দেড় শ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। কখনো সংস্কার হয়েছে, কখনো বেড়েছে আয়তন। কালের পরিক্রমায় অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ নামের এই মসজিদটি লাল মসজিদ নামেই বেশি পরিচিত।

চলতি মাসে এই লাল মসজিদ জোড়া স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রথমটি ইউনেসকো এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালচারাল হেরিটেজ কনসারভেশনে অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট ক্যাটাগরিতে। দ্বিতীয়টি মুসলিম বিশ্বের অনন্য মসজিদ স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নান্দনিক নিদর্শন হিসেবে। এর মধ্যে প্রথম স্বীকৃতি আসে চলতি মাসের প্রথম দিনে। আর দ্বিতীয় স্বীকৃতি এসেছে গত বুধবার।

এ ব্যাপারে দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাছউদ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য খুবই গর্বের। একই মাসে আমাদের মসজিদ দুটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।’

মাছউদ হাসান বলেন, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু ইতিহাস আর ঘটনার সাক্ষী। ১৮৬৮ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করেন দারোগা আমিনউদ্দীন আহম্মদ। এ কারণে এটি ‘দারোগা মসজিদ’ নামেও পরিচিত ছিল। আমিনউদ্দীনের ছেলে মইজ উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন মসজিদের প্রথম মোতোয়ালি। বংশ পরম্পরায় এই মসজিদের নির্মাণ ও সংস্কারকাজে নিয়োজিত ছিলেন খিদির বকশ ও কাদের বকশ নামের দুই সহোদর এবং মইজ উদ্দিনের পরিবার। কাদের বকশের নাতি সাবেক সাংসদ অধ্যাপক হামিদুর রহমান ১৯৬৮ সালে মিনারসহ মসজিদের বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবং মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে মসজিদের ব্যাপক সংস্কার করেন হামিদুর রহমানের ছেলে ঢাকা-৩ আসনের সাংসদ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

জানা যায়, লাল মসজিদ মুসলিম বিশ্বের অনন্য মসজিদ স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নান্দনিক নিদর্শন হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পর বুধবার রাতে মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-সালাম সম্মেলন হলে এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয়। বিজয়ী স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর পক্ষে ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

আবদুল লতিফ ফৌজান আন্তর্জাতিক মসজিদ স্থাপত্যশিল্পবিষয়ক অ্যাওয়ার্ডের তৃতীয় অধিবেশনের এবারের আয়োজনে মুসলিম বিশ্ব থেকে সাতটি মসজিদ স্থাপত্যশিল্পের অনন্য সাধারণ নিদর্শন হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এই পুরস্কারপ্রাপ্তির আগে চলতি মাসের প্রথম দিন জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালচারাল হেরিটেজ কনসারভেশনে অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পায় লাল মসজিদ।

এসব স্বীকৃতির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘বিজয়ের ৫০ বছরের দিনে এটা আমাদের দারুণ এক সুখবর। মুসলিম বিশ্বের মসজিদ স্থাপত্যশিল্পের নান্দনিক নিদর্শনের জন্য কেরানীগঞ্জের লাল মসজিদ নির্বাচিত হয়েছে। এর আগে এ মাসের প্রথম দিনেই নতুন লাল মসজিদটির পাশের পুরাতন ভবনটি ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে নতুন এবং পুরাতন দুইটা স্থাপনা বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ দুটি পুরস্কার অর্জন করল। এটা আমাদের জন্য গর্বের।’