Ajker Patrika

হর্নের শব্দে কান ঝালাপালা

প্রদীপ কুমার গোস্বামী, মিঠাপুকুর
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৩: ১৪
হর্নের শব্দে কান ঝালাপালা

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মিঠাপুকুরে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উচ্চ শব্দের হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনে এই হর্ন থাকলেও এখন স্থানীয় সড়কে চলাচল করা তিন চাকার যানও বাদ যাচ্ছে না। এ জন্য কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন সচেতন বাসিন্দারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ মাত্রার শব্দ তৈরি করা হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে সব ধরনের যানবাহনে এই হর্ন নিষিদ্ধ করে ২০১৬ সালে হাইকোর্ট একটি আদেশ দিয়েছিলেন।

স্থানীয় আইনজীবী এম ও ওয়াহেদ জানান, সরকার বা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু তারা যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে কেন তৎপর নয় তা বোধগম্য নয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে দ্রুতগামী দূরপাল্লার যানবাহনে উচ্চ শব্দের হর্ন ব্যবহার করা হতো। তা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বর্তমানে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইক এমনকি ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানেও এই হর্ন দিয়ে শব্দ করা হচ্ছে।

সড়ক-মহাসড়কে অহেতুক হর্নের ব্যবহারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষক মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিন রংপুর শহর থেকে কর্মস্থল মিঠাপুকুরে যাতায়াত করেন। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যানবাহনের অহেতুক উচ্চ শব্দের হর্নের ব্যবহারে তিনি অতিষ্ঠ।

সপ্তাহে পাঁচ দিন জেলা শহর থেকে মিঠাপুকুরে যাতায়াত করেন উপজেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহেদ। তিনি জানান, যানবাহনের হর্নের বিকট শব্দে বাসস্ট্যান্ডে এক মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। তাঁর মতে, জরুরি প্রয়োজনে হর্ন বাজাতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা বাজে অপ্রয়োজনে।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মল্লিকা পারভীন বলেন, গাড়িচালকেরা কোনো আইন মানতে চান না বা আইন সম্পর্কে তাঁদের ধারণা নেই। তিনি উচ্চ শব্দের হর্নের ব্যবহার ও ওভারটেকিং বন্ধ করার জন্য আইনের প্রয়োগ দাবি করেন।

বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, স্থান ভেদে শব্দের মাত্রার পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা ও অফিস পাড়ায় শব্দের মাত্রার মান বা পরিমাপ নির্ধারণ করা আছে। এসব স্থানে ৪০ থেকে ৬০ ডেসিবেল মাত্রার অতিরিক্ত শব্দের কোনো যন্ত্র ব্যবহার করা যায় না। মানুষ সাধারণত ৪০ থেকে ৬৫ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ সহ্য করতে পারেন। কিন্তু হাইড্রোলিক হর্নের শব্দের মাত্রা ৯৫ থেকে ১২০ ডেসিবেল বলে বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে।

উচ্চ মাত্রার শব্দে কী ধরনের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এম এ হালিম লাবলু বলেন, উচ্চ মাত্রার শব্দে হৃদ্‌রোগ, আলসার, মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া, শ্রবণ শক্তি হারানোসহ নানাবিধ শারীরিক-মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এম এ মজিদ জানান, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আলোকে বিধিমালা করা হয়েছে। এই বিধিমালা অনুযায়ী আইন ভঙ্গকারীকে জেল ও জরিমানা করে দণ্ড দেওয়া যায়।

মিঠাপুকুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধ করতে সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) রয়েছে। যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে তারা সহযোগিতা চাইলে পুলিশ পাশে থাকবে। তবে অহেতুক এবং নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উচ্চ শব্দের যেকোনো যন্ত্র ব্যবহার করলে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। মিঠাপুকুর এলাকায় কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে শব্দদূষণ করলে, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

থানায় থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা হচ্ছে

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত