Ajker Patrika

‘লাইনে দাঁড়াইছি, ছবি তুইলেন না’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২২, ১৫: ১৪
‘লাইনে দাঁড়াইছি, ছবি তুইলেন না’

রোদের মধ্যে টিসিবির পণ্য কিনতে সারিতে দাঁড়িয়েছেন কয়েক শ নারী-পুরুষ। ভাদ্রের গরমে দরদর করে ঘামছেন তাঁরা। হ্যান্ডমাইক নিয়ে সারি ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন টিসিবির কর্মীরা। সারিতে দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকা মানুষের দিকে ক্যামেরা ধরতেই একজন বলেন, ‘ভাই, লাইনে দাঁড়াইছি, ছবি তুইলেন না। পেপারে এই ছবি দিয়েন না।’

ক্যামেরা নামিয়ে কথা হয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি শহরের খানপুর এলাকার বাসিন্দা। বয়স ৩৫ বছর। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তিনি জানান, আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রোদে দাঁড়িয়ে আছেন। অফিসকে ভিন্ন তথ্য দিয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ছবি তুলে ছাপালে আত্মীয়স্বজনসহ পরিচিত ব্যক্তিরা দেখে ফেলবেন। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে বলে ছবি তোলায় তাঁর আপত্তি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডন চেম্বারে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশে চলছিল টিসিবির পণ্য বিক্রি। কার্ডধারী নারী-পুরুষেরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে চিনি, ডাল ও তেল কিনছিলেন। ক্রেতাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। সেখানেই দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার অপেক্ষায় ছিলেন ওই ব্যক্তি।

সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় টিসিবির পণ্য ক্রয়ের কার্ড করে নিয়েছেন ওই ব্যক্তি। তিনি জানান, বাসাভাড়া দিতে বেতনের সিংহভাগই চলে যায়। এরপর স্ত্রী ও কিন্ডারগার্টেনপড়ুয়া মেয়ের খরচ জোগাতে বেশ বেগ পেতে হয়।

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অফিসের স্যাররে বলছি, কাজের জন্য একটু দূরে আসছি। বউরে তো এই গরমের ভেতরে লাইনে দাঁড় করানো যায় না। তাই আমি নিজেই আসছি। মাসের শেষদিকে তো সবার হাতই খালি হতে থাকে। টিসিবির ট্রাক তো সব সময় পাব না। গরমে আর লাইনে কষ্ট হলেও করার কিছু নাই। তেল-চিনি কিনেই বাড়িতে ফিরতে হবে।’ 
ওই ব্যক্তি জানান, কিন্ডারগার্টেনে মেয়ের পড়াশোনার খরচ প্রতিবছর বাড়ছে। স্কুল থেকে মেয়ের জন্য টিউশন-শিক্ষক রাখা, আলাদা খাতা তৈরিসহ নানা খরচ যুক্ত হয়। তার চাহিদার কাছে কোনো আপস চলে না। তাই নিজের চাহিদার অনেক আপস করে সংসার চালাচ্ছেন।

     টিসিবির ট্রাক তো সব সময় পাব না। গরমে আর লাইনে কষ্ট হলেও করার কিছু নাই। তেল-চিনি কিনেই বাড়িতে ফিরতে হবে।

    এক ব্যক্তি
    বেসরকারি চাকরিজীবী

স্থানীয় কাউন্সিলর সূত্রে জানা গেছে, বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ হাজার মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ লিটার তেল, ২ কেজি মসুর ডাল ও ১ কেজি চিনি। সর্বমোট ৪০৫ টাকায় এই সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।

বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘মানুষ যে শাকসবজি খেয়ে থাকবে, বাজারে তো সে অবস্থাও নেই। সব সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। শাকসবজি ফলাতেও কি ডিজেল-পেট্রল লাগে? মাছ, মুরগি সবকিছুর দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়লে এক বিষয়; দেড়-দুই গুণ বাড়লে মানুষ চলে কীভাবে? মানুষের বেতন কি সেভাবে বাড়ে!’

    মানুষ না পারছে কিছু বলতে, না পারছে সহ্য করতে। যাঁরা দিনে এনে দিনে খান, তাঁদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে গেছে।হাজী নূরউদ্দিন,
    সভাপতি, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী 

নির্দিষ্ট বেতনে কীভাবে সবকিছু সামলাচ্ছেন, জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘কীভাবে আর সামলাব! সবাই যেভাবে সামলায়। টাকার টান পড়লে কারও থেকে ধার নিই। পরে আরেক দিক থেকে টাকা এনে মিলাই। যেসব খরচ কমানো যায় সেগুলো কমিয়ে দিই। এভাবেই চলছি। তবে কতদিন চলব জানি না।’

‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী নূরউদ্দিন বলেন, ‘বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বড় অর্থনৈতিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ না পারছে কিছু বলতে, না পারছে সহ্য করতে। যারা দিনে এনে দিনে খান, তাঁদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে গেছে। যারা মোটামুটি সচ্ছল ছিলেন, তাঁদেরও চলতে কষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের আর্থিক সক্ষমতা এখন ক্রমেই নিন্মমুখী হচ্ছে।’

কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বলেন, ‘বাজারে দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দাম। সেই মুহূর্তেই নাসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ হাজার মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্যসামগ্রী দেওয়া শুরু করেছে সরকার। আজ (বৃহস্পতিবার) আমার ওয়ার্ডের ২ হাজার মানুষের মধ্যে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে মানুষের চাপ বেশি। সামনের সপ্তাহে আবারও পণ্য দেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত