সিলেটের পর্যটন খাতেই ক্ষতি প্রায় ৫০০ কোটি

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
Thumbnail image

তিন দফা বন্যার পর আবার কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের চলমান অস্থিরতায় থমকে দাঁড়িয়েছে সিলেটের পর্যটন খাত। অলস সময় কাটাচ্ছেন পর্যটন এলাকার নৌকার মাঝি, দোকানিসহ সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলের পর্যটন খাত প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আবার পর্যটন চাঙা করতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট দ্রুত মেরামতের পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

ভারী বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ২৯ মে প্রথমবারের মতো প্লাবিত হয় সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, সাদা পাথর ও উৎমা ছড়া। পরদিন সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। বন্যা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয় ১০ জুনের দিকে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত ১৬ জুন থেকে পাঁচ দিনের সরকারি ছুটিকে সামনে রেখে আশায় বুক বাঁধেন হোটেল-মোটেলসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা। কিন্তু তাঁদের সে আশায় গুড়ে বালি। ঈদের ঠিক আগের দিনই আবারও নামে পাহাড়ি ঢল। ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় পর্যটন এলাকাগুলোতে। আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয় পর্যটনকেন্দ্র। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় নেয় আরও ১২ দিন। বন্যার ধকল কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছিলেন, ঠিক তখনই কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অস্থির হয়ে ওঠে দেশের পরিস্থিতি। কারফিউ জারি করা হয়, যা এখনো চলমান আছে। এমন অবস্থায় সিলেটে নেই পর্যটকের আনাগোনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেটের ভোলাগঞ্জ এলাকার সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের খাবারের হোটেলগুলো ক্রেতাশূন্য। অথচ এসব হোটেলে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকার খাবার বিক্রি হতো।

হোটেলমালিক জহির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবারের বন্যা আর বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের নিঃস্ব করে ফেলেছে। মূলধন যা ছিল, তা দিয়ে দোকানভাড়া আর কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে হোটেল পুরোপুরি চালু করার অর্থও নেই।’

দোকানি আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিবছর ঈদের লম্বা ছুটিতে শুধু সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রেই প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক ভিড় করেন। এ সময় বেচাকেনায় যে লাভ হয়, তা দিয়ে মন্দার সময়ের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু এবার তিন দফা বন্যায় ঈদের ব্যবসা শেষ।

সাদা পাথর এলাকায় নৌকার মাঝি রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০ বার পর্যটকদের নিয়ে জিরো পয়েন্টে যান তাঁরা। এতে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা রোজগার করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অলস সময় কাটছে তাঁদের। আয় বন্ধ হওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।

অন্যদিকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলো। প্রায় আড়াই মাস ধরে এই অবস্থা চলমান থাকায় মালিকদের অবস্থা শোচনীয়। লাভ তো দূরের কথা, খরচ মেটাতেই ব্যাংকঋণ নিতে হচ্ছে অনেককে।

সাদা পাথর রিসোর্টের ব্যবস্থাপক জুয়েল রানা জানান, দুই মাস ধরে তেমন কোনো বুকিং নেই। পর্যটক না থাকায় যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে, তা কীভাবে সামাল দেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

জাফলং জিরো পয়েন্টের গ্রিন রিসোর্টের মালিক বাবলু বখত জানান, বন্যার পরে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছিল। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে দেশে আবার অস্থির পরিবেশ তৈরি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ এমদাদ হোসেন বলেন, ‘গত আড়াই মাসে এই অঞ্চলে শুধু পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। ক্ষতি পুষিয়ে উত্তরণ সম্ভব একমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত