সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: নথি দিচ্ছে না তিতাস, আটকে আছে তদন্ত

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১০: ২১

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল গত বছরের মার্চে। এ ঘটনায় তখনই অবহেলার কারণে মামলা করে পুলিশ। এরপর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতে এ মামলার তদন্তে গতি থাকলেও এখন তা নেই। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া নথি না পাওয়ায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না। 
বিস্ফোরণের এ ঘটনায় ২৪ জন প্রাণ হারান, আহত হন শতাধিক। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় করা মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এস এম রাইসুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে তিন দফায় চিঠি দিয়ে দুই দফায় কিছু নথি পেয়েছি। তবে তদন্তকাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি এখনো পাইনি। তারা জানিয়েছে, সেই নথি তাদের কাছে নেই। পরে আদালত তিতাস কর্তৃপক্ষকে সেই নথি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশের চার মাস পেরিয়ে গেলেও তারা এখনো কোনো নথি দেয়নি। ফলে তদন্তকাজ এগোচ্ছে না। 

নথি না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশনের (দক্ষিণ) মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়জুল বারী জানিয়েছেন, এই দায়িত্বে তিনি নতুন। নথি দেওয়া হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন গত বছরের ১১ এপ্রিল ধার্য করেছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত (সিএমএম কোর্ট)। এরপর গত ১০ মাসে নয়বার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়েছে, বদলেছে তদন্তকারী কর্মকর্তাও। সর্বশেষ ধার্য করা তারিখ অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি দশমবারের মতো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মালিক ও তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে কুইন্স ক্যাফে নামের একটি রেস্টুরেন্ট চালু হলে সেখানে দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে বাণিজ্যিক গ্যাস লাইনে সংযোগ দেয় তিতাস। এর প্রায় এক দশক পর বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে দুই ইঞ্চি বাণিজ্যিক পাইপলাইন থেকেই এক ইঞ্চি ব্যাসের কম চওড়া পাইপ সংযোগ করে আবাসিক গ্যাস লাইনে সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর ২০০৪ সালে চার থেকে সাততলা নির্মাণ করার সময় আবাসিক গ্যাস লাইনে সংযোগ দেওয়া হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্যিক থেকে আবাসিক গ্যাস লাইনে সংযোগে ত্রুটি থাকতে পারে। সেখান থেকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হয়েছে। এটি নাশকতা নয়, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তাই গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার সময় তিতাসের কারা দায়িত্বে ছিলেন, কোন ঠিকাদার কাজ করেছেন—সেসব ব্যক্তির তালিকা চেয়ে তিতাসকে তিন দফা চিঠি দিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে বাণিজ্যিক গ্যাস লাইনে সংযোগ এবং পরে ২০০৪ সালে চার থেকে সাততলা পর্যন্ত নির্মাণ করার সময় আবাসিক গ্যাস লাইনে সংযোগকালে তিতাসের দায়িত্বরতদের ও ঠিকাদারদের তালিকা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। তবে বাণিজ্যিক থেকে আবাসিক গ্যাস লাইনে সংযোগ দেওয়ার সময় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও ঠিকাদারের তালিকার কোনো নথি দেয়নি তিতাস কর্তৃপক্ষ।

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালত তিতাস কর্তৃপক্ষকে গ্যাসের লাইন দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট সবার নামের তালিকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা এখনো দেওয়া হয়নি। ফলে চার মাস ধরে এগোচ্ছে না তদন্তের কাজ।

মামলার তদন্তের বিষয়ে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রহমতউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তদন্ত আটকে নেই। আমরা আমাদের মতো করে কাজ করছি। তিতাস গড়িমসি করছে। তাদের নথি পেলে তদন্ত প্রতিবেদনটা তাড়াতাড়ি জমা দিয়ে দিতে পারব।’

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দোতলায় একটি ব্যানারে লেখা ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ’। নিচতলায় কাঠের বোর্ড দিয়ে ঢেকে রাখা স্থানে এক ফুটপাত ব্যবসায়ী ব্যাগ বিক্রি করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচ দিয়েই চলাচল করছেন পথচারীরা। আর ভবনের সামনে কংক্রিটের ব্যারিয়ারের পাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। বিস্ফোরণের পর ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি পিলারে স্টিল প্রোপিং বসানো আছে। বিস্ফোরণের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ভবনটি পুরোপুরি মেরামত করেননি বর্তমান মালিক শামসুন্নাহারের ছেলে মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাজউক সয়েল টেস্ট করেছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কী করা যায়।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত