ফ্যাক্টচেক /শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী— ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ভুয়া উক্তি ভাইরাল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
Thumbnail image

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) গত ৩১ অক্টোবর একটি টুইট করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটটি শুরু করেছেন এভাবে—বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদেরওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন। এসবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ “বিশৃঙ্খল” অবস্থার মাঝে রয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশেও এখন আলোচনার বিষয় সামনেরদিনগুলোতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রেরমাঝে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন হবে। এ আলোচনায় যুক্ত হয়েছে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগের নামও। দলটির সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে তাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীহিসেবে উল্লেখ করে।

এসব আলোচনার মধ্যেই আজ শনিবার সন্ধ্যা থেকে ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ডোনাল্ডট্রাম্প মনে করেন শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী—ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ভুয়া উক্তি ভাইরাল। ছবি: ফেসবুক
শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী—ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ভুয়া উক্তি ভাইরাল। ছবি: ফেসবুক

শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সাধারন সম্পাদক নুরুল আজিম রনির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য দাবিতে এমন একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে লেখা, ‘আমি মনে করি শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: পিবিডি ব্রডকাস্টকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কথা বলেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের অবৈধ দখলদার সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন-যারা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, তারা আমাকে পদত্যাগ পত্রটি দেখান।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ–পাকিস্তানে কি হচ্ছে আমি সব জানি। এখানে সন্ত্রাসবাদের চাষাবাদ হচ্ছে।’

দাবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

নুরুল আজিম রনি তাঁর পোস্টটির সূত্র হিসেবে কমেন্টবক্সে ‘ন্যাশনাল ডায়ালগস’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওর লিংক সূত্র হিসেবে সংযুক্ত করেছেন। ন্যাশনাল ডায়ালগস ভারতীয় একটি ইউটিউব চ্যানেল। তরুণ ঘোষ নামে কলকাতার একজন সাংবাদিক এই চ্যানেলে নিয়মিত তার নিজের মতামত ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন। আজ শনিবার ঘণ্টা দুয়েক আগে পোস্টকরা ভিডিওটির শিরোনাম, ‘আমি মানি হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: ট্রাম্প’।

ভিডিওটিতে তরুণ ঘোষ দাবি করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জেতার পর গতকাল শনিবার একটি পডকাস্টে যোগ দিয়েছিলেন। পিবিডি পডকাস্ট নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এটি আয়োজন করা হয়। পডকাস্টে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। পডকাস্টটিতে কিছু কিছু ব্যক্তিকে ট্রাম্প শত্রুর তালিকায় রেখেছেন। এ তালিকায় এক নম্বরে আছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এরপরই থাকবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কি...।

শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী—ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ভুয়া উক্তি ভাইরাল। ছবি: ইউটিউব
শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী—ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ভুয়া উক্তি ভাইরাল। ছবি: ইউটিউব

তরুণ ঘোষ আরও দাবি করেন, ট্রাম্প পডকাস্টে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, এখানে স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছে এবং এখানে সন্ত্রাসবাদের একটা বীজ বোনা হচ্ছে।

এরপর ভিডিওটিতে তরুণ ঘোষ নিজের আরও বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিবিডি পডকাস্টে অংশ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পডকাস্টটি তিনি অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে নয়।

প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে পিবিডি পডকাস্টের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাম্পের পডকাস্টটি পাওয়া যায়। চ্যানেলটিতেগত ১৭ অক্টোবর পডকাস্টটি প্রচার করা হয়। ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিটের পডকাস্টটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বারাক ওবামার ভূমিকা, কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা, ইরানের ওপর অবরোধ, পররাষ্ট্র নীতি ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন।

পডকাস্টটিতে পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কিত আলোচনায় ট্রাম্প জানান, তাঁর সঙ্গে পুতিন ও জেলনস্কির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন।

নির্বাচনের আগে পডকাস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: ইউটিউব
নির্বাচনের আগে পডকাস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: ইউটিউব

পুরো পডকাস্টটিতে তাঁকে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো আলোচনা করতে শোনা যায়নি। নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে টুইটটি ছাড়া তিনি বাংলাদেশ বা শেখ হাসিনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন বলে কোনো তথ্যও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং এটি নিশ্চিত, শেখ হাসিনাকে ট্রাম্প এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন এবং তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।

প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ডায়ালগস নামের ইউটিউবচ্যানেলটি থেকে এর আগেও গত ২৪ অক্টোবর থেকে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার একটি দাবি প্রচার করা হয়েছিল। বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার দাবিটি গুজব বলে জানায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত