কৃষির জেলায়ও অনাবাদি জমি

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ৩৭

কিশোরগঞ্জের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। জেলার অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল হাওরের ওপর। সাতটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ও ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ। জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা সম্পূর্ণ হাওর এবং এ ছাড়া চার-পাঁচটি উপজেলা আংশিক হাওরবেষ্টিত। এ অঞ্চলের ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। তবে কৃষি নির্ভরশীল এ জেলায় অনাবাদি থাকে ১০ হাজার ১০০ হেক্টর জমি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক পর্যায়ে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে বছরের পর বছর বিশাল পরিমাণ সম্ভাবনাময় জমি অনাবাদি রয়ে গেছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাবাদি জমিতে কিছুটা সেচ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। হাওরের জমিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি জমে আবাদি জমি থেকে অনেকটাই উঁচু হয়ে যায়, যার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা ধান আবাদের অযোগ্য বলে মনে করেন। এমনকি ধান ছাড়া অন্য ফসলে এখানকার কৃষকদের তেমন একটা ধারণা নেই। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মিষ্টিকুমড়া, তরমুজ, সরিষা ইত্যাদি ফসল অনায়াসে চাষ করা সম্ভব। আর পাটের জন্য খুবই উপযোগী হাওরের পলিসমৃদ্ধ পতিত জমিগুলো। এমনকি সরিষা, ধনিয়া চাষেও সফলতা পেতে পারেন কৃষকেরা। তাঁরা মনে করছেন, এসব জমি চাষযোগ্য করে আবাদ করলে কৃষকেরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি এটি জেলা তথা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় স্থায়ী পতিত জমি রয়েছে ৯ হাজার ৭৩৯ হেক্টর। এর বাইরেও ১০ হাজার ১০০ হেক্টর আবাদযোগ্য সত্ত্বেও অনাবাদি জমি রয়েছে। অর্থসংকট ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেই তাই কৃষকেরা চাইলেও এসব অনাবাদি জমিতে আবাদ করতে পারছেন না। তবে ইতিমধ্যে ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকেরা বলছেন, কৃষি উপকরণ, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হলে অনাবাদি জমিগুলোতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে।

করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের খয়রত গ্রামের কৃষক আবু নাঈম বলেন, ‘ধান ছাড়া হাওরের মানুষ অন্যান্য ফসল আবাদে অনিচ্ছুক। ফসল মানেই ধান—এই চিন্তাভাবনা থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসতে পারছেন না। অথচ অতি উর্বর পলিসমৃদ্ধ এই জমিগুলোতে অনেক ফসল ফলানো সম্ভব।

সম্পূর্ণ হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কৃষকদের ভিন্ন ফসলের চাষাবাদ সুবিধা ও লাভের হিসাবটা বাস্তবতায় দেখিয়ে দিতে পারলে হাওরের বুকে পতিত হাজার হাজার হেক্টর জমি দামি ফসলে ভরে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ১০০ জন কৃষককে ৫ প্রকারের সবজির বীজ বিনা মূল্যে দিয়েছি। তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে জেলার ১৭ হাজার ৮০০ কৃষককে বিনা মূল্যে সরিষার বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে।’

উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার আরও বলেন, জেলায় বোরো আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫০ হাজার কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা, কালাই ও সরিষা আবাদ বৃদ্ধি করতে ৩৬ হাজার ২৬৫ জন কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত