Ajker Patrika

কাগজে দায়িত্বে ৩, বাস্তবে শূন্য

মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১২: ৪২
কাগজে দায়িত্বে ৩, বাস্তবে শূন্য

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বরান্তর কমিউনিটি ক্লিনিক। মাসেও এক দিন খোলা হয় না। ভেতরে ময়লা জমে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীরা আসেন না। এখানে কেউ কর্মরত রয়েছেন কি না, সে বিষয়ে জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারাও। ক্লিনিকটির এমন অবস্থায় হতাশ স্থানীয় বাসিন্দারা। হাওরবেষ্টিত ওই এলাকায় এভাবেই সেবাবিহীন ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ কাগজপত্রে এখানে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীর দায়িত্ব পালন করার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরান্তর কমিউনিটি ক্লিনিকে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদে বিপ্লব কুমার উকিল, স্বাস্থ্য সহকারী পদে তুহিন চৌধুরী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী পদে রয়েছেন তন্দ্রা চৌধুরী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্লিনিকের একমাত্র নারী কর্মী তন্দ্রা চৌধুরী ২০০৯ সালে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই শ্বশুরবাড়ি থাকেন। তুহিন চৌধুরী ও তন্দ্রা চৌধুরী আপন ভাইবোন। তাঁরা বরান্তর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জু চৌধুরীর সন্তান। আর বিপ্লব কুমার উকিলের বাড়ি মোহনগঞ্জ শহরের শিবির গ্রামে।

নিয়ম অনুযায়ী, সিএইচসিপি মূলত ক্লিনিকটির সার্বিক দেখাশোনা করেন। শিশুদের বিভিন্ন টিকাদানসহ অন্যান্য কাজ করেন স্বাস্থ্য সহকারী। এ ছাড়া পরিবারকল্যাণ সহকারী গর্ভবতীদের কাউন্সেলিং, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িসহ অন্যান্য ওষুধ বিতরণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা ইত্যাদি কাজ করে থাকেন। তবে বরান্তর কমিউনিটি ক্লিনিক মাসে এক দিনও খোলা হয় না। এতে করে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবেই এমনটি হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কাশিপুর, কমলপুর ও পাবই কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা প্রায় একই রকম। নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক জানিয়েছেন, কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক সম্প্রতি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও)। এ সময় ক্লিনিকগুলোতে নানা অনিয়ম পেয়েছেন তিনি।

সূত্র জানায়, কোনো ক্লিনিকই ঠিকমতো খোলা হয় না, আবার কোনোটার খাতায় আগাম স্বাক্ষর করা ছিল। নোংরা পরিবেশ ও দুর্গন্ধ তো আছেই। এ ছাড়া বাকিগুলোর অবস্থাও নাজুক। কোনোটাতে পানি নেই, কোনোটায় অন্য সমস্যা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, নিয়মিত খোলা হয় এমন কমিউনিটি ক্লিনিক একটিও পাননি সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, গত শনিবার মোহনগঞ্জের ইউএইচএফপিও মাহমুদা খাতুন বরান্তর কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে সেটি বন্ধ পান তিনি। যদিও এদিন করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা ছিল। পরিদর্শনে গিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগে তিনি জানতে পারেন, গত ১৮ মে থেকে এই ক্লিনিক খোলা হয়নি। এ ছাড়া হাজিরা খাতায় দীর্ঘদিন কারও স্বাক্ষরও পাননি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বরান্তর বাজারের ব্যবসায়ী মামুন চৌধুরী বলেন, বরান্তর গ্রামটি শহর থেকে অনেক দূরে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানকার মানুষ চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে পারে না। হাওরপারের মানুষের চিকিৎসার জন্য এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এটি তো কাউকে কোনো দিন খুলতেই দেখিনি। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ জানেই না যে এখানে ওষুধ দেওয়া বা চিকিৎসা হয়। তাই কেউ এখন আর এই ক্লিনিকে আসে না। এমনকি এটি যে একটি ক্লিনিক, নামফলক না থাকায় তা বোঝারও উপায় নেই।

জানতে চাইলে কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডার বিপ্লব কুমার নিয়মিত অফিসে না যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে পরিবারকল্যাণ সহকারী তন্দ্রা চৌধুরীর অফিস না করার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

স্বাস্থ্য সহকারী তুহিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাজ বাইরে, অফিসে না। নিয়মিত সেই কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে কিছুটা অনিয়ম হয়তো মাঝেমধ্যে হয়।’

তন্দ্রা চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাচ্চা হওয়ার সময় ছয় মাস ছুটিতে ছিলাম। এখন ছোট বাচ্চা নিয়ে অফিস করতে সমস্যা হয়। তবে দায়িত্ব পালন করি। মাঝেমধ্যে হয়তো মিস হয়।’ তিনি বলেন, ‘অফিস দেখার দায়িত্ব সিএইচসিপির। তিনি যেহেতু গাফিলতি করেন, সে ক্ষেত্রে আমরাও কিছুটা করি।’

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘আমি কিছুদিন হলো যোগ দিয়েছি। এর মধ্যে কয়েক কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছি। সব কটির সমস্যা দূর করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত