Ajker Patrika

নিকলীতে নারী-পুরুষ একই কক্ষে বন্দী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
নিকলীতে নারী-পুরুষ একই কক্ষে বন্দী

তালাবদ্ধ কক্ষের এক কোণে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। পাশে কয়েকজন পুরুষ। তাঁদের সিগারেটের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা ওই নারীর। ভয়ে কাঁপছেন তিনি। একপর্যায়ে শুরু করেন কান্না।—এই দৃশ্য কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার, যা দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিকলী থানার নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ডেস্কের কক্ষে ওই নারীর সঙ্গে পাঁচ জুয়াড়িকে তালাবদ্ধ করে রাখেন ওসি। ওসির এমন কাণ্ডে বিরক্ত হয়ে ভিডিওটি ধারণ করেন ওই থানার এক অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে ওই দুটি ভিডিওর দুটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নিকলী থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওই নারীকে ওসির নির্দেশে আটক করা হয়েছিল। সকাল ১০টায় তাঁকে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে তালাবদ্ধ করা হয়। একই দিনে দুপুর ১২টার দিকে কারপাশা গ্রাম থেকে পাঁচ জুয়াড়িকে ধরে এনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে ওই নারীর সঙ্গে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।

ওই নারী আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন মুক্ত আছেন। থানাহাজতের ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে একটি মামলার আসামি হিসেবে ধরে এনে জুয়াড়িদের সঙ্গে একই রুমে বন্দী করে রাখেন ওসি। পুরুষ আসামিদের বিড়ি-সিগারেটের গন্ধে সেখানে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় কাটাতে হয়েছে দুই ঘণ্টার বেশি সময়। আমার তখন ভয় করছিল। পুরুষ আসামিদের কাছ থেকে বের করে অন্য রুমে নেওয়ার কথা বলা হলেও আমার কোনো কথায় পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। অনেক পরে অবশ্য সেখান থেকে একটি কক্ষে নিয়ে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টার পরে আমাকে কিশোরগঞ্জ আদালতে চালান করে দেন। তিন দিন পরে আমি আদালত থেকে জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়েছি।’ শুধু এবার নয়, এর আগেও নিকলী থানায় নারী-পুরুষ একসঙ্গে বন্দী করে রাখার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সেই ওসির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার-বাণিজ্যসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও ঘুষ নেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে নিকলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কারার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘থানায় নারী-পুরুষ একসঙ্গে রাখার কোনো নিয়ম থাকতে পারে না। এ ছাড়া ডেস্ক সেবা দেওয়ার জন্য সেখানে নারী-পুরুষদের আটকে রাখা তো আরও অন্যায়। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো ঘটনা।’ 

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নিকলী থানার ওসি মোহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ বলেন, ‘নারীর সঙ্গে পুরুষদের আটকে রেখেছি, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আসল কথা হলো, পাঁচ জুয়াড়িকে ধরে আনার পর তাঁদের ডেস্কে ঢোকানোর সময় ওই নারীকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বের করে নিয়ে এসেছি।’

নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক হাজতখানা হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আসামিদের শরীর তল্লাশির জন্য ডেস্ক রুমটি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করি।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘যদি ঘটনার সত্যতা থাকে এবং আইনের বা বিধির ব্যত্যয় যদি ঘটে থাকে, তাহলে এখানে ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেটা থানার ওসি হোক, সার্কেল এসপি হোক, যেই হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত