চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ১৩টি এবং নওগাঁর বদলগাছির ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন আর মাত্র সাত দিন পর, ২৮ নভেম্বর। এখন জোর প্রচার চলছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গভীর রাত পর্যন্ত মাইকে ভোট চাওয়া হচ্ছে। উচ্চ শব্দের কারণে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচারের নিয়ম থাকলেও, তা চলছে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এতে অতিষ্ঠ এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। বিষয়টি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) মোবাইল ফোনে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্তানদের ভালো পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা।

শ্যামপুর ইউপির আজগবি গ্রামে সাইদুর রহমান বলেন, তাঁর মেয়ে এবার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষার্থী। সকাল থেকেই ভোটের মাইকে তাঁরা বিরক্ত। শব্দে বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। তাঁর মেয়ের পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। এমনকি নামাজের সময়ও প্রচার মাইক বন্ধ করা হয় না।

শরিফুল নামের আরেকজন অভিভাবক বলেন, দিনরাত উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে মিছিল করা হচ্ছে। এতে এসএসসি পরীক্ষার্থী খুব ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মোবাইলে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। ভোট যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী আর তাঁদের সমর্থকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।

শ্যামপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামান ভোদন বলেন, নির্বাচন অফিস থেকে প্রচারের বিষয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা মেনেই প্রচার চালানো হচ্ছে।

জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিবগঞ্জ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও আজকের পত্রিকাকে মো. সাকিব আল রাব্বি বলেন, নির্ধারিত সময়ের বাইরে কেউ যেন ভোটের প্রচার চালাতে না পারেন, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রচারের যানবাহন জব্দ করে জরিমানাও করা হয়েছে। এরপরও কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে প্রচার চালান, তবে জানামাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউপি নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। সেখানেও প্রচারবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দুপুর ১২টা থেকেই অধিকাংশ প্রার্থীর পক্ষে মাইকে ভোটের প্রচার চালানো হয়। রাত ৮টার পরও মাইক বাজানো হয়। গত বুধবার বদলগাছী উপজেলার, বদলগাছী সদর, পাহাড়পুর, মথরাপুর, মিঠাপুর, কোলা, বিলাসবাড়ী, আধাইপুর ও বালুভরা ইউপির বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, একযোগে সাত থেকে আটটি মাইকে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে।

মাইকের বিকট শব্দে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। সন্ধ্যায় তারা পড়াশোনা করতে পারছে না। মাইকে শব্দ দূষণ নিয়ে ব্যবসায়ী ও এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেজার উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। যদি কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।