Ajker Patrika

সোনা নেই আরাভের ইগলে, পুরোই লোহা

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, দুবাই থেকে
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৫: ৫৫
সোনা নেই আরাভের ইগলে, পুরোই লোহা

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের দুবাইয়ের স্বর্ণের দোকানে থাকা ইগলে একটুও সোনা নেই। লোহা দিয়ে তৈরি করে তাতে সোনার রং করা হয়েছে। আর ইগলটি যে দোকানে রেখে ছবি তোলা হয়, সেটিও আরাভ জুয়েলার্স নয়, তাঁর বন্ধু রাসেলের দোকান। সেখানে রেখে ছবি তোলার পর টেলিভিশনে কর্মরত তাঁর পরিচিত এক প্রবাসী সাংবাদিকের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ‘৬০ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি ইগলে খরচ প্রায় ৪২ কোটি টাকা’—এমন তথ্য ছড়িয়ে দেন আরাভ। মূলত আলোচনায় থাকতে এ কাজটি করেন তিনি।

দুবাইয়ে আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জানা যায়, ১৫ মার্চ রাসেলের দোকানে রেখে ছবি তোলার পর চারজনে ধরাধরি করে ইগলটি নিউ গোল্ড সুক এলাকার ৫ নম্বর ভবনে আরাভের দোকানের সামনে রাখেন। ওই চারজন হলেন শরীফ শাহ, সাকিব, রাফসান ও শাহেদ। আরাভের খালি দোকান খুলে রাখা হয়, মানুষ যাতে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারে। দোকানটিতে কোনো সোনা নেই।

দেশ-বিদেশে বাংলাদেশিদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দেওয়া আরাভ জুয়েলার্সে ঢুকে ১৯ মার্চ সকালে ইগলটি ধরে দেখার সুযোগ হয়। এর সামনের অংশে কিছুটা ফিনিশিং থাকলেও বাকি অংশ দেখে ফাঁকির বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়। বেলা পৌনে চারটার দিকে আরাভ এসে দোকানের সামনে সিঁড়িতে বসে মোবাইলে কথা বলার সময় এই প্রতিবেদক পাশে বসেন। নানা কথার ফাঁকে ইগলটি পুরোটা সোনার তৈরি কি না, জানতে চাইলে মুচকি হেসে তিনি বলেন, ‘আপনার কি কোনো সন্দেহ আছে? নকল হলে কি এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা হতো?’ এ সময় রিপন নামের একজন এসে ফরিদপুরের একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য কথা বলবেন বলে আরাভকে ফোন ধরিয়ে দেন। তিনি ফোন কানে নিয়ে হেঁটে হেঁটে কথা বলতে থাকেন। আরাভের সঙ্গে আর কথা হয়নি।

সন্দেহ দূর না হওয়ায় আরাভ জুয়েলার্সের তত্ত্বাবধায়ক ইউসুফ ও শাহেদ আহমেদের সঙ্গে পরিচয় গোপন করে কথা হয়। তবে তাঁরা ইগল সম্পর্কে বেশি তথ্য দিতে পারেননি। পরদিন ২০ মার্চ বেলা ১১টা থেকে সেখানে গিয়ে কয়েকবার ইগলটি ধরে খুঁটিনাটি দেখার সুযোগ হয়। দুপুরে দোকানে আরাভের ব্যবসায়িক অংশীদার রাফসান জামির সঙ্গে ইগলের বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, আরাভের দুই বন্ধু রাসেল ও শরীফ শাহ ইগল তৈরির বিষয়ে বলতে পারবেন। শুরু হয় ওই দুজনের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তাঁরা আরাভ জুয়েলার্সে আসেননি। দেখা মেলে রাসেলের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার ফেনীর ইব্রাহিমের। রাসেলের ফোন নম্বর চাইলে তিনি দেননি। তাড়া থাকার অজুহাতে চলে যাওয়ার সময় তিনি মনির নামের একজনের সঙ্গে কথা বলেন। মনিরের দ্বারস্থ হয়ে পাওয়া যায় রাসেলের মোবাইল নম্বর। ফোন করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে দেখা করার কথা বললে প্রথমে রাজি হননি। বলেন, আরাভ ইস্যুতে খুব চাপে আছেন। যা বলার ফোনে বলতে বলেন। পরে ব্যবসার আকার বড় জেনে দেখা করতে রাজি হন। প্রথমে হায়াত রিজেন্সি এলাকায় যেতে বললেও পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে গোল্ড সুক এলাকার জয়ালুকাস জুয়েলার্সের মোড়ে রাসেলের দেখা মেলে। সঙ্গে আরও দুজন। পরিচয় পর্বে জানা গেল, লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি শরীফ শাহ। কথা শুরু হয় সোনার ব্যবসা নিয়ে।

আরাভ প্রসঙ্গ উঠতেই শরীফ শাহ প্রকাশ করেন ইগল তৈরির কাহিনি। বলেন, তিনি মূলত শাকসবজি ও ফলমূলের ব্যবসা করেন। আরাভ খানের সঙ্গে বছর চারেক আগে তাঁর পরিচয়। বছরখানেক ধরে আরাভ সোনার ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। একপর্যায়ে ওই দোকান ভাড়া নেন। দোকানটি আলোচনায় আনতে আরাভের মাথা থেকেই ইগল দিয়ে লোগো আর পাখি তৈরির বুদ্ধি আসে। প্রথমে ৫০ কেজি ওজনের বানানোর কথা ছিল। সেখানে কেজি দেড়েক সোনা দেওয়ার কথা ছিল। পরে কোনো সোনা দেওয়া হয়নি। এটি তৈরির পর দোকানে আনার সময় দেখেন ওজন ১০০ কেজি হয়ে গেছে। কিন্তু ওজন কমানোরও সময় ছিল না। কারণ, সাকিবের (ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান) শিডিউল চলে এসেছে।

শরীফ ও রাসেলের সঙ্গে যেখানে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল, এর একটু সামনেই রাসেলের মালিকানাধীন এনআরআই (নজরুল-রাসেল-ইব্রাহিম) জুয়েলার্স। হাঁটতে হাঁটতে সেখানে নিয়ে যান রাসেল। জানালেন, তিনি ও তাঁর বন্ধুরা মিলে দুবাইয়ে তিনটি ও শারজায় একটি সোনার দোকান দিয়েছেন। একপর্যায়ে রাসেলের দোকানের ১০০ গজের মধ্যে একটি রেস্টুরেন্টে বসে আলাপ শুরু হয়। শরীফ ও সঙ্গে থাকা অপর ব্যক্তি বিদায় নেন। রাসেলের সঙ্গে আলোচনায় আবারও আসে ইগল প্রসঙ্গ। আরাভের ওপর কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে রাসেল তাঁর মোবাইলের পর্দা দেখিয়ে বলেন, ‘এই দেখেন আজ (২০ মার্চ) সকালে সে আমার কাছে অনেক অনুরোধ করে সোনার একটা বার নিয়েছে। ৬০ কেজি দূরের কথা, তার যদি এক কেজি সোনা থাকত, তাহলে আমাকে এভাবে হাতে-পায়ে ধরে একটা ধার নেয়? আপনারাও পারেন ভাই। এখানে (ইগলে) এক ইঞ্চি সোনাও নেই।’

রাসেল বলেন, ‘আমার দোকানে ইগলটি রেখে সে (আরাভ) কয়েকটা ছবি তোলার কথা জানায়। কারণ, ওর দোকানে কোনো সোনা নেই। দেশ (বাংলাদেশ) থেকে যারা এসে ব্যবসা করার আগ্রহ দেখায়, আমি তাদের সাধারণত সাহায্য-সহযোগিতা করি। আর আরাভ তো আমার বন্ধু। কিন্তু পরিচয়ের পর থেকে তার সবকিছুতে শুধু মিথ্যা আর মিথ্যা।’ ঘড়ির কাঁটা রাত ১১টা ছুঁই ছুঁই দেখে উঠে পড়েন রাসেল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত