ওয়াসার পানিতে ব্যাকটেরিয়া

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২২, ০৬: ২২
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ১৩: ১৮

চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা গভীর নলকূপের পানিতে ‘কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া’র উপস্থিতি ধরা পড়েছে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন আন্ত্রিক ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা তৈরি করে। কলিফর্ম মিশ্রিত পানি পানে ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড ছাড়াও ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস) রোগের সূচনা হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা।

গত ৬ মার্চ এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষা করতে চার সদস্যের কমিটি গঠনের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। কমিটিকে পানি পরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ জুন থেকে ওয়াসার ২৪ পয়েন্টের নমুনা নেওয়া শুরু করে কমিটি। পরে নমুনা পানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও পরিবেশ অধিদপ্তরে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নগরীর লাভ লেনের চট্টগ্রাম ওয়াসার গভীর নলকূপের পানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পরীক্ষা করা হলে কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

গত রোববার বিকেলে পানির নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, লাভ লেন এলাকার ওয়াসার গভীর নলকূপের পানি একটি ল্যাবে পরীক্ষার পর সে পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা শোচনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। অবশ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ওয়াসা যেসব সারফেস ওয়াটার (ভূমির উপরিভাগের পানি) গ্রাহকদের সরবরাহ করছে, সেগুলোতে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।

উচ্চ আদালত থেকে পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাননি কমিটির সদস্য ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাবাইদুল আলম। তিনি বলেন, ‘এমন কিছু (কলিফর্ম) থাকতে পারে। তবে আমি এখন এ বিষয়ে মন্তব্য করব না। প্রতিবেদনটি সিলগালা করে উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে বাকিটুকু বলা হবে।’

যে গভীর নলকূপের পানিতে কলিফর্ম পাওয়া গেছে, সেই নলকূপে উৎপাদিত পানি সরবরাহ করা হয় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন কার্যালয়, বন সংরক্ষকের কার্যালয় রাজাপুকুর লেন, বৌদ্ধ মন্দিরসংলগ্ন এলাকায়।

এ গভীর নলকূপ থেকে ঘণ্টায় ৭৫ হাজার লিটার (দিনে ১৮ লাখ লিটার) পানি উৎপাদন করে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন ওয়াসার মড-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পানির নমুনা নেওয়া হয়েছিল। তবে কোনো সমস্যা ধরা পড়েছে কিনা জানি না। আর কোনো সমস্যা থাকলে তো আমরা গ্রাহকদের ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যা হতো। এমনকি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকও এ পানি ব্যবহার করেন। কখনো অভিযোগ পাইনি।’

নাম প্রকাশ না করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সহনীয় মাত্রা শূন্য। এর বেশি হলেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। মূলত পানিতে প্রাণিজ বর্জ্যের মিশ্রণ ঘটলে ধরে নিতে হবে যে, পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে।

ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেন, পানির উৎপাদন ব্যবস্থায় কোনো জীবাণুর উপস্থিতি থাকার কথা নয়। তবে পানি সরবরাহ লাইনে অনেক সময় ফুটো হয়ে যাওয়ায় ড্রেনের ময়লা পানি ঢুকে ওয়াসার পানিকে দূষিত করে ফেলে। এ কারণে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত