‘হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হয়েছিল’

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২২, ০৬: ২৫
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, ১৫: ৩৯

যৌতুক না পেয়ে মারুফা আক্তারকে (২৮) পিটিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার।

মারুফা জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ। তাঁকে হত্যার অভিযোগে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে জামাতাসহ ছয়জনকে আসামি করে গত মঙ্গলবার একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মারুফার মা মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে অভিযোগটি করেন।

আদালতের বিচারক গোলাম মোক্তাদি শুনানি শেষে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এস এম আশফাকুল আলম এই আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগে আসামি করা হয় গৃহবধূর স্বামী কাজী রুহুল আমিন, তাঁর বড় ভাই শহিদুল ইসলাম, শাহজাহান আলী, ভাশুরের স্ত্রী শাবানা, বোনজামাই আব্দুল মতিন ও বোনজামাইয়ের ভাই দেলোয়ার হোসেন।

মারুফার স্বামী রুহুল আমিন কাঁঠালবাড়ি আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক।

আদালতে দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রুহুল আমিনের প্রথম স্ত্রী মারা যান। তিনি গত ১৬ মার্চ মারুফা আক্তারকে বিয়ে করেন। রুহুল আমিনও মারুফার দ্বিতীয় স্বামী। বিয়ের পর রুহুল আমিন স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে চাপ দিচ্ছিলেন। মারুফা যৌতুকের কিছু টাকা এনে দিয়েছিলেন। ২৩ জুলাই আবারও যৌতুকের জন্য ৫ লাখ টাকার চাপ দেওয়া হয়। এতে রাজি না হওয়ায় রুহুল আমিন তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন। এ ঘটনায় মারুফা মারা যায়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মারুফা গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালানো হয়। মারুফার লাশ ঘরের মেঝেতে পড়েছিল। তাঁর গলা ও দুই চোখের নিচে কালো দাগ ছিল।

মারুফার মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে যৌতুকের টাকার জন্য হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালানো হয়েছিল। থানায় হত্যা মামলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা করেছি।’ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল।’

রুহুল আমিন বাড়িতে থাকছেন না। আবার ফোনও ধরছেন না। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে রুহুল আমিনের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেউ মারুফাকে হত্যা করিনি।’

আক্কেলপুর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মারুফার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় মারুফার মা বাদী হয়ে জামাতা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন। পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত আদালত থেকে কোনো আদেশ পুলিশ হাতে পায়নি। যদি আদালত কোনো আদেশ দেন, তাহলে সেটি গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার দিন বাদীর লোকজনের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, বাদীর লোকজনের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত