অরক্ষিত রামসার সাইট

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২২, ১১: ০৩

দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট (আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি) টাঙ্গুয়ার হাওর। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত এই হাওরটি সংরক্ষিত এলাকা। তারপরও নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে হাওরের পরিবেশ। একদিকে পর্যটকেরা অবাধে চলাফেরা করছেন, অন্যদিকে দুষ্কৃতকারীরা কেটে নিয়ে যাচ্ছে হাওরের হিজল ও করচগাছ। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত এই জলাভূমির প্রাণবৈচিত্র্য। টাঙ্গুয়ার হাওর তদারকির জন্য চারটি ক্যাম্পে ২৪ জন আনসার সদস্য ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকার পরও এই তদারকি কোনো কাজেই আসছে না।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে  দেখা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরের মূল জায়গাটিই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এই হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা হিজল-করচগাছে বেঁধে রাখতে দেখা গেছে সেখানে। এতে নষ্ট হচ্ছে গাছগুলোর স্থায়িত্ব। শুধু নৌকা বেঁধে রাখা হয়েছে তা-ই নয়, পর্যটকদের গাছে উঠে খেলা করতেও দেখা গেছে। যেন দেখার কেউ নেই। এভাবে গাছে ওঠার বিষয়ে জানতে চাইলে পর্যটকেরা জানান, তাঁদের গাছে উঠতে কেউ বাধা দেয়নি।

টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশেই রয়েছে গোলাবাড়ি আনসার ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে পাওয়া গেল ক্যাম্প ইনচার্জ সহকারী প্লাটুন কমান্ডার মানিক মিয়াকে। হাওরের ভেতরে কীভাবে এত বড় বড় নৌকা প্রবেশ করছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই তদারকি করছি। গাছের সঙ্গে নৌকা বেঁধে রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। আমরা সব সময়ই ডিউটিতে থাকি। এখন দুপুরের খাবারের সময়, তাই হয়তো নৌকাগুলো বেঁধে রেখেছে।’

তবে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা জানালেন, তাঁরা হাওরের নিয়মকানুন জানেন না। সিলেট থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক খালেদ আহমদ বলেন, ‘সকাল থাইকা আমরা হাওরে নৌকা লইয়া ঘুরতাছি। গাছো উঠছি কিন্তু আমরারে তো কেউ কোনো বাধা দিল না ভাই।’

নোয়াখালী থেকে আসা পর্যটক ইমরান খান বলেন, ‘আমরা ১৬ জন এসেছি একটা নৌকা নিয়ে। তবে হাওরে ঘুরতে যে এত নিয়ম আছে, সেটা আমাদের জানা ছিল না। এখানে তো কেউ নাই যে আমাদের এ বিষয়ে জানাবে।’

১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় জীববৈচিত্র্যের আধার ও মাদার ফিশারিজখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরকে। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বের ১ হাজার ৩১টি রামসার সাইটের মধ্যে এ হাওরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়। হাওরবাসীর আর্থসামাজিক পরিবর্তন, সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর থেকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এই হাওর। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে হাওরটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সুনামগঞ্জে পর্যটকসমৃদ্ধ হোক, সেটা আমরাও চাই। তবে হাওরের পরিবেশ নষ্ট হবে এমন পর্যটনকেন্দ্র আমরা চাই না।’

হাওর রক্ষা নিয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ রক্ষায় আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। যেসব নৌযান পর্যটক বহন করছে, তাদের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নৌযানগুলো যেন সেসব নির্দেশনা অমান্য না করে, সেজন্য আমরা সার্বক্ষণিক তদারকিতে রেখেছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত