জলকপাটে কপাল পুড়ছে কৃষকের

বাপ্পী শাহরিয়ার, চকরিয়া (কক্সবাজার)
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩: ৩৯

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চারটি পয়েন্টে জলকপাট (স্লুইসগেট গেট) দিয়ে মাতামুহুরি শাখা খাল ও ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালে নোনাপানি ঢোকানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে উপকূলীয় ৮ ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার ১১ হাজার ৫৫০ হেক্টর আমন ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজির খেত নিয়ে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

অনাবৃষ্টির কারণে বদরখালী, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া ও পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের এসব জলকপাট দিয়ে অসাধু মাছচাষি ও জলকপাট ইজারাদারেরা যোগসাজশে নোনা পানি ঢোকাচ্ছেন। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে এসব জলকপাট দিয়ে পানি ঢোকানো হচ্ছে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।

গত বুধবার উপজেলার মাতামুহুরি নদীর সেচ প্রকল্পের পালাকাটা ও বাগগুজারা রাবার ড্যাম ফুলানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন লিখিত আবেদন করেছেন।

দ্রুত রাবার ড্যাম দুটি ফুলানো না হলে বদরখালী, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, সাহারবিল, পশ্চিম বড়ভেওলা, পূর্বভেওলা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী ও চকরিয়া পৌরসভার কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন ও খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। অসংখ্য কৃষক মৌখিক ও লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পাউবোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করেছেন। তবু এখনো সাড়া না মেলায় কৃষকদের আতঙ্ক কাটেনি।

নোনা পানি ঢোকানোর কারণে জলকপাটের আশপাশের দুই শতাধিক বিলের আমন ও সবজি খেত ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন খেতে পচন শুরু হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও কোনাখালী বাগগুজারা সড়কের ওপর চড়াপড়া জলকপাট ও মরংঘোনা জলকপাট। মাতামুহুরি নদী থেকে ওই দুই জলকপাট দিয়ে মরংঘোনা বিল ও বড় বিলে নোনাপানি প্রবেশ করছে। এতে নোনাপানির প্রভাবে আমন খেত তলিয়ে পচন ধরেছে। অনেকে বীজতলা তৈরি করে নোনাপানি কারণে চারা রোপণ করতে পারেনি।

কোনাখালী মরংঘোনা আক্তার মিয়ার জলকপাট, চড়াপড়া জলকপাট, বাংলাবাজার সাহেবখালী জলকপাট ও ঢেমুশিয়া জলকপাট দিয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং জলমহাল ইজারাদাররা জলকপাট দিয়ে নোনাপানি ঢুকিয়ে মৎস্য চাষ ও মাছ আহরণ করছেন।

কোনাখালী মরংঘোনার কৃষক আলী আহমদ বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর এমনই মাঠে চারা রোপণ করতে হিমশিমে পড়েছে কৃষক।’

পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে উপকূলীয় চাষিরা আমনের চারা রোপণ ও সবজির চাষ করতে হিমশিম খেয়েছে। চারটি জলকপাট দিয়ে রাত হলেই নোনাপানি ঢোকানোর কারণে কৃষকেরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। অতি জরুরি জলকপাট দিয়ে নোনাপানি ঢোকানো বন্ধ করতে হবে। যাঁরা কৃষকদের সর্বনাশ করেছে তাঁদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম বলেন, ‘মাতামুহুরি নদীর সেচ প্রকল্পের পালাকাটা ও বাগগুজারা রাবার ড্যাম ফুলানোর জন্য গত বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে।’

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা লিখিত চিঠি পেয়েছি। যে জলকপাটগুলোতে যাঁরা রাতের কপাট খুলে নোনাপানি ঢোকাচ্ছে  তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত