Ajker Patrika

বাড়তি দামেও স্বস্তি মেলেনি

নরসিংদী প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২, ১৪: ১১
বাড়তি দামেও স্বস্তি মেলেনি

ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও স্বস্তিতে নেই নরসিংদী জেলার খামারিরা। দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির পর আবার জ্বালানি তেলের দামের প্রভাবে মুরগি পালনে প্রয়োজনীয় উপকরণসহ খাবার ও ওষুধের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। লাভের আশায় পুঁজি বিনিয়োগ করেও স্থায়ীভাবে লাভের মুখ দেখতে না পারায় অনেকে খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ব্যাংকঋণ নিয়ে কোনোরকমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখলেও অব্যাহত লোকসানের কারণে অনেকেই ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি পালন বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।

জেলা সদর ও বেলাব দেশের অন্যতম পোলট্রি জোন হিসেবে পরিচিত। এখানে ব্রয়লার ও লেয়ার পোলট্রি খামার ঘিরে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অনেক বেকার যুবকের। এখানকার খামারে উৎপাদিত মুরগি ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দখল করেছে রাজধানী ঢাকার বাজারের একটি বড় অংশ।

সরেজমিনে জেলা সদর ও বেলাবর খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অব্যাহতভাবে মুরগির খাবার, ওষুধ ও এক দিনের বাচ্চার দাম বাড়ার কারণে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক খামার।

এ ছাড়া বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মুরগি পালন ও বিক্রির সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। খামারিরা পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং শ্রম দিয়ে লোকসানের কারণে ইতিমধ্যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। নতুন করে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের দামের প্রভাব। মুরগি ও ডিমের উৎপাদন খরচ বাড়লেও আশাব্যঞ্জক লাভ না পাওয়ায় হতাশ খামারিরা।

নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দি এলাকার কাজী পোলট্রি ফার্মের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি পালনের জন্য ওষুধ, খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবেও এসবের দাম বেড়েছে। এতে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ৯ টাকার ওপরে। গরমে মুরগির ওষুধে বেশি ব্যয় হওয়ায় ডিম উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৯ টাকা ৩৫ পয়সা।

মো. রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ১৫ আগস্ট প্রতিটি ডিম বিক্রি করতে পেরেছেন ১১ টাকা ৬০ পয়সায়, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা ৬০ পয়সায়। গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি ডিমে ৭৫ পয়সা লোকসান হয়েছে।

বেলাব উপজেলার হোসেন নগর গ্রামের নাদিম পোলট্রি ফার্মের মালিক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকালে খামারে ১০০ ডিম বিক্রি করেছি ৯২০ টাকা দরে। ডিম উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। খাবারের দাম ও ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হচ্ছে।’

বেলাব উপজেলার বারৈচা বাজারের পোলট্রি ডিলার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানিকে আগাম টাকা দিয়ে বাচ্চা, ফিড এবং ওষুধ কেনার পর খামারিদের বাকিতে দিতে হয়। খাবার ও ওষুধের দাম বাড়ার কারণে খামারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, কিন্তু বিক্রি করতে হয় উৎপাদন খরচের চেয়েও কম মূল্যে। এ ছাড়া নানা রোগে মুরগির মড়ক লাগে। সম্প্রতি মুরগির দাম বাড়লেও সেটাও স্থায়ী হয়নি। গত বৃহস্পতিবার খামার থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি হয়েছে। মুরগির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিগুলো বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিতে দেরি করে না।

দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির পর আবার জ্বালানি তেলের দামের প্রভাবে মুরগি পালনে প্রয়োজনীয় উপকরণসহ খাবার ও ওষুধের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। লোকসানের কারণে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, জেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামারের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০ ও লেয়ার খামারের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০। এর বাইরেও অনেক খামারি রয়েছেন। খামারিরা মূলত দফায় দফায় খাবারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংকটের মধ্য দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগির বাচ্চা ও খাবার পেলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হতো না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত