৪৩ কোটি টাকা বিবিধ খাতের খরচ। এসব ব্যয়ে কোন খাতে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে তার উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবের পেছনে ৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূমি প্রায় সমতল হলেও ভূমি উন্নয়ন খাতে ১২৯ কোটি টাকার খরচ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করে এ ব্যয় অনেক বেশি, যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রকল্পে গাড়ি-তেল-মেরামত
প্রকল্পের পুরো কাজই এক সীমানার মধ্যে হলেও কাজের তদারকির জন্য তিনটি গাড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো একটি বিলাসবহুল এসইউভি, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাস। এতে ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকার বেশি। গাড়ির জন্য তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৫ বছরে ৯০ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয় নতুন কেনা গাড়ি মেরামতের জন্যও চাওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ তিন খাতের ব্যয়ই অনেক বেশি। এগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক নতুন রিফাইনারির প্রকল্প শুরু হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দামের যে অবস্থা তাতে আমাদের আরও পরিশোধনাগার থাকলে এত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হতো না। পরিশোধন ক্ষমতা থাকলে আমরা বেশি তেল মজুতও করতে পারতাম, আমাদের তেল কম দামে ব্যবহার করতে পারতাম। অনেক বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হতো। তবে, এখানে পরিশোধনের পর শুধু ডিজেলই উৎপাদন হয় না। প্রায় ৮ ধরনের উপজাত উৎপন্ন হয় সেগুলোর চাহিদা দেশে কম, তাই রপ্তানি করতে হবে। এদিকটিও দেখতে হবে।’
ইআরএলের বক্তব্য
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, ‘নানা কারণে এ প্রকল্পে বিলম্বিত হয়েছে। না হলে এত দিনে তো কাজ শেষ হয়ে যেত। এ শোধনাগার হলে এখন আমাদের সংকট অনেক কম হতো। আমরা তেলের দিক দিয়ে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারতাম। তবে এটি এখন দ্রুত অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প প্রস্তাবের কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ এলে তা সুরাহা করে আমরা দ্রুত এটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা নেব।’ প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিদেশে প্রশিক্ষণের যে প্রস্তাব আছে, তা প্রয়োজন আছে বলেই প্রকল্পের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করছে। শুরুতে আরও বেশি ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। গাড়িও ২-৩টির বেশি নয়। অনেকগুলো ভবন নির্মাণের কারণে আসবাবও বেশি লাগছে। দামও আমরা এ দেশে নামীদামি আসবাব কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছি।’
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
জানা যায়, শোধনাগার চালুর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্প ব্যয় উঠে আসার কথা। অর্থাৎ এক যুগ আগে প্রকল্পটি শুরু হলে এত দিন তার বিনিয়োগ উঠে আসার কথা। তবে শুরু থেকে এটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। বিদেশি বিনিয়োগ চেয়েও পাওয়া যায়নি। এখন বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের আয়ুষ্কাল মাত্র ২০ বছর। এত কম সময়ের জন্য এত বিশাল অঙ্কের ব্যয় পরিকল্পনা সংগতিপূর্ণ কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এ প্রকল্পের সহায়ক আরও দুটি প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ৪৪৯ কোটি টাকা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ২৬০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে। সব মিলেয়ে এ ব্যয় হবে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা।
জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন প্রকল্প এটি। উদ্যোগ নেওয়ার পর ১২ বছর কেটে গেছে কোনো নড়াচড়া বা তৎপরতা নেই। যখন জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের আগুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পোড়াতে শুরু করে, তখনই ঘুম ভাঙে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। নানা অসংগতির এই প্রকল্পটি এখন তড়িঘড়ি করে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে প্রায় ২০ হাজার কোটিতে তুলে; বিদেশভ্রমণ, বিলাসী গাড়ি কেনাকাটাসহ বিচিত্র সব ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়ে মোক্ষম সময়ে প্রকল্পটি পাস করিয়ে নেওয়ার যাবতীয় আয়োজন এখন প্রায় চূড়ান্ত। বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে আরও নানা সন্দেহজনক খরচের খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কেন এত খরচ বাড়ল, কেন বিদেশভ্রমণে এত অপচয় করতে হবে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবের পরই তা উঠবে অনুমোদনের জন্য। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিষয়গুলো কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় তোলা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল মজুতের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি যথাসময়ে শুরু করা গেলে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতো। আর প্রতিবছরে সরকারের সাশ্রয় হতো অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। আর বর্তমান মজুত সক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বেড়ে হতো ৪৫ লাখ টন। অথচ এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পটিকে হিমঘরে রাখা হয়। এখন জ্বালানি তেলের দাম লাগামহীন হওয়ায় টনক নড়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির। অথচ করোনার শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তখন এ রকম একটি শোধনাগার করা গেলে, জ্বালানি তেলের বিশাল মজুত রাখার পাশাপাশি এর পেছনে খরচও অনেকাংশে কমানো সম্ভব ছিল।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের নথিপত্র বলছে, প্রকল্পে বিশাল বহরের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সভা করার জন্য বিদেশে ভ্রমণ সুযোগ রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। দামি আসবাব, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও গাড়ি ক্রয়, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ধারণাভিত্তিক বেশি ব্যয়ের কথাও বলা হয়েছে।
কেন এই প্রকল্প?
প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে ইআরএল বলছে, রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল শোধনাগার রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। বর্তমানে সেখানে বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রসেসিং ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশের পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান পরিশোধন প্ল্যান্টটি ৫০ বছরের পুরোনো। সেখানে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ জন্য আরও ৩ কোটি মেট্রিক টন পরিশোধনক্ষমতার ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এতে ইআরএলের বার্ষিক ক্রুড প্রসেসিং ক্ষমতা প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা মোট চাহিদার ২০ শতাংশ বেড়ে ৭০ শতাংশের মতো হবে। এর মাধ্যম গ্যাসোলিন ও ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাতে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রাখা যাবে।
দফায় দফায় কেন বাড়ল ব্যয় প্রস্তাব
ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তবে গত এক যুগে এ প্রকল্পের প্রস্তাব কমপক্ষে ১০ বার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব সংশোধন করে অঙ্ক বাড়ানো হলেও কেন তা অনুমোদন হলো না, কেন এক যুগেও বাস্তবায়ন শুরু করা গেল না, ইআরএল বা বিপিসি এ প্রশ্নে নিরুত্তর।
প্রকল্পের অসংগতি ও অতিরিক্ত ব্যয়
এ শোধনাগারের আয়ুষ্কাল ২০ বছর হলেও জমি লিজ নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জন্য। এ ছাড়া ১ হাজার ১২২ স্কয়ার মিটারের খাবারের ক্যানটিন, আবাসিক এরিয়ায় দুটি মসজিদ, মসজিদ কোয়ার্টার, ৬ তলা ব্যাচেলর অফিসার্স হোস্টেল, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাবসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার বর্গমিটারের অফিস ও আবাসিক ভবনের জন্য ব্যয় হবে ৪৫৬ কোটি টাকা।
এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশাসনিক ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা প্রকল্পের সঙ্গে যায় না। তা ছাড়া নতুন করে যেসব স্থাপনার কথা বলা হয়েছে, তা ইআরএল-১ ইউনিটের আওতায় আগেই তৈরি করা হয়েছে। তাই খুবই জরুরি ভবন ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা বাদ দিতে হবে। আবার দুই তলা অনেকগুলো ভবনের পরিবর্তে জমি সাশ্রয়ে বহুতল ভবনে জোর দিতে হবে।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ও সভা
প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ৩৮৯ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনীতে তা কমে ১৮৪ জন হয়েছে। তবে এ তালিকার তিন ভাগের দুই ভাগ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের জন্য ঠিকাদার অফিসে যাতায়াত, ভেন্ডরের কারখানা পরিদর্শনসহ মোট ১৬টি সভা বিদেশে করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রশিক্ষণ ও মিটিং ব্যয়ে লাগাম টানতে হবে।
আরও যত খরচের খাত
প্রকল্প প্রস্তাবে অন্যান্য মূলধন ব্যয় খাতে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, ইপিসি ঠিকাদারের মালিকপক্ষের ব্যবস্থাপনাকাজে ১১ কোটি টাকা, ভেন্ডর খরচ ১৩৫ কোটি টাকা, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা, তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ইপিসি ডিজাইন-বিষয়ক সমীক্ষায় বা পরামর্শক খাতে ২৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কমিশন বলছে এসব কাজ, এ প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস অফ দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’-এর আওতায় করার কথা। এ ক্ষেত্রে এই কাজ দুই প্রকল্পে করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন না করে অনুমানভিত্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এর মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট এডিটিভস অ্যান্ড লুবরিক্যান্টস খাতে ২০১ কোটি টাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ১৩৫ কোটি টাকা, প্রকৌশল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, গবেষণাগার ও রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামে ১৪১ কোটি টাকা। কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনে ৪৭৯ কোটি টাকা রাখার পরও ইপিসি ঠিকাদারের ১৪৩ কোটি টাকা বিবিধ খাতের খরচ। এসব ব্যয়ে কোন খাতে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে তার উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবের পেছনে ৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূমি প্রায় সমতল হলেও ভূমি উন্নয়ন খাতে ১২৯ কোটি টাকার খরচ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করে এ ব্যয় অনেক বেশি, যা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রকল্পে গাড়ি-তেল-মেরামত
প্রকল্পের পুরো কাজই এক সীমানার মধ্যে হলেও কাজের তদারকির জন্য তিনটি গাড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো একটি বিলাসবহুল এসইউভি, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাস। এতে ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকার বেশি। গাড়ির জন্য তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৫ বছরে ৯০ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয় নতুন কেনা গাড়ি মেরামতের জন্যও চাওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ তিন খাতের ব্যয়ই অনেক বেশি। এগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক নতুন রিফাইনারির প্রকল্প শুরু হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দামের যে অবস্থা তাতে আমাদের আরও পরিশোধনাগার থাকলে এত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হতো না। পরিশোধন ক্ষমতা থাকলে আমরা বেশি তেল মজুতও করতে পারতাম, আমাদের তেল কম দামে ব্যবহার করতে পারতাম। অনেক বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হতো। তবে, এখানে পরিশোধনের পর শুধু ডিজেলই উৎপাদন হয় না। প্রায় ৮ ধরনের উপজাত উৎপন্ন হয় সেগুলোর চাহিদা দেশে কম, তাই রপ্তানি করতে হবে। এদিকটিও দেখতে হবে।’
ইআরএলের বক্তব্য
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, ‘নানা কারণে এ প্রকল্পে বিলম্বিত হয়েছে। না হলে এত দিনে তো কাজ শেষ হয়ে যেত। এ শোধনাগার হলে এখন আমাদের সংকট অনেক কম হতো। আমরা তেলের দিক দিয়ে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারতাম। তবে এটি এখন দ্রুত অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প প্রস্তাবের কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ এলে তা সুরাহা করে আমরা দ্রুত এটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা নেব।’ প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয়ের খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিদেশে প্রশিক্ষণের যে প্রস্তাব আছে, তা প্রয়োজন আছে বলেই প্রকল্পের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করছে। শুরুতে আরও বেশি ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। গাড়িও ২-৩টির বেশি নয়। অনেকগুলো ভবন নির্মাণের কারণে আসবাবও বেশি লাগছে। দামও আমরা এ দেশে নামীদামি আসবাব কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছি।’
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
জানা যায়, শোধনাগার চালুর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্প ব্যয় উঠে আসার কথা। অর্থাৎ এক যুগ আগে প্রকল্পটি শুরু হলে এত দিন তার বিনিয়োগ উঠে আসার কথা। তবে শুরু থেকে এটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। বিদেশি বিনিয়োগ চেয়েও পাওয়া যায়নি। এখন বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের আয়ুষ্কাল মাত্র ২০ বছর। এত কম সময়ের জন্য এত বিশাল অঙ্কের ব্যয় পরিকল্পনা সংগতিপূর্ণ কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। এ প্রকল্পের সহায়ক আরও দুটি প্রকল্প ‘ফিড সার্ভিস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ৪৪৯ কোটি টাকা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ফর দা ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামে ২৬০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে। সব মিলেয়ে এ ব্যয় হবে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে