Ajker Patrika

শুঁটকির গ্রাম লালপুরের চ্যাপার কদর বিদেশেও

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
শুঁটকির গ্রাম লালপুরের চ্যাপার কদর বিদেশেও

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে লালপুরে মেঘনা নদীর পাড়ের মিঠাপানির চ্যাপা শুঁটকির সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। এই শুঁটকি বিষাক্ত কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় রপ্তানি করে আয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এ ছাড়া বিভিন্ন রকমের দেশীয় শুঁটকিও উৎপাদিত হয় লালপুরে। শুঁটকির চলতি মৌসুমের শুরুতেই শতাধিক মাচার (স্থানীয় ভাষায় ডাঙ্গি) মধ্যে এখন মাছ শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।

জানা যায়, ৫০ বছরের অধিক সময় আগে আশুগঞ্জের লালপুরে মেঘনা নদীর তীরে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়। প্রথম দিকে শুঁটকি ব্যবসার খুব একটা বিকাশ না ঘটলেও এখন এর বিকাশ অনেক। এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন শুঁটকি তৈরির কারিগররা। শতাধিক মাচায় শুঁটকি শুকানো, নদী থেকে মাছ ধুয়ে এনে মাচায় ছড়িয়ে দেওয়া, বড় বা ছোট শুঁটকি বেছে আলাদা করা—এসব নানা কাজে ব্যস্ত তাঁরা। লালপুরে এখন কয়েক শ পরিবার শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতে জড়িত। ফলে গ্রামটি শুঁটকিপল্লি হিসেবে দেশে বেশি পরিচিত। এই পল্লিতে ছোট-বড় মিলে শুঁটকি ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ৩০০। প্রতিবছর এই পল্লিতে উৎপাদিত দেশীয় মাছের প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের শুঁটকি বাজারজাত করা হয়।

প্রতিবছর আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত চলে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। এবারও শতাধিক মাচায় মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে কর্মসংস্থান হয়েছে সহস্রাধিক শ্রমিকের।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেঘনা, তিতাস, পাগলা নদী; সিলেটের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও নেত্রকোনাসহ হাওর অঞ্চল থেকে মাছ কিনে তৈরি করা হচ্ছে দেশীয় জাতের শুঁটকি। তবে লালপুরের পুঁটি মাছের চ্যাপা শুঁটকি অন্যতম। পুঁটি মাছ শুকিয়ে মটকার ভেতরে রেখে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তৈরি হয় এই শুঁটকি। কোনো প্রকার কেমিক্যাল ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে এই শুঁটকি তৈরি করা হয়। চ্যাপা শুঁটকি ছাড়াও পুঁটি, শৈল, গজার, বাইন, বজুরি, ট্যাংরা, বোয়ালসহ দেশীয় জাতের নানা রকমের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়।

সুমন দাস নামের এক ব্যবসায়ী জানান, সরকার যদি সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটানো যেত।

শুঁটকি ব্যবসায়ী উৎপল চন্দ্র দাস জানান, লালপুরে চ্যাপা শুঁটকির খ্যাতি দেশজুড়ে। পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকা, ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, শীতের মৌসুমেও যাতে তাপমাত্রা বজায় রেখে শুঁটকি উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য তাঁদের মাঝে উন্নতমানের ড্রাইয়ার দেওয়া হবে। শিগগির এটি বাস্তবায়িত হবে। তাঁরা যাতে সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে লোন পান সে জন্যও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত