Ajker Patrika

তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা ২ জনের গায়ে টোকা নেই

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫০
তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা ২ জনের গায়ে টোকা নেই

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা সাদেক হোসেন ওরফে সাদ্দাম ভোররাতে ‘ডাকাত’ ‘ডাকাত’ চিৎকার শুরু করেন। আশপাশের তিন পরিবারের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এগিয়ে গিয়ে সাদেককে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। সাদেক বলেন, ডাকাতেরা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। দরজা খোলা যাবে না। এরপর প্রতিবেশীরা সবাই যার যার ঘরে চলে যান। সাদেক তখন ঘরের দরজা খুলে ঘরের মেঝেতে শুয়ে কান্নাকাটি করেন। আর তাঁর স্ত্রী আইনুর নাহার বের হয়ে প্রতিবেশী জাকারিয়ার ঘরে চলে যান। এবার প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে দেখেন ঘরে তিনজনের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে।

এই বর্ণনা প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া জাকারিয়ার। সাদেকের বাবা স্থানীয় নতুন বাজারের মুদি ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা সওদাগর (৬০), মা জোসনা আক্তার (৫৫) ও ভাই আহমদ হোসেন (২৫) খুন হয়েছেন বৃহস্পতিবার ভোররাতে। কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। তবে সাদেক ও তাঁর স্ত্রী আইনুর নাহার সম্পূর্ণ অক্ষত আছেন।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পরিবারের বড় ছেলে সাদেক ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছেলে সাদেক হোসেন খুনের ঘটনায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

প্রতিবেশী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে নুরুল মোস্তফার সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে সাদেক ও ছোট ছেলে আলতাফ হোসেনের বিরোধ চলছিল। এই দুই ছেলে বিবাহিত এবং পরিবারের কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। মেজ ছেলে আহমদ হোসেন অবিবাহিত, তিনি বাবার সঙ্গে মুদিদোকান দেখেন।

স্থানীয় জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর মধ্যম সোনাপাহাড় ওয়ার্ডের সদস্য মনির আহম্মদ ভাসানী জানান, সম্পত্তি নিয়ে মোস্তফার সঙ্গে বড় ছেলে সাদ্দাম ও ছোট ছেলে আলতাফ হোসেনের বনিবনা ছিল না।

মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাসেম ভূঁইয়া বলেন, নিহত আহমদ হোসেনের বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়েছে। শুক্রবার (আজ) ফর্দ অনুষ্ঠান আয়োজনের দিনক্ষণ ঠিক ছিল। এর আগে বুধবার বিকেলের দিকে তাঁর বাবা নুরুল মোস্তফা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হন, পরিবারের অন্য ছেলেদের থেকে মেজ ছেলের বিয়েতে কিছু টাকাপয়সা নিয়ে দিতে। এ নিয়েই হয়তো বুধবার রাতে পরিবারের মধ্যে ঝগড়া ও সেই ঝগড়া থেকেই খুনের ঘটনার সূত্রপাত।

নুরুল মোস্তফার ছোট ছেলে আলতাফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেজ ভাইয়ের আগে আমি বিয়ে করায় বাবা আমাকে তিন বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আমি বারইয়ারহাট মাছের আড়তে থাকি। ভোরে বড় ভাই সাদেক আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, বাড়িতে ডাকাত এসেছিল। বাবা, মা ও মেজ ভাইকে জবাই করে ফেলেছে। তুই তাড়াতাড়ি আয়, তাদের হাসপাতালে নিতে হবে। আমি বাড়িতে এসে দেখি বাবা, মা আর মেজ ভাইয়ের রক্তাক্ত নিথর দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানা-পুলিশ, এরপর পিআইবি ও চট্টগ্রাম সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের ডিএনএ ও হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।

চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মোহাম্মদ লাবিব আব্দুল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়ির ভেতর ডাকাতির কোনো আলামত পাইনি। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র গোছানো ছিল। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি পারিবারিক বিরোধ, বিশেষ করে সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে নির্মম এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।’ সাদেক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী আইনুনকে আটক করা প্রসঙ্গে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু ঘরের ভেতরে সাদেক হোসেন ও তাঁর স্ত্রীকে অক্ষত পাওয়া গেছে, সেহেতু আমরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নিয়েছি। থানায় নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

পাগল বেশে রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সম্পর্কে যা জানা গেল

হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

প্রধান উপদেষ্টার নতুন বিশেষ সহকারী কে এই আনিসুজ্জামান চৌধুরী

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের ফলকার তুর্কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত