Ajker Patrika

‘কোথায় মিলবে টিসিবির কার্ড’

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর, (নীলফামারী)
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৯: ০৬
‘কোথায় মিলবে টিসিবির কার্ড’

নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ইসলামবাগ এলাকার বিধবা শাহেরা খাতুন আগেও দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনেছেন। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়াতে হলেও হাতে পেয়েছেন পণ্য। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। পারিবারিক কার্ড ছাড়া তেল, চিনি ও ডাল কিছুই মিলছে না। কার্ড পেতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাড়ি ও পৌর কার্যালয়েও গেছেন। কারও কাছ থেকে তিনি কার্ড পাননি। জানতে চান, কোথায় গেলে কার্ড পাবেন তিনি।

গত রোববার দুপুরে শহরের শহীদ স্মৃতি অম্লান চত্বরে তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। জানান পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে বলেছেন, এখানে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়। লাইনে দাঁড়ালে কার্ড পাবেন। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়ানোর পর জানতে পারেন, কার্ড পাবেন না।

ষাটোর্ধ্ব শাহেরা খাতুনের স্বামী মারা গেছেন ২০ বছর আগে। ছেলের বয়স তখন ১০ বছর। থাকেন সৈয়দপুর রেলওয়ের জায়গায় ছোট্ট একটি ঘর বানিয়ে। এখন মা-ছেলের সংসার। ছেলে যখন যে কাজ পায়, সেটাই করে। ছেলের আয়ের ওপর চলে সংসার। তিনিও একটি বাড়িতে ঝির কাজ করেন। সেখান থেকে পান ২ হাজার টাকা।

কথায় কথায় শাহেরা খাতুন বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে আলু, শাক আর মসুর ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছি। বছরে এক-দুবার গরুর মাংস জোটে পাতে, তা-ও ঈদের সময়। এসব কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

একটু থেমে আবার বলা শুরু করেন তিনি। আর চোখ মোছেন বারবার। বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। কিছু টাকা বাঁচাতে টিসিবির পণ্য কিনতাম। এখন সেটিও সম্ভব হচ্ছে না।’

অবশ্য শাহেরা খাতুন একা নন, তাঁর মতো আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি কার্ডের খোঁজে এসেছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘এখানে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয় শুনে কার্ডের জন্য এসেছি।’

জানা গেছে, সৈয়দপুর পৌর এলাকায় ৬ হাজার ৬১৭ জনকে টিসিবির পণ্যের জন্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতি কার্ডের বিপরীতে দুই লিটার সয়াবিন, দুই কেজি আটা দেওয়া হচ্ছে। তিনজন ডিলারের মাধ্যমে শহরের তিনটি স্থান শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডের শহীদ স্মৃতি অম্লান চত্বর, পুরোনো বাবুপাড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠ ও শহীদ তুলসীরম সড়কে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়।

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আনোয়ারুল ইসলাম মানিক বলেন, এ ওয়ার্ডের জনসংখ্যা ৩০ হাজারেও বেশি। কিন্তু কার্ড দেওয়া হয়েছে ২৫০টি। এ কারণে সবাই কার্ড পাননি।

এদিকে সরেজমিন টিসিবির পণ্য বিক্রিতে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। একজন একাধিক কার্ড এনে পণ্য নিয়ে গেছেন। আবার অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও পণ্য পাননি। এ ছাড়া কোন স্থানে বিক্রি হচ্ছে, তা না জানায়ও বিপাকে পড়েন ক্রেতারা। শতাধিক মানুষ পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন। যাওয়ার সময় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এমনই একজন আরমান হোসেন। তিনি শহরের কয়ানিজপাড়া থেকে প্রথমে আসেন স্থানীয় পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। সেখানে পণ্য পাননি। কয়েকজনের কাছে শোনেন, পণ্য বিক্রি হচ্ছে শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের শহীদ স্মৃতি অম্লান চত্বরে। তবে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। তিনি ফিরে যান খালি হাতে।

বিক্রয়কর্মীরা জানান, যে পরিমাণ কার্ড দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ এসেছেন। যাঁরা আগে এসেছেন, তাঁদেরই পণ্য দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত