প্রবাসে ব্যর্থ, দেশে ফিরে বলসুন্দরী কুল চাষে সফল

মাহবুব আলম আরিফ, মুরাদনগর
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২২, ০৭: ৫১
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১০: ৫৫

জীবিকার তাগিদে ১৪ বছর প্রবাসে থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু ভাগ্য বদলাতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে বরই চাষ শুরু করেন। এবার ভাগ্যের চাকা যেন আপনা-আপনি ঘুরতে শুরু করে। বলছি, ইউনুস ভূঁইয়ার কথা। তিনি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের মোসলেম ভূঁইয়ার ছেলে। বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ৬০ বিঘা জমিতে বলসুন্দরী কুল নামের বরই চাষ করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিশাল জায়গাজুড়ে লাগানো গাছগুলো ফলে ভরপুর হয়ে রয়েছে। একেকটি গাছ চার থেকে পাঁচ হাত লম্বা। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় দুলছে লাল-সোনালি রঙের বলসুন্দরী কুল নামের বরইগাছ। রোদ পড়ে রঙিন বরইগুলো চকচক করছে। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে অনেক গাছের ডাল।

বলসুন্দরী কুলের ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং রয়েছে। ফলটি আকারে বড়, দেখতে ঠিক আপেলের মতো। খেতেও খুব সুস্বাদু। বাজারে এই কুলের চাহিদা ও দাম ভালো। ফলে চাষের সব খরচ বাদ দিয়ে লাভবান হচ্ছেন ইউনুস ভূঁইয়া। তিনি এ জাতের কুল চাষ করে ইতিমধ্যে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক বেকার লোক এসে দেখছেন এবং তাঁর কাছে পরামর্শ চাইছেন।

মো. ইউনুস ভূঁইয়া জানান, জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কৃষি খামারে কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। নিজের এবং অন্যের জমি লিজ নিয়ে ৬৬ বিঘা জমিতে মাছের খামার করেন। এলাকাটা উঁচু হওয়ায় পানি কমে যায়। তেমন লাভও পাচ্ছিলেন না। চিন্তা করলেন খামারের পাড়ে ও ভেতরের জমিতে অন্য কিছু করতে হবে। এরপর টাঙ্গাইল থেকে লেবুর চারা এনে লাগিয়েছেন। সঙ্গে লাগিয়েছেন কলাগাছ, একাশি গাছ ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। কিন্তু এতেও সুবিধা হচ্ছিল না। পরে ইউটিউবে বরই চাষ দেখে আগ্রহী হয়ে চারা আনলেন নাটোর থেকে। আট মাসে কুলের ফল আসা শুরু করে। গত বছর অল্প কয়েক দিনে তিনি কয়েক লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করেছেন। চলতি বছর আরও বেশি ফল পেয়েছেন। তিনি জানান, জমি প্রস্তুতসহ তাঁর প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো পুঁজি লেগেছে।

প্রথম বছরে প্রতি গাছে ১০ থেকে ১২ কেজি কুল পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় বছরে প্রতি গাছে ৭০ থেকে ৮০ কেজি কুল এসেছে। এভাবে তাঁর ফলন বাড়ছে।

মো. ইউনুস ভূঁইয়ার প্রতিবেশীরা বলেন, একজন ব্যতিক্রমী ও সাহসী কৃষক তিনি। এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এর আগে এ এলাকায় কেউ নেননি। তাঁকে দেখে এখন অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইউনুসকে শুরুর পর্যায়তেই পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। জৈব সার ব্যবহার করে যেন ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারেন, সে জন্য তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট প্রদর্শনী দিয়েছি। আমাদের উদ্যোগ ‘মুরাদনগর উপজেলায় ১০০ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি’-এর অন্যতম সেরা উদ্যোক্তা ইউনুস ভূঁইয়া। শুধু এই উপজেলায় নয়, পুরো কুমিল্লার মধ্যে তাঁর কুলবাগান সবচেয়ে বড়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত