গুম হওয়া মানুষের খোঁজে ‘আয়নাঘরের’ সামনে স্বজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১০: ৩২
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১১: ১৬

গুমের শিকার রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের স্বজনেরা গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছেন ‘আয়নাঘর’-এর সামনে। একটি সংস্থার সদর দপ্তরের একটি ঘর আয়নাঘর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মানুষকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। 

সূত্র বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর গত সোমবার মধ্যরাতে আয়নাঘরে আটক দুজনকে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরা পরিবারের কাছে ফিরেছেন। তাঁদের একজন সেখানে আরও মানুষ আটক থাকার কথা জানিয়েছেন। 

গতকাল সকালে রাজধানীর কচুক্ষেতে ‘মায়ের ডাকের’ ব্যানারে গুম হওয়া অন্তত ২৩ জনের অর্ধশত স্বজন মানববন্ধন করেন। গুমের শিকার স্বজনের ছবি তাঁদের হাতে ছিল। তাঁরা সেখানে প্রবেশ করে স্বজনদের দেখতে চান। তবে তাঁদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। 

এ সময় মায়ের ডাকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কার্যালয়ের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস, বিশিষ্ট ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম এবং নারী অধিকার নেত্রী শিরিন হক উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁরা ভেতরে গিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী সংস্থাটি তাঁদের জানিয়েছে, সেখানে আর কেউ আটক নেই। নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায় আছেন, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে বুধবার (আজ) জানানো হবে। 

পরে সানজিদা ইসলাম তুলি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা জানতে চেয়েছি, আর কে কে ভেতরে আছে? তবে তারা জানিয়েছে, কেউ নেই। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, সেখানে এখনো অনেক মানুষ আটক আছে। আমরা এরপর ভেতরে গিয়ে দেখতে চাইলে তারা অনুমতি দেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘বুধবার (আজ) এ বিষয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। না জানালে আমরা ফের সেখানে যাব। কারণ, আমরা জানতে পেরেছি, অনেক আটক ব্যক্তি এখনো সেখানে রয়েছেন। গুম হওয়া সব মানুষের হিসাব নেওয়া হবে।’ 

সানজিদার ভাই বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। 
সোমবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রয়াত গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ আরমান বিন কাসেমকে দিয়াবাড়িতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরা দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। খবর পেয়ে পরিবার তাঁদের উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়। জানা যায়, সোমবার রাতে ২০-২৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা কচুক্ষেতে অবস্থান নিয়ে আটক সবার মুক্তি দাবি করেন। পরে ওই রাতেই তাঁদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

আরমানকে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্ত আরমান জানান, আয়নাঘরে তাঁদের সঙ্গে আরও অনেকে ছিলেন। 

গুম হওয়া মানুষের স্বজনেরা গতকাল আয়নাঘরের সামনে মানববন্ধনও করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের একজন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির নিখোঁজ সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে হরিশ্চর থেকে সাইফুলকে র‍্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। 

শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘সাইফুল সেখানে নেই, তা বলেনি সংস্থাটি। আবার আছে, তা-ও বলেনি। তারা বুধবার আমাদের বিস্তারিত জানাবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আমি বিশ্বাস করি এবং যে দুজন ফিরে এসেছেন তাঁদের কাছেও শুনেছি, আয়নাঘরে অনেক লোক আছেন, তাঁদের মধ্যে আমার স্বামীও রয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত