Ajker Patrika

সেই অস্ত্রধারীরা অধরা

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৪৭
সেই অস্ত্রধারীরা অধরা

পরিচয় শনাক্তের পরও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের সেই অস্ত্রধারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে ঘিরে গত সোমবার প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন ওই অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনার পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের গ্রেপ্তার হননি। এতে ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আরও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর থাকার দাবি করেছে পুলিশ। ওই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে অস্ত্রসহ একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। তবে জসিম উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তিকে নির্বাচনের দিন অস্ত্র হাতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) শিবলী নোমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করেছি। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। জসিম উদ্দিন নামের একজনকে একটি এলজিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে শিবলী নোমান বলেন, ‘অস্ত্রধারীরা কার অনুসারী তা আমরা নিশ্চিত নই। যাঁদের অস্ত্রসহ ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করেছি। তাঁরা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘গণমাধ্যমে আজ (গতকাল) অস্ত্রধারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। আমরাও তাঁদের বিষয়ে এ ধরনের তথ্যই পেয়েছি।’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত নাম-পরিচয়গুলোর সত্যতা সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন বলেও জানান।

সপ্তম ধাপে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ১৬টি ইউপিতে গত সোমবার ভোটগ্রহণ হয়। ওই দিন খাগরিয়া ইউপির দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। খাগরিয়া গনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখলের লক্ষ্যে এক পক্ষের লোকজন অপর পক্ষের ওপর প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে। এ সময় অন্তত ৮ জনকে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা যায়।

ওই অস্ত্রধারীরা হলেন মোহাম্মদ নিশান, শওকত, মো. নাছির উদ্দিন, মো. শাখাওয়াত, মো. এজাহার. মো. কায়েস ও মো. আবছার। এদের মধ্যে কায়েস ও আবছার ছাড়া বাকিরা সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী আকতার হোসেনের অনুসারী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অস্ত্রধারীদের মধ্যে ছিলেন আকতার হোসেনের অফিসের কর্মচারী নাছির উদ্দিন। তাঁর বাড়ি খাগরিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদখালী গ্রামে। তিনি স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শওকতও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বাড়ি নতুন চরখাগরিয়া গ্রামে। একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ নিশান স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে তাঁদের প্রত্যেককে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতার হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই আকতার হোসেন ও জসিম উদ্দিনের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি খাগরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালানোর সময় জসিম উদ্দিনের অনুসারীদের ওপর ব্যক্তিগত শটগান দিয়ে গুলি করেন নৌকার প্রার্থী। ওই দিন দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন।

এর কয়েক দিন পর নির্বাচনী প্রচারণায় নিজের অস্ত্র প্রস্তুত রাখার ঘোষণা দেন আকতার হোসেন। ওই সময় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্রচারণার মাইক হাতে আকতার হোসেন বলছেন, ‘আমার কাছে সব সময় দুটি মাল (অস্ত্র) থাকে। যেখানে যেভাবে হোক, আগে কাজ করে ফেলবেন। পরে খেলা দেখা যাবে। সব সময় আমার মালও লোড। আমিও প্রস্তুত।’

এরপর পুলিশ তাঁর লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র জমা নেয়। তবে নির্বাচনের দিন সহিংসতা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাদের দুর্বলতার কারণে নির্বাচনের দিন অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে গুলি করার সাহস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক ভোটার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভোটের দিনের অবস্থা এমন ছিল, মনে হচ্ছিল দুইটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে। দুই পক্ষের হাতেই অস্ত্র-লাঠিসোঁটা ছিল। একের পর এক গুলির আওয়াজে কান ভারী হয়ে যাচ্ছিল।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যদি পুলিশ অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করত, তাহলে নির্বাচনের দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আমাদের দেখতে হতো না। আমরা এখনো আতঙ্কে আছি।’ অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আরও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে আমরা অভিযান চালিয়েছি। ওই সময় ৫টি অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এরপরও নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার থামানো যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত