Ajker Patrika

লাঙল-জোয়াল থেকে রূপান্তরের কৃষি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৫৫
লাঙল-জোয়াল থেকে রূপান্তরের কৃষি

কৃষি খাতে দেশের সাফল্য অনেক। ধান, গম ও ভুট্টায় বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। এ ছাড়া ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, আমে সপ্তম, আলুতে অষ্টম, ফলে দশম এবং ফসলের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে বাংলাদেশ।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের কৃষি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এভাবে অগ্রগতি হলে ভবিষ্যতে দেশে কোনো ঘাটতিই আর থাকবে না। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে ধানের উৎপাদন তিন গুণের বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে।

এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ৫০ বছরে আমাদের দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন গড়ে ৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সারা পৃথিবীতে এই সময়ে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। অর্থাৎ গত ৫০ বছরের সারা পৃথিবীতে যে হারে অগ্রগতি হয়েছে, তার চেয়ে বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতি অনেক বেশি দৃশ্যমান।’

স্বাধীনতার পর দেশের ১০ শতাংশ জমি উচ্চফলনশীল শস্যের আওতায় ছিল জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, এখন এটা প্রায় ৯০ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। সেচের আওতায় ১০ শতাংশের কম জমি ছিল। এখন ৭০ শতাংশের বেশি জমি সেচের আওতায় এসেছে। তখন ৫ থেকে ৭ শতাংশ জমি যান্ত্রিকভাবে চাষাবাদ এবং ৯৫ শতাংশ জমি চাষে মানব এবং পশুশক্তি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন মানবশক্তি, পশুশক্তির ব্যবহার খুবই কম।

আলু উৎপাদনের প্রসঙ্গ টেনে অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাধীনতার পর আলু উৎপাদন ২০-২৫ লাখ টন ছিল। এটা ১ কোটি ৯ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। সবজি উৎপাদন গত ২০ বছরের মধ্যে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ একটা বিশাল অর্জন করেছে। এ ক্ষেত্রে চীন এবং ভারতের পরেই বাংলাদেশের স্থান।

জাহাঙ্গীর আলম মনে করেন, বাংলাদেশ খুবই ছোট এবং প্রতিবছর প্রায় ০.৭৪ শতাংশ হারে চাষের জমি কমে যাচ্ছে। এবং ২০ লাখ মানুষ বাড়ছে। এ অবস্থায় যে বিপুল উৎপাদন বৃদ্ধি, এটা সরকারের নীতি-সহায়তার কারণে হয়েছে।

এ কৃষি অর্থনীতিবিদের মতে, বঙ্গবন্ধু কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁর অগ্রাধিকার খাত ছিল কৃষি উন্নয়ন। এর ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ১০ হাজার কোটি টাকা কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছেন এবং পর পর পাঁচবার করে সারের দাম কমানো হয়েছে। বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক কম দামে সার দেওয়া হচ্ছে। কৃষক সাশ্রয় মূল্যে যেন উপকরণ ক্রয় করতে পারেন, সরকার সেটার ব্যবস্থা করছে।

অর্থকরী ফসল পাট নিয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন তো পাটের বাজার ভালো। যদিও পাটের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা আছে। ২৫টি পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও পাটের বাজার অনেক ভালো। পাটের মোট আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে কিন্তু উৎপাদন অনেক বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে এখন যেসব কৃষক পাট চাষ করে তাঁদের মুনাফা অনেক বেশি।

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘আমাদের খাদ্য ঘাটতি আছে। প্রতিবছর যেসব খাদ্যশস্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভালো হয় না অথবা ফসলহানি হয়, অনেক সময় সেসব আমদানি করতে হয়। কিন্তু স্বাধীনতার আগে আমাদের আমদানিনির্ভরতা ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। এখন এটা ১৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। আমাদের ডাল ও তেলের উৎপাদন তত বেশি না। এখন অনেক প্রচেষ্টা চলছে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এবং এ জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে কয়েক বছর আগেও আমাদের অনেক ঘাটতি ছিল। এখন ঘাটতিটা অনেকটাই কমে গেছে।’

কৃষিতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন—এ প্রশ্নে অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর শীর্ষের একটি দেশ। এ কারণে বাংলাদেশের কৃষি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এভাবে যদি আমাদের অগ্রগতি হয়। তাহলে আমাদের কোনো ঘাটতিই ভবিষ্যতে আর থাকবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত