পটপরিবর্তনটা শুরু করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ছেলে আবুল হাসান চৌধুরী। ১৯৯১ সালে তাঁর হাত ধরেই আওয়ামী লীগ এবং উন্নয়ন একসঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায়। জাতীয় নির্বাচনে এ দুই উপজেলার কেতাবি নাম টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসন। ২০০১ সালে রাজনীতির মারপ্যাঁচে আবুল হাসান চৌধুরী দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হলেও আব্দুর রাজ্জাক এসে সেই ধারা বজায় রাখেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ তাই উন্নয়নকেই প্রধান পুঁজি করেছে। আর বিএনপির ভরসা সরকারবিরোধী ক্ষুব্ধ ভোটার।

আসনটি আওয়ামী লীগের নির্ভার ঠিকানা। তবে আগামী নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে দলটিকে মাত্রাতিরিক্ত কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। নির্বাচনে আসার অনিশ্চয়তার মাঝেই বিএনপি এই আসনে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করায় মনোনিবেশ করছে। ইতিমধ্যে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার সব পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছে দলটি। সংগঠনটি নিজস্ব ভোটব্যাংকের সঙ্গে ক্ষুব্ধ মানুষদের ভোট যুক্ত করে আসন পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে। শোনা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বর্তমান এমপি বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তবে এই আসনে তিনি একাই মনোনয়ন চাইবেন এমনটিও নয়। মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ-বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার তারেকুল ইসলাম তারেক, কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রেজাউল করিম হিরণ মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। ডাকসুর সাবেক সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আনোয়ারুল হক, দুই নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন মধুপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সার্জেন্ট (অব.) মোহাম্মদ আলী।

২০০১ সাল থেকে টানা চারবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের দখলে আছে আসনটি। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সুযোগটা কাজেও লাগিয়েছেন এই নেতা। এরই মধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে গত ১৩ জানুয়ারি মধুপুর পৌরসভার তিনবারের সাবেক মেয়র এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সরকার শহিদুল ইসলাম ওরফে সরকার শহিদ মারা যাওয়ায় তাঁর গ্রুপ অনেকটাই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ফকির মাহবুব আনাম স্বপন দলকে একত্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে গ্রামীণ জনপদে কাজ শুরু করছেন। তিনি এবং সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা কমিটি, পৌর কমিটি, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ গ্রাম কমিটি গঠিত হয়েছে। খন্দকার আনোয়ারুল হক ইতিমধ্যে মধুপুর ও ধনবাড়ীর উন্নয়নের ১০ দফা প্রস্তাব নিয়ে জনগণের দ্বারে যেতে শুরু করেছেন।

এ ছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ ছোট ছোট দলের টাঙ্গাইল-১ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মধুপুর ও ধনবাড়ী এলাকার মানুষের ধারণা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে এক রকম, না পেলে ছরোয়ার আলম খান আবুকে ম্যানেজ করে জনসংযোগে নামাতে কৃষিমন্ত্রীকে চরমভাবে কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে।