Ajker Patrika

এক যুগে সাত পাটকল ৮ হাজার কর্মসংস্থান

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
এক যুগে সাত পাটকল ৮ হাজার কর্মসংস্থান

অর্থনীতির চাকার ঘূর্ণনে একসময় পাটের জোর ভূমিকা ছিল। এ কারণে এই ফসলের নাম হয়েছিল ‘সোনালি আঁশ’। কিন্তু প্লাস্টিকে বাজার সয়লাব হওয়ার পর পাট মর্যাদা ও অবস্থান—দুই-ই হারিয়েছে। প্লাস্টিকে পরিবেশদূষণ ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি একের পর এক বন্ধ হয়েছে পাটকল, বেকার হয়েছে মানুষ। দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকও হয়েছেন পাটবিমুখ। কিন্তু দিনাজপুরে আবারও স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাট। এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে সাতটি পাটকল। কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। চাহিদা থাকায় কৃষকও আবার পাট চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

জেলা প্রশাসন, পাটশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, দিনাজপুরে ধানের চাষ বেশি হয়। এক যুগ আগেও পাট চাষ সেভাবে হতো না বললেই চলে। তবে ২০০৭-০৮ সালের পর পরিস্থিতি ঘুরতে শুরু করেছে। এদিকে পরিবেশদূষণ রোধে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে ও পাটজাত পণ্য ব্যবহারে সরকারের প্রচার-প্রচারণা, দেশে-বিদেশে পাটজাত পণ্যের চাহিদা আবার বাড়তে শুরু করেছে। এতে পাটশিল্পের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। গত এক যুগে দিনাজপুরে গড়ে উঠেছে সাতটি পাটকল। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে সাত থেকে আট হাজার মানুষের। পাশাপাশি পাট উৎপাদন ও পাটজাত পণ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কয়েক শ কুটির শিল্প ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব শিল্প ও পাট চাষের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিনাজপুরের পাটকলগুলোয় মূলত হেশিয়ান ব্যাগ (পাতলা ব্যাগ), শেকিং ব্যাগ (মোটা ব্যাগ) ও সুতলি উৎপাদন হয়। সেই সুতলি যাচ্ছে বিভিন্ন হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে সুতলি দিয়ে কারুপণ্য তৈরি হচ্ছে। আবার পাটকলে উৎপাদিত বস্তা দেশ-বিদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দিনাজপুরের পাটকলগুলো অধিকাংশই রপ্তানিমুখী। এই পাটকলগুলো নারী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। এসব কারখানার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শ্রমিকই নারী। এদিকে স্থানীয়ভাবে পাটকল গড়ে ওঠায় কৃষকেরাও পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রূপালী বাংলা জুট মিলস্ লিমিটেডের নারী শ্রমিক কুলসুম বলেন, ‘আমাদের আগে হয় বাড়িতে বসে থাকতে হতো, না হয় খেতে কাজ করতে হতো। এখানে জুট মিল হওয়ায় আমরা কাজ করতে পারছি। এতে করে সংসারে সুদিন ফিরেছে।’

রূপালী বাংলা জুট মিলস্ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক হামিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০১১ সালে এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে প্রায় দেড় হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী। তাদের গড় আয় মাসে ১০ হাজার টাকা। রূপালী বাংলা একটি শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার লাভলী জুট মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, পাট খুবই সম্ভাবনাময় একটি ফসল। দিনাজপুরে বেশ কয়েকটি জুট মিল গড়ে ওঠায় পাটের চাহিদা বেড়েছে। তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দৈনিক উৎপাদন এখন প্রায় ২০ মেট্রিক টন। এর ৯০ শতাংশই বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

এদিকে চাহিদা বাড়ায় দিনাজপুরে বাড়ছে পাটের উৎপাদন। উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। এ বিষয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত কয়েক বছরে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষে আবারও আগ্রহী হচ্ছেন। পাটের ফলন বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ বছর ৩০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে পাটবীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য ফাঁস করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জিয়াউলের বিরুদ্ধে

সাতকানিয়ায় নিহত জামায়াত কর্মীর লাশের পাশে ব্রাজিলের তৈরি অত্যাধুনিক পিস্তল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত