জাবিতে ধর্ষণের অভিযুক্ত সবাই ছাত্রলীগের, এত কিছুর পরও নির্বিকার কেন্দ্র

সৌগত বসু ও বেলাল হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ০২

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগেই। সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভেদ। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তবুও কমিটি নিয়ে নির্বিকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে কমিটি দেওয়া হয়। গত ২৩ জানুয়ারি সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তাঁরই অনুসারী সাত হলের নেতা-কর্মী। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, ‘জমি দখল’-এর মতো ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকার অভিযোগ করেন তাঁরা।

এর আগে গত বছরের ১৫ মার্চ সভাপতি আকতারুজ্জামানের অনুসারীরা বিদ্রোহ করেন। তাঁরা সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে তালা মেরে রাখেন। এ বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিবেচনা করছে। জাবি নিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের প্রতি তাঁদের দাবি; শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে তারা যেন কঠোর হয়। 

মাদকসংশ্লিষ্টতা নতুন কিছু নয়
জাবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নেতা-কর্মীদের মাদকসংশ্লিষ্টতার নজির পাওয়া যায়। ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি, মারধর, তুলে এনে মুক্তিপণ আদায় এবং ক্যাম্পাসে মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় এই দুই নেতাকে বহিষ্কার করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এ ছাড়া ছাত্রলীগের উপছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক আল রাজী সরকারের বিরুদ্ধে মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ২২০ নম্বর কক্ষে মাদক সেবন, তুলে এনে মারধর ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে শহীদ সালাম-বরকত হলের ২১৪/এ কক্ষে এক বহিরাগতকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে মারধর করে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ায় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক অসিত পালকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান বলেন, এত বড় ক্যাম্পাসে সব সময় সবকিছু নজরদারিতে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কয়েকজনকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।

মামুনের শুরু বঙ্গবন্ধু হল থেকে
অভিযুক্ত মাদক কারবারি মামুন প্রাক্তন এক ছাত্রলীগ নেতার মাধ্যমেই ক্যাম্পাসে মাদকের বলয় গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেদিন ধর্ষণে অভিযুক্ত মামুন ও মুরাদ হোসেনকে নিয়ে র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে ছাত্রনেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় মামুন তাঁর মাদক কারবার পরিচালনা শুরু করেন।

আজকের পত্রিকার কাছে আসা কিছু ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাক্তন ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লার সঙ্গে অভিযুক্ত মামুনের পূর্বপরিচয় রয়েছে। শামীম মোল্লা গত কমিটির ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি হলের ৩৪৯ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতেন। ২০১৭ সাল থেকে মামুনের ওই কক্ষে যাতায়াত ছিল।

আজকের পত্রিকার কাছে আসা তিনটি ছবির একটিতে দেখা যায়, শামীম মোল্লা থাকেন এমন বাসায় একটি বড় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ছবি তুলেছেন মামুন। পেছনে শামীম মোল্লার ছবিও রয়েছে। আর বাকি দুটি ছবিতে একই বাসায় মামুনকে চাপাতি হাতে দেখা গেছে। ছবির সত্যতা নিয়ে আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, মামুনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ছবির পেছনে শামীন মোল্লার ছবিও আছে।

এ বিষয়ে শামীম মোল্লাকে ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানাতে পারবেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত