বাংলাদেশের ভিডিও ভারতে পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে জড়িয়ে প্রচার

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ২১
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ২০: ০৬

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ‘দেখুন, পুলওয়ামা হামলায় কীভাবে বিস্ফোরক আনা হয়েছে!’ মূলত ভারতের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ভিডিওটি ব্যাপক হারে পোস্ট করছেন।

৩০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যেরা সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের তল্লাশি করছেন। এর মধ্যে বোরকা পরিহিত অন্তঃসত্ত্বা নারী সদৃশ এক ব্যক্তিকে তল্লাশি করে দেখা যায়, তিনি আসলে পুরুষ। ওই ব্যক্তির বোরকার নিচে পেটের কাছে বাঁধা কিছু বস্তু উদ্ধার করা হয়। ভিডিওটি অস্পষ্ট হওয়ায় উদ্ধার করা বস্তু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না।

ফেসবুকে শশী পাতিল নামের আইডি থেকে পোস্ট করা ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে। ভিডিওর সঙ্গে মারাঠি ভাষায় লেখা ক্যাপশন গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে অনুবাদ করলে এমনটি দাঁড়ায়— ‘এই ভিডিওতে লোকেদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে যে, পুলওয়ামায় বিস্ফোরক কীভাবে এসেছে।’

ফ্যাক্টচেক
ভাইরাল পোস্টগুলোতে পুলওয়ামা বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও এই বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে ধারণা করা যায়, ভিডিওটি ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা শহরে বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে প্রচার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে সেটিই পুলওয়ামা বিস্ফোরণের সবচেয়ে বড় ঘটনা।

ওই দিন ভারতের নিরাপত্তা কর্মীদের বহনকারী একটি গাড়িবহর পুলওয়ামা জেলার লেথোপোড়া (অবন্তীপাড়ার কাছাকাছি) অতিক্রমকালে জম্মু শ্রীনগর জাতীয় সড়কে আত্মঘাতী বোমা হামলার শিকার হয়। এই হামলায় ৪০ জন কেন্দ্রীয় পুলিশ সদস্য নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে। এই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে।

ভারতের পুলওয়ামা শহরে ২০১৯ সালে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেফ্যাক্টচেক টুল ‘ইনভিড’ ব্যবহার করে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের একটি ঘটনার। এর সঙ্গে পুলওয়ামা বিস্ফোরণের কোনো সম্পর্ক নেই।

‘স্মাইল টিভি বাংলা’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওতে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ৫ মিনিট ৫১ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটির অংশবিশেষ সম্পাদনা করে ৩০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভাইরাল ভিডিওটি বানানো হয়েছে।

ভিডিওটিতে স্ক্রল আকারে লেখা হয়েছে, ‘চট্টগ্রামের রাউজানে অন্তঃসত্ত্বা সেজে মাদক পাচারকালে আটক দুই।’ ইউটিউবে প্রকাশিত ওই ভিডিও ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

ভিডিও থেকে তথ্যগুলো যাচাই করলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজানে বোরকা পরে অন্তঃসত্ত্বা সেজে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ৫২ লিটার মদ পাচারকালে এক পুরুষ ও এক নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৯ মার্চ বিকেলে রাউজান পৌরসভার জলিল নগর সিএমপি মসজিদ সংলগ্ন চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার মোগলটুলি গ্রামের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত মো. শাহাজানের ছেলে সাগর (২০) ও সদরঘাট থানা এলাকার বাসিন্দা নয়ন উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম (১৯)।

ওই প্রতিবেদনে প্রকাশিত রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুনের দেওয়া বক্তব্য থেকে জানা যায়, দুজনই নারী ও অন্তঃসত্ত্বা দাবি করলেও একজনের কণ্ঠ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তল্লাশি চালানো হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ইউনিফর্ম ও শেয়ার করা ভিডিওতে তল্লাশিরত পুলিশ সদস্যদের ইউনিফর্ম যাচাই করে দেখা যায়, দুই ক্ষেত্রেই ইউনিফর্ম অভিন্ন।

সিদ্ধান্ত
ভারতের পুলওয়ামা বিস্ফোরণের বিস্ফোরক কীভাবে এসেছে, তা উদ্‌ঘাটনের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের একটি ঘটনার। গত মার্চে চট্টগ্রামের রাউজানে বোরকা পরে অন্তঃসত্ত্বা সেজে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ৫২ লিটার মদ পাচারকালে এক পুরুষ ও এক নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভিডিওটি সেই ঘটনার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত