সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় ভোটার

ইলিয়াস আহমেদ, (ময়মনসিংহ) ও মহিউদ্দিন রানা (ঈশ্বরগঞ্জ)
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ২০
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ১৬

সপ্তম ধাপে ঈশ্বরগঞ্জে ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আজ সোমবার। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় এবং স্থানীয় প্রশাসন। তবে নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি ইউপিতে সহিংসতার ঘটনায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেক প্রার্থী এবং ভোটাররা। এ অবস্থায় ৫৩টি ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতেও কয়েকটি ইউপিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। অন্যদিকে জাটিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের চারটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ মিলেছে।

তারুন্দিয়ার তরুণ ভোটার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন নিয়ে যে পরিমাণ সহিংসতা হয়েছে, ভোট গ্রহণের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুশৃঙ্খল থাকে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘সবগুলো ভোটকেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছি। তবে ৫৩টি ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রগুলোয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হবে।’ সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ ও সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।

এদিকে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে সব মহলে। ভোটকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অনেকে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নূরুল হুদা খান বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে জনসমাগম বেশি হবে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮১ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৪৬ ও সাধারণ সদস্য পদে ৪২২ জন প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬৮১ জন। স্থায়ী ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১২৩ টি। মোট ভোটকক্ষ ৭৪৮ টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৭৩৬ এবং অস্থায়ী ১২ টি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, ভোটগ্রহণের জন্য প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণে নিয়োজিতরা যাতে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, এ জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আগের দিনই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে এসে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছেন। এ ছাড়াও জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। কেউ আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটালে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেওয়ান মো. সারওয়ার বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা প্রচারের সমান সুযোগ পেয়েছেন। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সবাই সমান সুযোগ পাবে। কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।

জেলা সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ‘ময়মনসিংহে শেষ দফায় ঈশ্বরগঞ্জে ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। অতীতের ন্যায় এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে কারও প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। কেউ বল প্রয়োগ করে বাড়তি সুযোগ নিতে পারবে না। যিনি জনপ্রিয়, তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত