বাংলাদেশে মদ শুল্কমুক্ত, খেজুরে শুল্ক ২০৮ শতাংশ— দাবিটি সঠিক নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ০৮
Thumbnail image

রমজানের ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর। দেশের বাজারে খেজুরের দাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে আছে নানা প্রতিক্রিয়া। এসব প্রতিক্রিয়া সূত্রেই সম্প্রতি খেজুর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একটি তথ্য। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ‘খেজুরে ২০৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ আর মদকে করা হয়েছে শুল্কমুক্ত।’ 

গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ‘জাস্ট জার্নাল’ নামের একটি পেজ থেকে এমন একটি তথ্যসহ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি আজ শুক্রবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৪৯ হাজার বার দেখা হয়েছে, রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের কাছাকাছি। 

খেজুরে ২০৮ শতাংশ শুল্ক?
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে আজকের পত্রিকাতেই গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘রমজানে খেজুরের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা আমদানিকারকদের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আসন্ন রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ও বাজারমূল্য স্বাভাবিক রাখতে গত জানুয়ারি মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাস্টমস বিভাগের প্রজ্ঞাপনে খেজুর আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আমদানিকারকেরা ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই সুবিধা পাবেন।

১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে আবদুস সালাম হলে সংবাদ সম্মেলনে করে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সিরাজুল ইসলামও শুল্ক কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, যেখানে পূর্বের শুল্ক ছিল প্রতি কেজিতে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ২১ টাকা ৮৪ পয়সা, সেখানে ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত শুল্ক দিতে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ৬৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। ৭ তারিখে ১০ শতাংশ শুল্ক কমানো হলেও প্রতি কেজিতে শুল্ক থাকছে ৫৪ টাকা থেকে ১৪৬ টাকা। 

জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ গত ৫ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, শুল্ক কমানোর আগে খেজুর আমদানিতে ব্যবসায়ীদের কাস্টমস শুল্কসহ মোট ৫৩ শতাংশের মতো বিভিন্ন শুল্ককর দিতে হতো। এর মধ্যে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ করতে হয় ২৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ এবং অগ্রিম কর ৫ শতাংশ দিতে হয়। সেখানে এখন অন্যান্য শুল্ক–কর ঠিক রেখে শুধু কাস্টমস শুল্ক কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ। তাই এখন খেজুর আমদানিতে শুল্ক কর পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৪৩ শতাংশ।

অর্থাৎ, দেশে খেজুরে ২০৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার দাবিটি সঠিক নয়। 

২০৮ শতাংশ শুল্ক আরোপের দাবিটির উৎস অনুসন্ধানে ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বাংলা সংস্করণে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘এক কেজি খেজুরে শুল্ক ২০৮ টাকা, অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু যৌক্তিক করার দাবি আমদানিকারকদের’ শিরোনামে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) নেতাদের দাবি, কাস্টমস খেজুরের শুল্কায়নের জন্য যে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু নির্ধারণ করেছে, তার কারণেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেও খরচের খুব বেশি হেরফের হচ্ছে না। 

আমদানিকারকদের দাবি, গত বছর রোজায় যে খেজুর পাইকারি বাজারে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, এবার সেই খেজুরের ওপরই আমদানি শুল্ক গুনতে হচ্ছে ২০৮ টাকা। এতে পাইকারি বাজারেই খেজুরটির দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। 

বাংলাদেশে মদ আমদানি কি শুল্কমুক্ত?
কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলায় ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে অ্যালকোহলের ওপর আমদানি শুল্ক ৬০০ শতাংশ। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, শুল্কের এই উচ্চমাত্রার কারণে দেশের যেসব ক্লাবের অ্যালকোহলের লাইসেন্স আছে, তারা কেউ আমদানি করে না। তারা বিকল্প নানা উপায়ে মদের সংস্থান করে।

২০২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে কূটনীতিকদের জন্য বিনা শুল্কে মদ কেনার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য রয়েছে বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মদও এক সময় বাইরে বিক্রি হতো। তবে এনবিআরের কড়াকড়ির কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কূটনীতিকদের জন্য আনা বিদেশি মদ আর বাইরে বিক্রি হয় না বলে দাবি করা হয়। যদিও বন্ডেড ওয়্যারহাউস থেকে মদ অবৈধভাবে বিক্রি বন্ধ হওয়ায় ভারত থেকে লাগেজে আনা বেড়েছে বলে স্বীকার করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০২২ সালের অক্টোবরে আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সুরক্ষা সেবা সচিব বরাবর মদের আমদানি শুল্ক ৩ গুণ কমানোর দাবি জানান। অ্যালকোহল ও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় আমদানি শুল্ক ৬০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০০ শতাংশ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সুপারিশ পাঠাতে অনুরোধ করেন বারের মালিকেরা। এই আমদানি শুল্ক এখনো বহাল আছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে মদ আমদানি শুল্কমুক্ত নয়। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত