৪ কিলোমিটার সড়কে ৮ অবৈধ স্ট্যান্ড

মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২২, ১৩: ৫০

নোয়াখালী পৌর শহর মাইজদী থেকে সোনাপুর এক সড়কের শহর। প্রতিদিন কয়েক হাজার ছোট-বড় গাড়ি চলে এ শহরের একমাত্র সড়কটি দিয়ে। জেলা শহর হওয়ায় নানান কাজে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ আসে এ শহরে। আর এসব মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শহর ঘিরে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এ ছাড়া প্রধান সড়কের যেখানে-সেখানে যে যার মতো অটোরিকশা পার্ক করে যানজট সৃষ্টি করছে।

পৌর এলাকার দক্ষিণে সোনাপুর জিরো পয়েন্ট থেকে উত্তরে মাইজদী বাজার পর্যন্ত মাত্র চার কিলোমিটার সড়কে ৮-১০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড রয়েছে। এতে যেমন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য। আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ তো রয়েছেই। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, এক সড়কের এ নোয়াখালী শহরে দাপ্তরিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিনই ভিড় করে। উপজেলাগুলো থেকে জেলা শহরে চলাচলের জন্য যাত্রীবাহী বাস তেমন একটা না থাকায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ফলে শহরের প্রধান ও সংযোগ সড়ক ঘিরে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ অটোরিকশাস্ট্যান্ড। সোনাপুর জিরো পয়েন্টের চারপাশে বৃহৎ পার্কিংয়ের পাশাপাশি পৌর শহরজুড়ে রয়েছে ৮-১০টি স্ট্যান্ড। এগুলোর মধ্যে শহরের জামে মসজিদ মোড় থেকে মাইজদী বাজার পর্যন্ত এ দেড় কিলোমিটারে প্রধান সড়ক ও তার পাশের সংযোগ সড়কে রয়েছে সাতটি। এ ছাড়া দত্তের হাট, সোনাপুর বাজারে রয়েছে আরও কয়েকটি। সড়কের একটি অংশ দখল করে এসব স্ট্যান্ড তৈরি করায় শহরগামী গাড়িগুলোকে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে। যানজট নিরসনে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, সড়কের পাশে থাকা অটোরিকশাচালকেরা শিক্ষার্থীদের নিতে চায় না। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অটোরিকশায় উঠতে হয়। ভাড়া কম দিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এ ছাড়া অটোরিকশায় উঠলে অনেক চালক ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেন।

যাত্রীরা বলেন, প্রতিটি রুটে নিজেদের মতো করে ভাড়া নির্ধারণ করে অটোরিকশাচালকেরা। কয়েক দিন পর পর বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বাড়ানো হয়। এসব নিয়ে কথা বললে স্ট্যান্ডে থাকা চালকেরা একত্র হয়ে যাত্রীদের মারধর করেন। প্রতিটি রুটে রাত আটটার পর থেকে ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যায়।

পৌরসভার তথ্যমতে, শহরের সোনাপুরে একটি এবং পৌর স্ট্যান্ড এলাকায় একটি টার্মিনাল রয়েছে। অথচ ওই দুটি টার্মিনালে শুধু দূরপাল্লার কয়েকটি বাস থাকে। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে প্রধান সড়ক ঘিরে।

অটোরিকশাচালকদের দাবি, মালিক সমিতি থেকে তাঁদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেভাবে তাঁরা ওই স্থানগুলোতে সিএনজি পার্ক করছেন। সমিতি তাঁদের উঠে যেতে বললে চলে যাবেন।

জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান রাজু বলেন, ‘শহরের সব কটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পার্কিং অবৈধ, এটা আমরা জানি। কিন্তু নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে সড়কে সিএনজিগুলো পার্ক করা হচ্ছে। অটোরিকশাস্ট্যান্ডের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দিলে তাঁরা সেখানে নিয়ে যাবেন।

সদর ট্রাফিক বিভাগ জানায়, যানজট নিরসনে জেলা ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত কাজ করছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক বিভাগ থেকে নো পার্কিং সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। মাইকিং করে শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা সরানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা অমান্যকারীদের তাঁরা জরিমানা করছেন। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক, পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা সম্মিলিত চেষ্টায় এ সমস্যা সমাধান হতে পারেন বলে মনে করে ট্রাফিক বিভাগ।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, পৌর এলাকায় তাঁদের অনুমোদিত দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ অটোরিকশার স্ট্যান্ডগুলো একাধিকবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন পর তারা আবার ওই স্থানগুলোতে জড়ো হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকটি অটোরিকশার স্ট্যান্ড করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত