এক ঘণ্টার দুধের হাট

নিয়াজ মোরশেদ, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) 
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১০: ০০

ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক সকাল ৬টা। দু-একটা দোকান ছাড়া সব দোকানই বন্ধ। সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে বোতল, ড্রাম আর জগ ভর্তি করে দুধ নিয়ে আসতে শুরু করেছেন লোকজন। মুহূর্তেই লোকারণ্য। চলে দুধ বেচাকেনা। এক ঘণ্টার মধ্যেই শান্ত হয়ে যায় কোলাহল। এর মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে হাটের সব বেচাকেনা।

প্রতিদিনই ব্যতিক্রমী এ দুধের হাট বসে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর হাটে। হাটের গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মাত্র এক ঘণ্টা চলে দুধের বেচাকেনা। খাঁটি এবং টাটকা দুধ পাওয়া যায় বলে খ্যাতি রয়েছে এ হাটের। তাই দূরদূরান্ত থেকে পাইকারেরা এসে দুধ কিনে নিয়ে যান। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় সব দুধ।

স্থানীয় ও পাইকারেরা জানান, প্রতিদিন ভোরে গাভি থেকে দুধ সংগ্রহ করার পরপরই হাটে নিয়ে আসেন স্থানীয় খামারি ও কৃষকেরা। তখনো দুধ গরমই থাকে। এই হাটে দুধের দাম নিয়ে নেই কোনো বাতচিত। ন্যায্য মূল্যই চাওয়া হয় ক্রেতার কাছে। অন্যান্য বাজারের তুলনায় কম দামে বিক্রি করা হয় দুধ। আর সেই দুধ হয় একদম খাঁটি। ভেজালের কোনো কারবারই নেই এই হাটে। তাই তো দুধ নিয়ে বিক্রেতাদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না।

প্রতিদিন সকালে সাইকেলে করে গোপীনাথপুর হাটে আসেন আক্কেলপুরের কৃষক ওবায়দুল ইসলাম। বাড়িতে একটি গাভি আছে তাঁর। সেই গাভির দুধ বিক্রি করতে আসেন তিনি। গতকালও সাড়ে ছয় কেজি দুধ বিক্রি করতে এসেছেন ওবায়দুল। সেখানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, ৪৫ টাকা কেজি দরে তিনি দুধ বিক্রি করেছেন। এই হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারেরা আসেন দুধ কিনতে। তাই বিক্রি হতে সময় লাগেনি। সে কারণে সময় বাঁচাতে এক ঘণ্টার দুধের হাঁটে আসেন তিনি।

হাটে নিয়মিত দুধ কিনতে আসেন জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার হাটশহর গ্রামের আসলাম হোসেন। তিনি বাড়িতে খাঁটি দুধের দই তৈরি করেন। আসলাম বলেন, গোপীনাথপুর হাটে খামারি ও কৃষকেরা খাঁটি দুধ নিয়ে আসেন। এখানকার দুধের দই খুব সুস্বাদু হয়। তেমন দামাদামিও করতে হয় না। কম দামেই পাওয়া যায় আসল জিনিস। হাটে ভেজালমুক্ত দুধ পাওয়া গেলেও মাঝেমধ্যে প্রাপ্য দাম থেকে বঞ্চিত হতে হয় বিক্রেতাদের। স্থানীয় কৃষক এনামুল হোসেন জানালেন সে কথাই। এনামুলের বাড়িতে তিনটি বিদেশি জাতের গাভি রয়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০ কেজি দুধ দেয়। এ হাটে বিক্রি করে আগে কিছুটা লাভ হতো তাঁর। কিন্তু ইদানীং গরুর খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় দুধ বিক্রি করে তেমন লাভ হচ্ছে না। তবুও হাটে আসেন কম সময়ে বিক্রি হয় এ কারণে।

গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারে সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত দুধের হাট বসে। এক ঘণ্টার মধ্যে দুধের বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। 
হাটে প্রতিদিন ৩০-৫০ মণ দুধ বিক্রি হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, এই হাটে ভেজাল দুধ বিক্রির কোনো অভিযোগ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত