বর্জ্যের কম্পোস্ট থেকে মাসে আয় ২ লাখ টাকা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯: ২৯
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১: ৩৬

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের দ্বিরাজতুল্লাহ মাতুব্বরেরডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ূম খান (৪০)। জেলা শহরের নিউমার্কেট এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করতেন তিনি। করোনাকালীন সেই ব্যবসায় লোকসানে পড়েন। পরে পরিকল্পনা করেন ভিন্ন কিছু করার। সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ২০২১ সালে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। শুরুর দিকে পুঁজি কম থাকলেও বর্তমানে দুটি এনজিওর সহযোগিতায় ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কাইয়ূমের কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় আরও ২৫ জনের। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ও উৎপাদন খরচ বাদে মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করছেন এই উদ্যোক্তা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে দ্বিরাজতুল্লাহ মাতুব্বরেরডাঙ্গী এলাকার ছমির শেখের বাজারসংলগ্ন এলাকায় প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে ডিআরকে অ্যাগ্রো নামের জৈব সার উৎপাদনের কারখানাটি গড়ে তোলেন কাইয়ূম। শুরুর দিকে তেমন লাভ না হলেও চার বছরের মাথায় সফলতা ধরা দেয়। বর্তমানে কাইয়ূমের এই উদ্যোগ দেখে অনেকে এই কাজে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

প্রসঙ্গত, ট্রাইকো কম্পোস্ট হলো একধরনের জৈব সার। বিভিন্ন জৈব উপাদান—যেমন গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, সবজির উচ্ছিষ্ট, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়া, ভুট্টার ব্রান, চিটাগুড়, ছাই ও নিমপাতা এবং ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকের অণুবীজ নির্দিষ্ট অনুপাতে একত্রে মিশিয়ে বিশেষ উপায়ে হাউসে জাগ দিয়ে ৪০-৪৫ দিন রাখতে হয়। পরে পচনপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়, সেটিই ট্রাইকো কম্পোস্ট। আর কম্পোস্ট সার তৈরির সময় হাউস থেকে নির্গত তরল নির্যাসকে ট্রাইকো লিচেট বলে।

আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ‘মানুষ যা ফেলে দেয়, তা আমি কাজে লাগিয়ে থাকি। আমি পরিবেশ থেকে উচ্ছিষ্ট সবকিছু একত্র করি। মাটি ও মানুষের সুস্থতার জন্য এই উদ্যোগ বেছে নিয়েছি। মানুষ যেন প্রাকৃতিক উপায়ে ভেজালমুক্ত খাবার খেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, এই ব্যবসার মধ্য দিয়ে বর্তমানে অনেক ভালো আছি। আমার এখানে কাজ করে আরও ২৫টি পরিবারের আয়ের পথ হয়েছে।

সম্প্রতি কাইয়ূমের কারখানায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা ও কারখানা থেকে উচ্ছিষ্ট বর্জ্য সংগ্রহ করে এনে কারখানার সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে তাঁর কারখানা থেকে প্রতি মাসে ৩০০ টন জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা মিটিয়ে একটি বেসরকারি কোম্পানিকেও জৈব সার সরবরাহ করছেন কাইয়ূম।

কাইয়ূমের কারখানায় কাজ করেন লোকমান শেখ নামের এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। লাঠিতে ভর দিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। লোকমান বলেন, ‘আগে অনেক কষ্ট করেছি, কারও সহযোগিতা তেমন পাইনি। এখানে কাজ করে এখন পরিবার নিয়ে ভালোভাবে জীবন যাপন করছি।’

স্থানীয় কৃষক আব্দুল মালেক বেপারী বলেন, জৈব সারে ফসলও ভালো হয়, মাটিও ভালো থাকে। এ কারণে এখন জমিতে জৈব সারই ব্যবহার করি।

অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ‘আমার এলাকায় এই কারখানা গড়ে তোলায় এলাকার কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন।’

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রাইকো কম্পোস্টে ছয় ধরনের উপাদান থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউরিয়া, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার ও ম্যাগনেশিয়াম। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়া নাশক উপাদান, জৈব কার্বন ও হরমোন থাকে। কৃষকেরা এই সার ব্যবহার করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এবং ফসলের গুণগত মানও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত