স্থানীয় সরকার নির্বাচন: বিএনপির প্রকাশ্যে এক, ভেতরে ভিন্ন

রেজা করিম, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৪৫

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা বলছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও একই অবস্থান দলটির। নীতিনির্ধারণী, কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা, এমনকি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতাদের মুখেও প্রকাশ্যে একই কথা। তবে তৃণমূলসহ দলের ভেতরের অবস্থা ভিন্ন। তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন। 
স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়েও মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না। এখনো সেই নীতিতেই আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অবস্থান একই থাকবে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে সাধারণ নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন হবে। একই দিনে আরও ২৩১টি পৌরসভা, বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদের নির্বাচন ও উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। ঈদের পর কয়েক দফায় সারা দেশে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

সূত্র বলেছে, স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচনে অংশ নিতে চান বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী। অনেকে প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। তাঁরা বলছেন, দলের সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। একইভাবে নির্বাচন নিয়ে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক আগ্রহকেও বিবেচনায় রাখতে হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখার জন্যও নির্বাচনে অংশ নেওয়া দরকার। তাই সরাসরি না হলেও দলের পক্ষ থেকে পরোক্ষ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। 
গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। নির্বাচনের উৎসব থেকে নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত হতে চান না। নির্বাচনে অংশ নিতে লোকজন আমাকে ব্যাপক তাগিদ দিচ্ছে।’

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম খানের ছেলে তৌসিফুল ইসলাম খানও প্রার্থী হতে চান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচন করতে চান। কিন্তু দলের সম্মতি থাকতে হবে, সেটা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ। দল না চাইলে প্রার্থী হবেন না।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখা একাধিক নেতা বলেন, বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলন চলবে। এই আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি তৃণমূল। দীর্ঘ আন্দোলনের পরও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল হতাশ। এ সময়ে উপজেলা নির্বাচনের বিষয় সামনে আসায় এ নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই নির্বাচন নিয়ে দুই ধরনের মনোভাব এসেছে।

বাস্তবতার নিরিখে নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের আগ্রহ অগ্রাহ্য করতে পারছে না একটি অংশ। তারা মনে করছে, জয়-পরাজয় যা-ই হোক, এ অবস্থায় স্থানীয় নির্বাচন অন্তত নেতা-কর্মীদের হতাশা কাটাতে সহায়তা করবে। নির্বাচনের আমেজে তাঁরা আবার চাঙা হয়ে উঠবেন, যা দলের ভবিষ্যতের জন্যই ভালো হবে।

এই অংশের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কৌশলগত কারণে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রকাশ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে থাকার সুযোগ নেই। তিনিও তা মনে করেন। তবে কেউ চাইলে নিজ দায়িত্বে প্রার্থী হতে পারেন। তাঁদের বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত না-ও নিতে পারে।

নীতিনির্ধারকদের অপর অংশ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল। তবে বিএনপির সূত্র বলেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। দলীয় ফোরামে করণীয় ঠিক করা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। যে বা যাঁরা নির্বাচনে যাবেন, তাঁদের নিজ দায়িত্বেই যেতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত