কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২২, ০৬: ৩৩
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১১: ৫৬

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ভোটের উৎসবে মেতেছিলেন নগরের ভোটাররা। গতকাল বুধবার সকালে ভোট গ্রহণের শুরুতেই ঝুম বৃষ্টি, বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) অকেজো, ধীরগতি, আঙুলের ছাপ না মেলা, ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে না জানাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এমনকি বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি থাকার কারণে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও ভোট গ্রহণ করেছেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা।

এদিকে প্রতিটি কেন্দ্রে দিনভর উত্তেজনা ছিল। সন্ধ্যা থেকে ফলাফল ঘোষণা নিয়েও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ও স্নায়ুযুদ্ধ চলেছে। মূলত মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আরফানুল হক রিফাত ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যে এই উত্তেজনা দেখা যায়।

নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রাপ্ত ফলাফল ঘোষণায় একেকবার একেকজন এগিয়ে যান। এগিয়ে থাকা প্রার্থীর সমর্থকেরা ঝড় তোলেন সামাজিক মাধ্যমে। পরেরবার তোলে আরেক পক্ষ। এ নিয়ে চাপে থাকে দুপক্ষই।

সকাল নয়টার দিকে নগরীতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। তাতে এক দফা ভোটে বিঘ্ন ঘটে। দিনভর বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএমের কারণে ভোটদানে ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে এসেছেন ভোটাররা। ইভিএমে প্রবীণদের ভোটদানে কিছু অসুবিধা হলেও তরুণেরা ভোট দিয়েছেন স্বাচ্ছন্দ্যে।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শ্রাবণী বণিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চকবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের প্রথম ভোট ইভিএমে দিয়েছি। এত সহজে ও সুন্দর পরিবেশে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ভোট দিয়ে আমি খুশি।’

একই কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম ও জিসান রাইহান বলেন, বিগত নির্বাচনে এমন পরিবেশ ছিল না, বিভিন্ন হাঙ্গামা দেখতেন। প্রথম ভোট এত সহজভাবে ও সুন্দর পরিবেশে দিতে পেরে তাঁরা খুশি। যাঁদের দিয়ে এলাকার কাজ হবে মনে করেছি, তাঁদেরই ভোট দিয়েছেন তাঁরা।

নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট দিতে এসে আঙুলের ছাপ মেলাতে পারেননি ৬০ বছর বয়সী শাহেরা খাতুন। পরে বাড়ি চলে যান। দুপুরের পর হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে এসে কয়েকবার চেষ্টা করার পর ভোট দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে ভোট দিতে এসে বৃষ্টির কারণে ফেরত যান ব্যবসায়ী সুফিয়ান রাসেল। পরে দুপুর থেকে ভোটারের সারিতে অপেক্ষা করে বিকেল সাড়ে চারটায় ভোট দেন তিনি।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শফিউল আজম বলেন, ‘ভোটার যেহেতু ভোট দিতে এসেই গেছেন, আর সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন, তাই তাঁদের ভোটদান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ভোট নিয়েছি।’

কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘চারটার মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও যাঁরা ভোটকেন্দ্রগুলোতে লাইনে অপেক্ষমাণ ছিলেন, তাঁদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ ভালো ও সুষ্ঠু ছিল। ভোট দিতে গিয়ে কেউ বাধার মুখে পড়েননি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষ ভোট উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন।’

এদিকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারসহ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ১১ জনকে সাজা ও জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা। আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া আফরিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ৬৪০টি বুথে ইভিএমে ভোট হয়েছে। ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। তাঁদের মধ্যে নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন ২ জন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত