নারায়ণগঞ্জে ৩ মাসে ২৪ বিস্ফোরণে ১৫ মৃত্যু

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ১৭

বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে নারায়ণগঞ্জে। গত ৩ মাসে সেখানে ২৪টি স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ১৫ জন। অধিকাংশ বিস্ফোরণ ঘটেছে লাইন ও সিলিন্ডারের লিকেজের ফলে জমে থাকা গ্যাসের কারণে। ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়লেও দুর্ঘটনা এড়াতে জনসাধারণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেই।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের নথি সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল ৯৬টি। এতে মারা যান অন্তত ৫৩ জন। ২০২২ সালে এমন ঘটনা ঘটে ৬৯টি। এতে মারা যান ৬০ জন। আর চলতি বছরের গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসের ২৪টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্যাসের কারণে ঘটেছে ২২টি বিস্ফোরণ। এসব ঘটনার কোনোটি তিতাসের লাইনের গ্যাস থেকে, কোনোটি সিলিন্ডার গ্যাস থেকে। বাসাবাড়িতে সাম্প্রতিক সময়ে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো প্রায় একই রকম। অধিকাংশ বিস্ফোরণের আগে রান্নাঘরে বা বাসাবাড়িতে দীর্ঘ সময় কেউ অবস্থান করেননি। কিংবা চুলা জ্বালানোর সময়ে বন্ধ ছিল দরজা-জানালা।

২৪টি ঘটনার বাকি দুটির একটিতে দাহ্য পদার্থের বিস্ফোরণ। আরেকটিতে জেনারেটর বিস্ফোরিত হয়েছিল। গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি আজীবন ক্ষত বয়ে বেড়াতে হচ্ছে অনেক ভুক্তভোগীকে। ১৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের একটি ফ্ল্যাট বাসায় বিস্ফোরণে দগ্ধ হন একই পরিবারের চারজন। এই ঘটনায় আহতদের একজন শাহিদা খাতুন। তিনি ২০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া তাঁর দুই ছেলে নবী হোসেন (২৯) ও আলী হোসেন (২৭) এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন।

আহত নবী হোসেন বলেন, রাতে তাঁর ছোট ভাই আলী হোসেন বাড়ি ফিরে গোসলের জন্য পানি গরম করতে চুলা ধরায়। এ সময় বিস্ফোরণে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। এতে ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা ভেঙে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের অনুসন্ধান বলছে, চুলার সঙ্গে পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ ঘটে। 

দুর্ঘটনা বেশি ফতুল্লায়
এলাকাভিত্তিক ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বিস্ফোরণ হয়েছে ফতুল্লায়। সেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে ১১টি। তিনটি করে বিস্ফোরণ হয়েছে শহর, বন্দর ও আড়াইহাজার এলাকায়। সিদ্ধিরগঞ্জে বিস্ফোরণ ঘটেছে চারটি। বিস্ফোরণ নেই সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জে। ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ পাইপলাইনের লিকেজ। এ থেকে গ্যাস বের হয়ে বাসাবাড়ি বা অন্যান্য স্থানে জমে থাকে। পরে কেউ আগুন জ্বালালে এর সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরিত হয়। আর এসব লিকেজের ক্ষেত্রে রান্নাঘর থেকে বিস্ফোরণের সংখ্যা বেশি। এমন ঘটনা থেকে রেহাই পেতে রান্নাঘরে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ ও বের হওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। জানালা খোলা থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। 

গ্যাসলাইন পুরোনো
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে পেট্রোবাংলার কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। এই প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের গ্যাসলাইনগুলো অন্তত ৪০ বছরের পুরোনো। ফলে লিক হচ্ছে।এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। তিতাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘লাইন পুরোনো হওয়ায় এতে মরিচা পড়ে লিকেজ তৈরি হয়। আপাতত অভিযোগ পেলে সারানো হয়। তবে পুরো গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থা সংস্কারে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। ফলে এই সমস্যার সমাধান শিগগির হবে না।’

এ নিয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ তিতাসের দায়িত্বরত উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম এবং প্রকৌশলী মুকবুল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত