অরুণ কর্মকার
আমাদের শহর-নগরাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে অনেক সমীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষণজাত তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন প্রায়ই আমরা প্রকাশিত হতে দেখি। এসব প্রতিবেদনের কোনোটির মুখ্য বিষয় থাকে শহর-নগরের অপস্রিয়মাণ সবুজের বিষয়টি। কোনোটির বিষয় থাকে জল-জলাশয়, কোনোটির বিষয় থাকে পয়োনিষ্কাশন ও নাগরিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য উপাদান। তবে এর প্রায় প্রতিটিরই অপরিহার্য উপাদান থাকে আমাদের শহর-নগরাঞ্চলে নাগরিকদের বসবাসযোগ্যতা নিয়ে।
যেসব সংস্থা ও সংগঠন এ ধরনের প্রতিবেদন জনসমক্ষে উপস্থাপন করে, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মধ্যে অন্যতম। বাপা নিয়মিতই শহর-নগরাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং নাগরিক জীবন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের মতামতসহ প্রকাশ করে থাকে। সম্প্রতি সংগঠনটি ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণে পরিবেশের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ ও পরিবেশবিষয়ক এক সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে। ফলে প্রতিবেদনটির ব্যাপ্তি হয়েছে আরও অনেক বেশি।
কারণ ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় কবিগুরু যতই বলুন না কেন ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর, লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর, হে নব সভ্যতা। হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী...’ নগরায়ণ থামিয়ে রাখা, এমনকি তার গতি শ্লথ করাও সম্ভব হবে না। আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সর্বগ্রাসী নব সভ্যতার যূপকাষ্ঠে আত্মবলিদানের মতো হলেও নগরায়ণ চলবে। আর বাপার এই প্রতিবেদনে স্থায়িত্বশীল (আমরা টেকসইও বলতে পারি) নগরায়ণকে মুখ্য বিষয় করা হয়েছে; অর্থাৎ যা অনিবার্য তা তো হবেই। কাজেই তাকে বাতিল করে না দিয়ে যদি স্থায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে মানুষের কল্যাণ হবে।
বাপার তথ্যমতে, ইতিমধ্যে আমাদের দেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আট কোটি মানুষ শহর-নগরাঞ্চলে বসবাস করছে। এই আট কোটির প্রায় ৩২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বাস করছে ঢাকায়। ঢাকাসহ অন্যান্য সব শহর-নগরাঞ্চলে যে এটা কত দ্রুতগতিতে ঘটছে, তা এসব শহর-নগরের প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করছি। আমরা এটাও দেখছি যে এসব নগরায়ণ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। ফলে আমাদের দেশে নগরায়ণ মানুষের জীবনে বড় সংকট সৃষ্টি করেছে।
বাপার তথ্যমতে, ক্রমাগত দখল ও দূষণে শহর-নগরগুলোর সবুজ এবং জল-জলাশয় উজাড় হয়ে যাচ্ছে। শহর-নগরের উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও বিনোদনের সুযোগগুলো অপসৃত হচ্ছে। এখানকার দূষিত বায়ু নানা রকম ব্যাধির জন্ম দিচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস করে অপরিকল্পিত এই নগরায়ণের ফলে একসময়ের উদ্যান-পার্কসমৃদ্ধ, খাল-ঝিল ও পুকুরে পরিপূর্ণ সবুজ-সজল শহর-নগরগুলো ক্রমান্বয়ে মানুষের সুস্থভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এরপরও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবেই চলেছে নগরায়ণ। কিন্তু এই নগরায়ণ স্থায়িত্বশীল বা টেকসই হতে পারে না। স্থায়িত্বশীলতার জন্য চাই পরিবেশসম্মত নগরায়ণ। কীভাবে তা করা যায়?
চাই সবুজ, আরও সবুজ
যেকোনো শহর-নগরাঞ্চলে ২৫ শতাংশ এলাকা থাকতে হয় বৃক্ষাচ্ছাদিত, মানে সবুজে আবৃত। কিন্তু ঢাকা মহানগরীতে এখন সবুজ এলাকা মাত্র ৮ শতাংশ। কিন্তু ঢাকার এই অবস্থা ছিল না। ২০০০ সালেও পাখির চোখে ঢাকাকে দেখা যেত একটা পার্কের মতো। তার সব উজাড় করে দেওয়া হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগরাঞ্চল-পরিকল্পনা বিভাগ এবং ইউএসএআইডির ২০২২ সালে পরিচালিত এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকা নগরাঞ্চল থেকে প্রতিবছর গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সবুজ ধ্বংস করা হয়েছে।
বাপার প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাছ আছে ১৪ শতাংশ, আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে ১০ শতাংশের কম জায়গাজুড়ে। ঢাকা মহানগরে ছায়াদানকারী বৃক্ষরাজিও এখন সংকটাপন্ন। স্থায়িত্বশীল নগরায়ণের জন্য এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সে জন্য ফিরিয়ে আনতে হবে সবুজ। বাড়াতে হবে বৃক্ষাচ্ছাদিত সবুজ এলাকা।
দরকার জলাশয়, জলাধার
বর্তমান ঢাকা মহানগরী এলাকায় একসময় মাকড়সার জালের মতো ছড়ানো ছিল খাল। ছিল অসংখ্য পুকুর-ডোবা, জলাশয়-জলাধার। সেগুলো রেখেই মহানগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা করা যেত। সেটা হতো স্থায়িত্বশীল। সেগুলোর প্রায় সবই দখল হয়ে গেছে। কিছু খাল-জলাশয় দূষণে এবং ভরাট হয়ে মরে গেছে। গত বছর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ল্যান্ডসেট স্যাটেলাইট বিশ্লেষণী গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার প্রায় ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি এই সময়ে এখানে নির্মাণ এলাকা ও স্থাপনা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ; অর্থাৎ নগরীর জলাশয় ধ্বংস করে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এখন এই নগরীর প্রতিটি মানুষ এর বিরূপ প্রভাব টের পাচ্ছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০১০ সালের ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) নগরীর ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এলাকা কৃষিজমি হিসেবে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২-৩৫ সময়কালের ড্যাপে তা কমিয়ে ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি ড্যাপে প্লাবন ভূমি হিসেবে চিহ্নিত ৬৬ শতাংশ এলাকার ৫৩ শতাংশ ‘শর্ত সাপেক্ষে’ উন্নয়নের আওতাধীন করা হয়েছে। বাপার মতে, সরকারি পর্যায়ে নগরীর এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট জলাশয়, খাল, পুকুরসহ বিদ্যমান জলাশয়-জলাধার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না করে দখলদারদের কাছে জিম্মি হওয়ার একটা মনোবৃত্তি প্রকটতর হয়েছে। এভাবে যে নগরায়ণ হচ্ছে, তা টেকসই হবে না।
দূষণমুক্ত বায়ু ও প্রতিবেশ চাই
স্থায়িত্বশীল নগরায়ণের জন্য নগরীতে বিশুদ্ধ বায়ু ও পরিচ্ছন্ন প্রতিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু ঢাকাসহ আমাদের শহর-নগরাঞ্চলে দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের বৈশ্বিক বাসযোগ্যতার সূচকে (গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স) ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর সপ্তম অবসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায় তার ২০ শতাংশ বায়ুদূষণের কারণে।
ঢাকাসহ আমাদের শহর-নগরাঞ্চলে ময়লা-আবর্জনা-দুর্গন্ধ নাগরিক জীবনের নিত্যসঙ্গী। গৃহস্থালি বর্জ্যের পাশাপাশি ভয়ানক স্বাস্থ্যহানিকর চিকিৎসাবর্জ্য এবং বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় উপাদানসংবলিত ইলেকট্রনিক বর্জ্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় স্থাপিত প্রায় ১০ হাজার শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য এখানকার নদী-জলাশয়কে দূষিত করছে।
সর্বোপরি প্রচলিত ধারার উন্নয়ন ও নগরায়ণে বহুগুণ বর্ধিত মাত্রার ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত। এই অভিঘাত থেকে বাঁচিয়ে উন্নয়নকে, নগরায়ণকে স্থায়িত্বশীল করতে দরকার সুপরিকল্পিত কার্যক্রম। এর প্রধান উপাদান অবশ্যই হতে হবে পরিবেশ। অন্যথায় আমাদের নগরায়ণ যেমন স্থায়িত্বশীল হবে না, তেমনি উন্নয়নও হবে ভঙ্গুর। ফলে মানুষের বিপন্নতা আরও বাড়বে। নীতিনির্ধারকদের জন্য বিষয়গুলো ভাবার এবং কাজে পরিণত করার চূড়ান্ত সময় এসে গেছে।
লেখক: অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আমাদের শহর-নগরাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে অনেক সমীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষণজাত তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন প্রায়ই আমরা প্রকাশিত হতে দেখি। এসব প্রতিবেদনের কোনোটির মুখ্য বিষয় থাকে শহর-নগরের অপস্রিয়মাণ সবুজের বিষয়টি। কোনোটির বিষয় থাকে জল-জলাশয়, কোনোটির বিষয় থাকে পয়োনিষ্কাশন ও নাগরিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য উপাদান। তবে এর প্রায় প্রতিটিরই অপরিহার্য উপাদান থাকে আমাদের শহর-নগরাঞ্চলে নাগরিকদের বসবাসযোগ্যতা নিয়ে।
যেসব সংস্থা ও সংগঠন এ ধরনের প্রতিবেদন জনসমক্ষে উপস্থাপন করে, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মধ্যে অন্যতম। বাপা নিয়মিতই শহর-নগরাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং নাগরিক জীবন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের মতামতসহ প্রকাশ করে থাকে। সম্প্রতি সংগঠনটি ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণে পরিবেশের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ ও পরিবেশবিষয়ক এক সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে। ফলে প্রতিবেদনটির ব্যাপ্তি হয়েছে আরও অনেক বেশি।
কারণ ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় কবিগুরু যতই বলুন না কেন ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর, লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর, হে নব সভ্যতা। হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী...’ নগরায়ণ থামিয়ে রাখা, এমনকি তার গতি শ্লথ করাও সম্ভব হবে না। আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সর্বগ্রাসী নব সভ্যতার যূপকাষ্ঠে আত্মবলিদানের মতো হলেও নগরায়ণ চলবে। আর বাপার এই প্রতিবেদনে স্থায়িত্বশীল (আমরা টেকসইও বলতে পারি) নগরায়ণকে মুখ্য বিষয় করা হয়েছে; অর্থাৎ যা অনিবার্য তা তো হবেই। কাজেই তাকে বাতিল করে না দিয়ে যদি স্থায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে মানুষের কল্যাণ হবে।
বাপার তথ্যমতে, ইতিমধ্যে আমাদের দেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আট কোটি মানুষ শহর-নগরাঞ্চলে বসবাস করছে। এই আট কোটির প্রায় ৩২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বাস করছে ঢাকায়। ঢাকাসহ অন্যান্য সব শহর-নগরাঞ্চলে যে এটা কত দ্রুতগতিতে ঘটছে, তা এসব শহর-নগরের প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করছি। আমরা এটাও দেখছি যে এসব নগরায়ণ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। ফলে আমাদের দেশে নগরায়ণ মানুষের জীবনে বড় সংকট সৃষ্টি করেছে।
বাপার তথ্যমতে, ক্রমাগত দখল ও দূষণে শহর-নগরগুলোর সবুজ এবং জল-জলাশয় উজাড় হয়ে যাচ্ছে। শহর-নগরের উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও বিনোদনের সুযোগগুলো অপসৃত হচ্ছে। এখানকার দূষিত বায়ু নানা রকম ব্যাধির জন্ম দিচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস করে অপরিকল্পিত এই নগরায়ণের ফলে একসময়ের উদ্যান-পার্কসমৃদ্ধ, খাল-ঝিল ও পুকুরে পরিপূর্ণ সবুজ-সজল শহর-নগরগুলো ক্রমান্বয়ে মানুষের সুস্থভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এরপরও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবেই চলেছে নগরায়ণ। কিন্তু এই নগরায়ণ স্থায়িত্বশীল বা টেকসই হতে পারে না। স্থায়িত্বশীলতার জন্য চাই পরিবেশসম্মত নগরায়ণ। কীভাবে তা করা যায়?
চাই সবুজ, আরও সবুজ
যেকোনো শহর-নগরাঞ্চলে ২৫ শতাংশ এলাকা থাকতে হয় বৃক্ষাচ্ছাদিত, মানে সবুজে আবৃত। কিন্তু ঢাকা মহানগরীতে এখন সবুজ এলাকা মাত্র ৮ শতাংশ। কিন্তু ঢাকার এই অবস্থা ছিল না। ২০০০ সালেও পাখির চোখে ঢাকাকে দেখা যেত একটা পার্কের মতো। তার সব উজাড় করে দেওয়া হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগরাঞ্চল-পরিকল্পনা বিভাগ এবং ইউএসএআইডির ২০২২ সালে পরিচালিত এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকা নগরাঞ্চল থেকে প্রতিবছর গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সবুজ ধ্বংস করা হয়েছে।
বাপার প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাছ আছে ১৪ শতাংশ, আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে ১০ শতাংশের কম জায়গাজুড়ে। ঢাকা মহানগরে ছায়াদানকারী বৃক্ষরাজিও এখন সংকটাপন্ন। স্থায়িত্বশীল নগরায়ণের জন্য এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সে জন্য ফিরিয়ে আনতে হবে সবুজ। বাড়াতে হবে বৃক্ষাচ্ছাদিত সবুজ এলাকা।
দরকার জলাশয়, জলাধার
বর্তমান ঢাকা মহানগরী এলাকায় একসময় মাকড়সার জালের মতো ছড়ানো ছিল খাল। ছিল অসংখ্য পুকুর-ডোবা, জলাশয়-জলাধার। সেগুলো রেখেই মহানগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা করা যেত। সেটা হতো স্থায়িত্বশীল। সেগুলোর প্রায় সবই দখল হয়ে গেছে। কিছু খাল-জলাশয় দূষণে এবং ভরাট হয়ে মরে গেছে। গত বছর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ল্যান্ডসেট স্যাটেলাইট বিশ্লেষণী গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার প্রায় ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি এই সময়ে এখানে নির্মাণ এলাকা ও স্থাপনা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ; অর্থাৎ নগরীর জলাশয় ধ্বংস করে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এখন এই নগরীর প্রতিটি মানুষ এর বিরূপ প্রভাব টের পাচ্ছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০১০ সালের ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) নগরীর ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এলাকা কৃষিজমি হিসেবে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২-৩৫ সময়কালের ড্যাপে তা কমিয়ে ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি ড্যাপে প্লাবন ভূমি হিসেবে চিহ্নিত ৬৬ শতাংশ এলাকার ৫৩ শতাংশ ‘শর্ত সাপেক্ষে’ উন্নয়নের আওতাধীন করা হয়েছে। বাপার মতে, সরকারি পর্যায়ে নগরীর এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট জলাশয়, খাল, পুকুরসহ বিদ্যমান জলাশয়-জলাধার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না করে দখলদারদের কাছে জিম্মি হওয়ার একটা মনোবৃত্তি প্রকটতর হয়েছে। এভাবে যে নগরায়ণ হচ্ছে, তা টেকসই হবে না।
দূষণমুক্ত বায়ু ও প্রতিবেশ চাই
স্থায়িত্বশীল নগরায়ণের জন্য নগরীতে বিশুদ্ধ বায়ু ও পরিচ্ছন্ন প্রতিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু ঢাকাসহ আমাদের শহর-নগরাঞ্চলে দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের বৈশ্বিক বাসযোগ্যতার সূচকে (গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স) ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর সপ্তম অবসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায় তার ২০ শতাংশ বায়ুদূষণের কারণে।
ঢাকাসহ আমাদের শহর-নগরাঞ্চলে ময়লা-আবর্জনা-দুর্গন্ধ নাগরিক জীবনের নিত্যসঙ্গী। গৃহস্থালি বর্জ্যের পাশাপাশি ভয়ানক স্বাস্থ্যহানিকর চিকিৎসাবর্জ্য এবং বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় উপাদানসংবলিত ইলেকট্রনিক বর্জ্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় স্থাপিত প্রায় ১০ হাজার শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য এখানকার নদী-জলাশয়কে দূষিত করছে।
সর্বোপরি প্রচলিত ধারার উন্নয়ন ও নগরায়ণে বহুগুণ বর্ধিত মাত্রার ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত। এই অভিঘাত থেকে বাঁচিয়ে উন্নয়নকে, নগরায়ণকে স্থায়িত্বশীল করতে দরকার সুপরিকল্পিত কার্যক্রম। এর প্রধান উপাদান অবশ্যই হতে হবে পরিবেশ। অন্যথায় আমাদের নগরায়ণ যেমন স্থায়িত্বশীল হবে না, তেমনি উন্নয়নও হবে ভঙ্গুর। ফলে মানুষের বিপন্নতা আরও বাড়বে। নীতিনির্ধারকদের জন্য বিষয়গুলো ভাবার এবং কাজে পরিণত করার চূড়ান্ত সময় এসে গেছে।
লেখক: অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তাঁর আত্মজীবনী। আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
১ ঘণ্টা আগেএকদিন ভোরবেলা জাকারবার্গ লক্ষ করলেন যে পৃথিবীতে একটা ছোট্ট দেশে তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। সামনের ফ্লোরটায় দেখলেন দেশটা ছোট বটে, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আর এই দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে দেখতে পেলেন অসংখ্য বার্তা—সবই রাজনৈতিক এবং ছবিতে এ বিষয়ে বিপুল জনগণের
২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে হত্যা ও অনেকের জীবন বি
২ ঘণ্টা আগেইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোমান্টিক কবি ছিলেন জন কিটস। কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছরের। অর্থাৎ উনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দ্বারা কিটসের কবিতা খুব একটা আলোচিত হয়নি। তবে মৃত্য
২ ঘণ্টা আগে