Ajker Patrika

ভোগান্তির অপর নাম নির্বাচন কার্যালয়

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩: ২৬
ভোগান্তির অপর নাম নির্বাচন কার্যালয়

হবিগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সেবাগ্রহীতারা। দালাল আর ঘুষ ছাড়া ওই দুই অফিসে সেবা মেলে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অফিস দুটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার যোগসাজশেই এসব হচ্ছে বলে ধারণা তাঁদের। সেবার ধরনভেদে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় বলে দাবি সেবাগ্রহীতাদের। 

নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও ১৫ নভেম্বর জান্নাত জাহান সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। 

নতুন ভোটার হতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, যাবতীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনার পরেও তাঁদের নিবন্ধন করা হয়নি।
সদর উপজেলার মশাজান গ্রামের জুবায়ের জানান, তাঁর ভাই কয়েক দিন নির্বাচন অফিসে ঘোরাঘুরি করেও নিবন্ধন করতে পারেননি। দুবাই যাওয়ার জন্য তাঁর জরুরি পাসপোর্ট করা দরকার। পরে এক দালালকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভোটার নিবন্ধন করতে পেরেছেন। এর আগে পর্যাপ্ত কাগজপত্রের সংকটের কথা বলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজ না করেই বিদায় করেন। দালালের মাধ্যমে গেলে আগের কাগজপত্র জমা দিয়েই যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

লন্ডনপ্রবাসী সহিদা আক্তার চৌধুরীর বাড়ি বানিয়াচং উপজেলায়। তাঁর জন্মনিবন্ধন বানিয়াচংয়ে করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে আসেন। হবিগঞ্জ শহরে তাঁর বাসা। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য তিনি হবিগঞ্জের ঠিকানায় যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করেন। জন্মনিবন্ধন বানিয়াচংয়ে হওয়ায় তাঁকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় নিবন্ধন করাতে রাজি হননি জান্নাত জাহান। বিষয়টি জানাতে সহিদা খাতুন তাঁর মামাতো ভাই সালেহ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে একই ভবনের তিনতলায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইদুর রহমানের কাছে যান।

সাইদুর রহমানও বানিয়াচংয়ে আবেদন করতে বলেন। আবেদনকারীর জন্মনিবন্ধন ছাড়া প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি দেওয়া সত্ত্বেও কেন হবিগঞ্জ সদরে হবে না—জানতে চাইলে সাইদুর রহমান খেপে যান। একপর্যায়ে সালেহকে ‘দালাল’ আখ্যায়িত করে তাঁকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন সাইদুর। 

সালেহ আহমদ বলেন, ‘ছোট বোনের সামনে আমাকে অপমানই করেননি, নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার পরিচয় দেন এই কর্মকর্তা। এনআইডি করে দেবে বলে জেলা নির্বাচন অফিসের এক দালাল ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিল।’ 

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রবাসী হলেই উপজেলা ও জেলা অফিসের এই দুই কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য নানা ধরনের ফন্দি করেন। উপায়ান্তর না পেয়ে প্রবাসীরা দালালের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে বাধ্য হন। 

বাহুবল উপজেলার বাসিন্দা গোলাম রব্বানীর অভিযোগ, তাঁর ছোট ভাই একটি হত্যা মামলায় ১৪ বছর পর জেল খেটে বের হন। জেলে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন হয়। পরিচয়পত্রে নামের একাংশ বাদ পড়ায় সংশোধন করার জন্য আবেদন করলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দুই মাস ঘুরিয়ে জেলা কর্মকর্তার কাছে পাঠান। সংশোধনের জন্য সব ধরনের প্রমাণপত্র দেওয়া সত্ত্বেও গত ৮ মাসেও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা নেননি। 

নির্বাচন অফিসের একটি সূত্র জানায়, সাইদুর রহমান ও জান্নাত জাহান প্রতিদিন কোনো না কোনো কর্মচারী বা সেবাগ্রহীতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। 

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল দিলে ওই দুই কর্মকর্তা তা ধরেননি। গত বুধবার জান্নাত জাহানের অফিসে গিয়ে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেবা নিতে হলে অফিসে আসতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। এই অফিস দালালমুক্ত। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি যোগদানের পর জেলা ও উপজেলা অফিসে কয়েকজন কর্মচারীকে সরিয়েছি। তাঁদের সঙ্গে দালালদের সম্পর্ক ছিল। আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে, বরং সেবাগ্রহীতারাই দালাল নিয়ে আসে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত