Ajker Patrika

প্রাচীন শহর তুলসী গ্রাম

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
প্রাচীন শহর তুলসী গ্রাম

তুলসী গ্রাম নামের সেই গ্রামটির কথা কেউ জানেন এখন? আমি নিশ্চিত, এ দেশের খুব কম মানুষ আছেন যাঁরা সে গ্রামটি সম্পর্কে জানেন। অথচ খোলনলচে বদলে গ্রামটি দিব্যি টিকে আছে এখনো একেবারে নাকের ডগায়!

নবাবি আমলের গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল তুলসী গ্রাম। তারও আগে এর নাম ছিল ডাক চর। কোম্পানি আমলের প্রথম দিক থেকে এখানে স্থানীয় তাঁতিদের শ্রমে গড়ে উঠেছিল তাঁতের মিল। স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়া তুলা থেকে তৈরি সুতা দিয়ে বোনা হতো কাপড়। তুলসী গ্রামের পাশের বাটিকামারা গ্রামে ছিল সেই তাঁতিদের বসবাস। ইতিহাস বলে, সুপ্রাচীন কাল থেকে তাঁতশিল্প ছিল তুলসী গ্রাম ও তার আশপাশের কয়েক শ গ্রামের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সেখানে তৈরি হতো শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা এবং বিছানার চাদর। তখনো যেমন, এখনো তেমনি সেসবের সুনাম আছে দেশজোড়া। এখন অবশ্য বিদেশেও সেগুলোর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।

তাঁতিদের এসব পণ্য বিক্রির জন্য আজ থেকে প্রায় দুই শ বছর আগে তুলসী গ্রামে বসানো হয়েছিল একটি হাট। নদীপথে যাতায়াত ছিল ব্যবসায়ীদের। সে পথেই তুলসী গ্রামে আসত বিভিন্ন মালামাল। এখন সে হাট বসে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার। স্থানীয়দের বাইরে রাজবাড়ী, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে এ হাটের বিকিকিনি চলে দুপুর পর্যন্ত। এখন শাড়ি তেমন একটা বিক্রি না হলেও লুঙ্গি, গামছা ও বিছানার চাদর বিক্রি হয় দেদার।

অনেক হলো মাথা খাটান। বলে দিই, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর প্রাচীন নাম তুলসী গ্রাম ও ডাক চর।

সবে আলো ফুটতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন কেবল। কেউবা দোকান গোছাচ্ছেন। দু–একজন করে ক্রেতা আসতে শুরু করেছেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখন আর আগের মতো ব্যবসা হয় না কুমারখালী হাটে। প্রতি হাটে আনুমানিক ২ কোটি টাকার মতো মালামাল কেনাবেচা হয় মাত্র!

কুমারখালীর বিশিষ্ট নাট্যকার লিটন আব্বাস জানিয়েছেন, কুমারখালী ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের হাট। আশির দশকেও এ হাটের জৌলুশ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের পর থেকে কুমারখালী হাটের জৌলুশ নষ্ট হতে থাকে। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বড় একটা অংশ এখন পোড়াদহ, শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গেছে।

ব্যবসায়ীদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকা, নিরাপত্তার অভাব, হাট পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ইত্যাদি হাটটির পিছিয়ে পড়ার কারণ।

কুমারখালীর সদকি ইউনিয়নের চালকুটি গ্রামের ৬২ বছর বয়সী তাঁতি আবদুর রহিম এই হাটের নিয়মিত ব্যবসায়ী। বাড়িতে নিজের তাঁতে তৈরি করেন বাহারি লুঙ্গি ও গামছা। দাদার হাত ধরে তিনি একসময় এ হাটে হাসতেন। পরে বাবার সঙ্গে এবং এখন তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন কুমারখালী হাটে। এ হাটের সঙ্গে এমন প্রজন্মের গল্প জড়িয়ে আছে প্রচুর।

লুঙ্গি ও গামছার ব্যবসায়ী জাবেদ আলী জানান, দেশ তো বটেই কলকাতা থেকেও নৌকাযোগে ব্যবসায়ীরা আসতেন এখানে। এ হাটের আলাদা একটা জৌলুশ ছিল তখন। সে জৌলুশ এখন আর নেই। কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামসুজ্জামান অরুণ জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক কুমারখালী হাট যাতে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়, পৌরসভার পক্ষ থেকে সে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

একাত্তর ও এক-এগারোর সময় বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন নীতি ভুল ছিল: ড্যানিলোভিচ

সীতাকুণ্ডে সৈকতে বন্ধুকে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত