Ajker Patrika

খামারির লাভ ব্যবসায়ীর গাঁটে

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ (রংপুর)
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২২, ১৬: ১১
খামারির লাভ ব্যবসায়ীর গাঁটে

রংপুরের তারাগঞ্জে খামারিরা প্রতি কেজি ব্রয়লার ৮০ টাকা বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০ টাকায়। সোনালি মুরগি ১৬০ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকা। এতে খামারিরা লোকসানে পড়লেও লাভের অংশ চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের হাতে।

তারাগঞ্জের পোদ্দারপাড়া গ্রামের হামিদুল ইসলাম চাষাবাদে লোকসান হওয়ায় ৩ বছর আগে তিনি গরু ও মুরগির খামার গড়ে তোলেন। খামারে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু ওই স্বপ্নেও ভাটা পড়ে। এবার গরু ও মুরগি বিক্রি করতে না পেরে প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি।

হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘লাভের আশায় চাষাবাদ ছেড়ে খামার গড়ে তুললাম। এখানেও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। তিন হাট ঘুরে খামারের গরু বিক্রি করতে পারিনি। হাটে গরু পরিবহন ভাড়া ২৫ হাজার টাকা লোকসান। খামারে ২ হাজার সোনালি মুরগি আছে, ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একজন এমন দাম করছেন তাতে উৎপাদিত ব্যয়ের অর্ধেকই লোকসান দিতে হচ্ছে।’

হামিদুলের মতো নিজে কিছু করার চিন্তা থেকে লেখাপড়া শেষ করে এনজিওতে চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়ে করোনার সময়ে বাড়িতে এসে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির খামার গড়ে তোলেন ইকরচালী ইউনিয়নের প্রামাণিকপাড়া গ্রামের মাহাবুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ইকরচালী হাটে মাইকিং করে মুরগি বিক্রি করতে দেখা যায়।

মাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই, দ্যাশে উদ্যোক্তা না হয়ে দালাল হওয়া উচিত। এক দিনের বাচ্চা লালনপালন করে দুই মাস হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে আয় হয় না। দুই ঘণ্টায় দালাল মুরগি বিক্রি করে সেই লাভ করে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার ১৩০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৭০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দালালেরা প্রতিকেজি ব্রয়লার ৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ১৬০-১৬৫ টাকা দর দিচ্ছে। ৩ হাজার মুরগি বিক্রি করলে ২ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে নিজে হাটে এসেছি।’

তারাগঞ্জের ১ হাজার ২৩১ জন গরুর খামারি ও ২১০টি পোলট্রির খামারি লোকসানের মুখে পড়েছেন। উচ্চমূল্যের খাদ্য এবং ওষুধের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেলেও গরু ও মুরগির দাম না বাড়ায় অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

তারাগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মুরগির ফিড এক বছরের ব্যবধানে ২ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গো-খাদ্যের দামও প্রতি বস্তায় বেড়েছে ৩০০ টাকা।

হাজিপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৭ টাকা। পাইকারেরা কিনছেন ৮০-৮৫ টাকায়। এবার ২ হাজার ২০০ মুরগিতে লোকসান হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।’

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইকরচালী কোরবানির পশুর হাটে কথা হয় কোমরপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতিবছর গরু পালন করেন। এবারও তিনি ৩ লাখ টাকায় ৬টি গরু কিনে মোটাতাজা করেছেন। কিন্তু এক বছর লালনপালন করার পর গরুগুলোর দাম হাঁকাচ্ছেন সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হিসাব করে দেখতেছি, ৬টি গরুতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলায় এবার কোরবানির গরুর চাহিদা প্রায় ৯ হাজার। কিন্তু প্রায় ১৫ হাজার গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদার তুলনা জোগান বেশি হওয়ায় বাজারে দাম একটু কম। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হওয়ায় ওই সব এলাকার খামারিরা তাঁদের উৎপাদিত মুরগি কম দামে বিক্রি এবং এ অঞ্চলের মুরগি বাইরে না যাওয়ায় বাজারদর কমে গেছে। খাদ্যের যে দাম ওই অনুযায়ী খামারিরা বাজার পাচ্ছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ভিসা নীতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে: বলছেন কূটনীতিকেরা

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল ও এনসিপি

নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল, পুলিশের টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ

ভারত ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত