অবৈতনিক শিক্ষা, সঙ্গে খাবার

সেলিম সুলতান সাগর, চিতলমারী (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৫
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ১৮

অন্ধকারে আলো জ্বালাতে চায় ওঁরা। ওরা সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে চায়। চায় পরিবারে অবহেলিত প্রতিবন্ধী শিশুটির প্রতি অবহেলা কমাতে। তাই তো প্রতিদিন বাড়ি থেকে গাড়িতে বিদ্যালয়ে এনে মায়ের মমতায় দেওয়া হয় পাঠদান। আর এ জন্য বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠেছে আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষা নিচ্ছে ৩৩৮ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. হায়াত আলী হাওলাদার বলেন, এলাকার অবহেলিত প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা ভেবে এবং তাঁদের প্রতি পরিবারের ব্যবহার দেখে এসব শিশুদের জন্য কিছু করার চিন্তা করেন। তাই এলাকার কয়েকজন শিক্ষিত যুবকের সঙ্গে আলোচনা করে ২০০৮ সালে উপজেলার আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া গ্রামে ‘আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’ করেন। এ জন্য নিজের ২১ শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। শুরু থেকেই নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে স্কুলটি চলছে।

মো. হায়াত আলী হাওলাদার জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩৩৮ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ৮৯ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৮৬ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪৬ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫৪ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৯ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ২৪ জন রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। এ ছাড়া ৭ জন আয়া, ২ জন অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক এবং ৬ জন ইজিবাইক ও ভ্যানচালক রয়েছেন।

তিনটি আধপাকা টিন শেড ঘরের আটটি কক্ষে এসব শিশুদের পাঠদান চলে। যানবাহনের মধ্যে রয়েছে তিনটি ইজিবাইক ও দুটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান। এই পরিবহনে করে প্রতিদিন উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আনা হয়। আর প্রতিদিন দুপুরে শিক্ষার্থীদের খাবার দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের ২৫ জন কর্মী ১৪ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করছেন।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম আক্তার ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাব্বির শেখ বলেন, আয়ারা তাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে করে স্কুলে নিয়ে আসেন। শিক্ষকেরা তাদের যত্নের সঙ্গে পড়াশোনা শেখান। তাঁরা বিদ্যালয়ে এসে অনেক কিছু শিখতে পেরেছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নার্গিস পারভিন, বাবুল বিশ্বাস ও মুক্তা আক্তার বলেন, তাঁরা এই বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের শিক্ষক। তাঁরা এই বাচ্চাদের নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। শিশুদের অনেক পরিবর্তন এসেছে। শিশুদের জন্য তাঁরা অনেক শ্রম দিয়েছেন। তাঁরা চান, বিদ্যালয়টি যেন বন্ধ না হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমাদুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে আমরা বিনা বেতনে শিক্ষা দান করে যাচ্ছি। এখন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা একটা পর্যায়ে এসেছে। তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হলে এখন স্কুলটি এমপিওভুক্ত হওয়া দরকার।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, তাঁরা আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির ৩৩৮ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা নিচ্ছে। শিশুরা তাঁদের গান, নাচ ও গজল পরিবেশন করে শুনিয়েছে। বিষয়টি তাঁদের মুগ্ধ করেছে। তাঁরাও চান, বিদ্যালয়টি এগিয়ে যাক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত