তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
মূল ভবনের নবম তলায় উঠে পাশের ভবনে যেতে হয়। সেই ভবন থেকে স্টিলের সেতু পেরিয়ে যেতে হয় রাস্তার অপর পাশের আরেকটি ভবনে। সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের এভাবেই এক ভবন থেকে অন্য ভবনে ছোটাছুটির এই দৃশ্য প্রতিদিন চোখে পড়ে রাজধানীর অন্যতম নামীদামি বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ারে।
শুধু এই হাসপাতালই নয়, ল্যাবএইড, আনোয়ার খান মডার্ন, বিআরবি, শমরিতা, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড, গ্রিন লাইফ, পপুলার, সেন্ট্রাল, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ আই হাসপাতালসহ ঢাকার ১১টি নামীদামি হাসপাতালে কার্যক্রম চলছে পাশাপাশি একাধিক ভবনকে যুক্ত করে।
অভিযোগ উঠেছে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের (বিএনবিসি) তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো হাসপাতাল সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। একটি ভবনে হাসপাতালের অনুমোদন নিয়ে একের পর এক ভবন যুক্ত করা হচ্ছে তার সঙ্গে। কখনো স্টিল স্ট্রাকচারের সেতু আবার কখনো আরসিসি ঢালাই দিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে ভবন। বিপজ্জনক এসব সংযোগের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়া হচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের। এসব কারণে হাসপাতালগুলোকে এরই মধ্যে নোটিশও দিয়েছে রাজউক। গত ৩০ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালকে।
এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) মাশফিকুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নিয়মনীতির বাইরে কিছু করি না। ইউনিয়ন কোম্পানির ভবনের সঙ্গে যে সংযোগ রয়েছে, তা অনুমোদনের বিষয়ে তারাই কাজ করছে।’
নগরবিদ ও অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্ত করা এসব ভবনে ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে রোগীদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেবে।
নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব এ বিষয়ে বলেন, ‘একটি ভবনকে যখন হাসপাতালের প্রয়োজনে কাজে লাগানো হবে, তখন অবশ্যই বিল্ডিং কোড অনুসরণ করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে ভবনগুলো সেতু বানিয়ে যুক্ত করেছে, সেগুলোর ব্যবহারে যে পরিবর্তন এসেছে, তারও অনুমোদন নিতে হবে। সম্প্রসারিত এসব ভবনে ওপিডি, ওটি, সিসিও, আইসিও, কেবিন ও ওয়ার্ড করা হচ্ছে। ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে রোগীদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেবে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় পপুলার হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে মোট ছয়টি ভবন ঘিরে। এর মধ্যে পাঁচটি ভবন পাশাপাশি। তিনটি ভবনের মধ্যে রয়েছে আন্তসংযোগ। ১ ও ২ নম্বর ভবনকে তৃতীয় তলায় স্টিলের সেতু বসিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। সাড়ে তিন থেকে চার ফুট চওড়া এ সংযোগ পথ দিয়ে একসঙ্গে দুজন চলাফেরাও কঠিন। এসব কারণে চলতি বছরের ২৫ জুন পপুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রাজউক।
জানতে চাইলে পপুলার হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা অচিন্ত কুমার নাগ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের ভবনে এমন সংযোগ রয়েছে। তবে রাজউক থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না বা অনুমোদনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না তা বলতে পারছি না।’
ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডের ১ ও ২ নম্বর প্লটে চলছে ল্যাবএইড হাসপাতালের কার্যক্রম। এ হাসপাতালের উল্টো দিকে কনকর্ড কনসোর্টিয়াম নামের ভবনটিতেও কার্যক্রম চালাচ্ছে হাসপাতালটি। ওই ভবনে যাওয়ার জন্য রাস্তার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সংযোগ সেতু। এসব কারণে রাজউক ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি চিঠিও দিয়েছে ল্যাবএইডকে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীমের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে একজন ফোন ধরেন। এরপর বিস্তারিত শুনে এ বিষয়ে ডা. এ এম শামীমের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ফোন করে আরিফ নামের একজন বলেন, ‘স্যার এখন ব্যস্ত, পরে আপনাকে ফোন করবেন।’
বেশ কয়েক বছর আগে ৭৮ সাতমসজিদ রোড ঠিকানায় যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আই হাসপাতাল। এখন পাশের একটি বড় ভবনকেও হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো ভবনের ৮ তলার সঙ্গে বড় আকারের স্টিলের সেতু দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে নতুন ভবনটিকে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এই হাসপাতালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে রাজউক। তখন মুচলেকা দিয়ে পার পায় কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ আই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম হায়দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার জানামতে, অনুমোদন আছে। এরপরও কোনো জটিলতা থাকলে ভবনমালিক তা জানেন। আমরা ভবনটি ভাড়া নিয়েছি।’
এদিকে রাজধানীর গ্রিন রোডের বিআরবি হাসপাতালের তিনতলায় গিয়ে দেখা যায় একই ধরনের সংযোগ। ১২ ফুট চওড়া ৩০ ফুট লম্বা একটি স্টিল স্ট্রাকচারের সেতু বসিয়ে যুক্ত করা হয়েছে পাশাপাশি দুটি ভবনকে। বিআরবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশোধিত নকশা পাসের আবেদন করলে এ ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে তা নাকচ করে দিয়েছে রাজউক।
এ বিষয়ে বিআরবি হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত জানা নেই বলে এড়িয়ে যান।
পান্থপথের শমরিতা হাতপাতালেরও একই অবস্থা। এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেছনের একটি ভবনের সঙ্গে মূল ভবনকে যুক্ত করেছে তিনতলা ও ছয়তলায় দুটি সেতুর মাধ্যমে। এ নিয়ে কথা বলতে শমরিতা হাসপাতালের পরিচালক ডা. হারুন উর রশীদের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডের ইবনে সিনা হাসপাতালেও রয়েছে পাশের ভবনের তিনটি সংযোগ। নিচতলার পুরো দেয়াল কেটে সংযোগ বসানোর পর তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় আরসিসি ব্রিজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিল্ডিং কোড মেনে কার্যক্রম চালাচ্ছি। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’
গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে দক্ষিণ অংশের মূল ভবনের সঙ্গে উত্তরের আরেকটি ভবনের সংযোগ ঘটেছে তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় আরসিসি সেতু বসিয়ে। এ নিয়ে কথা বলতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের দাপ্তরিক নম্বরে ফোন করলে পরিচয় শুনে এক ব্যক্তি বলেন, ‘কাউকে কথা বলার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না।’
সেতু সংযোগের ঘটনা ঘটেছে গ্রিন লাইফ হাসপাতালেও। সেখানে তৃতীয় তলায় স্টিলের সংযোগ সেতু বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মাইনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এসব বিষয় নিয়ে রাজউকে আবেদন করেছি। এখনো কোনো উত্তর আসেনি।’
মিরপুর রোডের আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও মূল ভবনের সঙ্গে অন্য আরেকটি ভবনের সংযোগ দিয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রাজউক। জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক নিয়াজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ বলা হয়েছে, ইমারত নির্মাণ যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইমারত ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ আবাসিক বাড়ির জন্য ইমারত নির্মাণের অনুমতি নিলে ওই ভবনকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ইমারতের মেঝের যেকোনো অবস্থান থেকে অনধিক ২৫ মিটারের মধ্যে জরুরি নির্গমন পথ থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয়সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু একের পর এক ভবন সংযুক্ত করে কার্যক্রম চালানো এসব হাসপাতালে মানা হচ্ছে না এই বিধিমালা।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রি জে আলী আহমেদ খান (অব) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়াই ভবন যুক্ত করা হচ্ছে; বিষয়টি খুব জটিল। হাসপাতাল করতে হলে সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্স থাকতে হবে। যেখানে ভবনে সংযোগ দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, সেখানে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে রোগী বের করবে কীভাবে? আইসিইউ বা অপারেশন রুমে থাকা রোগী এসব সংযোগ দিয়ে বের করতে পারবে না।’
যেসব হাসপাতাল নিজেরা ইচ্ছামাফিক ভবন যুক্ত করছে, তারা পুরো হাসপাতাল ব্যবহারেই অনুমোদিত নকশা মানছে না। সিঁড়ি, লবি ব্যবহার করছে অন্য কাজে। এ কারণে এখন পর্যন্ত যাঁরা নকশা সংশোধনের আবেদন করেছেন, রাজউক তাঁদের সংশোধিত নকশায় অনুমোদন দিতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা নিজ দপ্তরে বলেন, ‘আসলে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মাঠপর্যায়ের লোকজন কাজ করেন। তাঁরা টেকনিক্যাল বিষয়টা ভালো বলতে পারবেন।’
পরে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে রাজউক থেকে এখনো কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কারণ, হাসপাতালগুলো যেসব রাস্তার ওপর দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করছে, সে রাস্তার মালিক সিটি করপোরেশন। আবার সংযোগ ব্রিজের অংশটুকু কোন প্লটের সঙ্গে যুক্ত হবে, তাও বিবেচনার বিষয়। এসব স্ট্রাকচারাল ভেটিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত করতে হবে। এ ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রে ভবন নির্মাণের সময়ই প্রকৌশলগত দিক নিশ্চিত করতে হবে। পুরোনো ভবনগুলোতে এভাবে ব্রিজ করে সংযোগ দেওয়া নানা দিক দিয়ে হাসপাতালগুলোর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। রাজউক এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিবে।’
নামীদামি হাসপাতালগুলোর এভাবে কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে কথা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে সম্প্রসারণ করেছে বলে শুনেছি; কিন্তু ফাইল না দেখে বিস্তারিত বলতে পারছি না।’
মূল ভবনের নবম তলায় উঠে পাশের ভবনে যেতে হয়। সেই ভবন থেকে স্টিলের সেতু পেরিয়ে যেতে হয় রাস্তার অপর পাশের আরেকটি ভবনে। সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের এভাবেই এক ভবন থেকে অন্য ভবনে ছোটাছুটির এই দৃশ্য প্রতিদিন চোখে পড়ে রাজধানীর অন্যতম নামীদামি বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ারে।
শুধু এই হাসপাতালই নয়, ল্যাবএইড, আনোয়ার খান মডার্ন, বিআরবি, শমরিতা, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড, গ্রিন লাইফ, পপুলার, সেন্ট্রাল, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ আই হাসপাতালসহ ঢাকার ১১টি নামীদামি হাসপাতালে কার্যক্রম চলছে পাশাপাশি একাধিক ভবনকে যুক্ত করে।
অভিযোগ উঠেছে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের (বিএনবিসি) তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো হাসপাতাল সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। একটি ভবনে হাসপাতালের অনুমোদন নিয়ে একের পর এক ভবন যুক্ত করা হচ্ছে তার সঙ্গে। কখনো স্টিল স্ট্রাকচারের সেতু আবার কখনো আরসিসি ঢালাই দিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে ভবন। বিপজ্জনক এসব সংযোগের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়া হচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের। এসব কারণে হাসপাতালগুলোকে এরই মধ্যে নোটিশও দিয়েছে রাজউক। গত ৩০ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালকে।
এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) মাশফিকুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নিয়মনীতির বাইরে কিছু করি না। ইউনিয়ন কোম্পানির ভবনের সঙ্গে যে সংযোগ রয়েছে, তা অনুমোদনের বিষয়ে তারাই কাজ করছে।’
নগরবিদ ও অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্ত করা এসব ভবনে ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে রোগীদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেবে।
নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব এ বিষয়ে বলেন, ‘একটি ভবনকে যখন হাসপাতালের প্রয়োজনে কাজে লাগানো হবে, তখন অবশ্যই বিল্ডিং কোড অনুসরণ করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে ভবনগুলো সেতু বানিয়ে যুক্ত করেছে, সেগুলোর ব্যবহারে যে পরিবর্তন এসেছে, তারও অনুমোদন নিতে হবে। সম্প্রসারিত এসব ভবনে ওপিডি, ওটি, সিসিও, আইসিও, কেবিন ও ওয়ার্ড করা হচ্ছে। ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে রোগীদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেবে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় পপুলার হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে মোট ছয়টি ভবন ঘিরে। এর মধ্যে পাঁচটি ভবন পাশাপাশি। তিনটি ভবনের মধ্যে রয়েছে আন্তসংযোগ। ১ ও ২ নম্বর ভবনকে তৃতীয় তলায় স্টিলের সেতু বসিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। সাড়ে তিন থেকে চার ফুট চওড়া এ সংযোগ পথ দিয়ে একসঙ্গে দুজন চলাফেরাও কঠিন। এসব কারণে চলতি বছরের ২৫ জুন পপুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রাজউক।
জানতে চাইলে পপুলার হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা অচিন্ত কুমার নাগ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের ভবনে এমন সংযোগ রয়েছে। তবে রাজউক থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না বা অনুমোদনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না তা বলতে পারছি না।’
ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডের ১ ও ২ নম্বর প্লটে চলছে ল্যাবএইড হাসপাতালের কার্যক্রম। এ হাসপাতালের উল্টো দিকে কনকর্ড কনসোর্টিয়াম নামের ভবনটিতেও কার্যক্রম চালাচ্ছে হাসপাতালটি। ওই ভবনে যাওয়ার জন্য রাস্তার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সংযোগ সেতু। এসব কারণে রাজউক ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি চিঠিও দিয়েছে ল্যাবএইডকে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীমের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে একজন ফোন ধরেন। এরপর বিস্তারিত শুনে এ বিষয়ে ডা. এ এম শামীমের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ফোন করে আরিফ নামের একজন বলেন, ‘স্যার এখন ব্যস্ত, পরে আপনাকে ফোন করবেন।’
বেশ কয়েক বছর আগে ৭৮ সাতমসজিদ রোড ঠিকানায় যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আই হাসপাতাল। এখন পাশের একটি বড় ভবনকেও হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো ভবনের ৮ তলার সঙ্গে বড় আকারের স্টিলের সেতু দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে নতুন ভবনটিকে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এই হাসপাতালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে রাজউক। তখন মুচলেকা দিয়ে পার পায় কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ আই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম হায়দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার জানামতে, অনুমোদন আছে। এরপরও কোনো জটিলতা থাকলে ভবনমালিক তা জানেন। আমরা ভবনটি ভাড়া নিয়েছি।’
এদিকে রাজধানীর গ্রিন রোডের বিআরবি হাসপাতালের তিনতলায় গিয়ে দেখা যায় একই ধরনের সংযোগ। ১২ ফুট চওড়া ৩০ ফুট লম্বা একটি স্টিল স্ট্রাকচারের সেতু বসিয়ে যুক্ত করা হয়েছে পাশাপাশি দুটি ভবনকে। বিআরবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশোধিত নকশা পাসের আবেদন করলে এ ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে তা নাকচ করে দিয়েছে রাজউক।
এ বিষয়ে বিআরবি হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত জানা নেই বলে এড়িয়ে যান।
পান্থপথের শমরিতা হাতপাতালেরও একই অবস্থা। এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেছনের একটি ভবনের সঙ্গে মূল ভবনকে যুক্ত করেছে তিনতলা ও ছয়তলায় দুটি সেতুর মাধ্যমে। এ নিয়ে কথা বলতে শমরিতা হাসপাতালের পরিচালক ডা. হারুন উর রশীদের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডের ইবনে সিনা হাসপাতালেও রয়েছে পাশের ভবনের তিনটি সংযোগ। নিচতলার পুরো দেয়াল কেটে সংযোগ বসানোর পর তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় আরসিসি ব্রিজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিল্ডিং কোড মেনে কার্যক্রম চালাচ্ছি। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’
গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে দক্ষিণ অংশের মূল ভবনের সঙ্গে উত্তরের আরেকটি ভবনের সংযোগ ঘটেছে তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় আরসিসি সেতু বসিয়ে। এ নিয়ে কথা বলতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের দাপ্তরিক নম্বরে ফোন করলে পরিচয় শুনে এক ব্যক্তি বলেন, ‘কাউকে কথা বলার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না।’
সেতু সংযোগের ঘটনা ঘটেছে গ্রিন লাইফ হাসপাতালেও। সেখানে তৃতীয় তলায় স্টিলের সংযোগ সেতু বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মাইনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এসব বিষয় নিয়ে রাজউকে আবেদন করেছি। এখনো কোনো উত্তর আসেনি।’
মিরপুর রোডের আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও মূল ভবনের সঙ্গে অন্য আরেকটি ভবনের সংযোগ দিয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রাজউক। জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক নিয়াজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ বলা হয়েছে, ইমারত নির্মাণ যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইমারত ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ আবাসিক বাড়ির জন্য ইমারত নির্মাণের অনুমতি নিলে ওই ভবনকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ইমারতের মেঝের যেকোনো অবস্থান থেকে অনধিক ২৫ মিটারের মধ্যে জরুরি নির্গমন পথ থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয়সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু একের পর এক ভবন সংযুক্ত করে কার্যক্রম চালানো এসব হাসপাতালে মানা হচ্ছে না এই বিধিমালা।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রি জে আলী আহমেদ খান (অব) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়াই ভবন যুক্ত করা হচ্ছে; বিষয়টি খুব জটিল। হাসপাতাল করতে হলে সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্স থাকতে হবে। যেখানে ভবনে সংযোগ দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, সেখানে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে রোগী বের করবে কীভাবে? আইসিইউ বা অপারেশন রুমে থাকা রোগী এসব সংযোগ দিয়ে বের করতে পারবে না।’
যেসব হাসপাতাল নিজেরা ইচ্ছামাফিক ভবন যুক্ত করছে, তারা পুরো হাসপাতাল ব্যবহারেই অনুমোদিত নকশা মানছে না। সিঁড়ি, লবি ব্যবহার করছে অন্য কাজে। এ কারণে এখন পর্যন্ত যাঁরা নকশা সংশোধনের আবেদন করেছেন, রাজউক তাঁদের সংশোধিত নকশায় অনুমোদন দিতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা নিজ দপ্তরে বলেন, ‘আসলে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মাঠপর্যায়ের লোকজন কাজ করেন। তাঁরা টেকনিক্যাল বিষয়টা ভালো বলতে পারবেন।’
পরে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে রাজউক থেকে এখনো কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কারণ, হাসপাতালগুলো যেসব রাস্তার ওপর দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করছে, সে রাস্তার মালিক সিটি করপোরেশন। আবার সংযোগ ব্রিজের অংশটুকু কোন প্লটের সঙ্গে যুক্ত হবে, তাও বিবেচনার বিষয়। এসব স্ট্রাকচারাল ভেটিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত করতে হবে। এ ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রে ভবন নির্মাণের সময়ই প্রকৌশলগত দিক নিশ্চিত করতে হবে। পুরোনো ভবনগুলোতে এভাবে ব্রিজ করে সংযোগ দেওয়া নানা দিক দিয়ে হাসপাতালগুলোর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। রাজউক এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিবে।’
নামীদামি হাসপাতালগুলোর এভাবে কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে কথা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে সম্প্রসারণ করেছে বলে শুনেছি; কিন্তু ফাইল না দেখে বিস্তারিত বলতে পারছি না।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে