ছয় বান্ধবী একসঙ্গে বিসিএস ক্যাডার! ভাইরাল ছবির আসল গল্প

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ০২
Thumbnail image

‘একসঙ্গে ছয় বান্ধবী বিসিএস ক্যাডার। একজন এডিসি, একজন আইসিটি অফিসার, একজন ইউএনও, দুজন এসি ল্যান্ড, একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার—মানে সবাই ক্যারিয়ারে সাকসেসফুল এবং সবার পোস্টিং একই জেলায়’—এমন একটি গল্পসহ সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছয়জন নারীর কিছু গ্রুপ ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে।

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রিপারেশন (BCS Preliminary Preparation) নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে ছবিগুলো দিয়ে এমন একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটিতে আজ রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে। কমেন্ট পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন শ। ছবি ও গল্পটি থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা কমেন্ট বক্সে লিখেছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।

শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একই গল্প ও ছবি দিয়ে তৈরি ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও এক দিন আগে শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটি আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ২ লাখ ৩১ হাজার বার দেখা হয়েছে। 

ছবির গল্পটি যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

ভাইরাল ছবি ও গল্পের সত্যাসত্য
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোর গল্পের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ভাইরাল পোস্টগুলোতে ‘চিত্রকথা—Chitro Kotha’ নামের একটি পেজকে ছবিগুলোর কৃতজ্ঞতা দেওয়া হয়েছে। পরে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে এই নামে ৪১ হাজার ফলোয়ারের একটি পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি ফটোগ্রাফি ও সিনেমাটোগ্রাফি-সম্পর্কিত। এটি শরীয়তপুর সদর থেকে পরিচালনা করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে। 

পেজটিতে ভাইরাল ছবিগুলো পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে পেজটি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটি দেওয়া হয় আফ্রিদি নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, ‘যারা আমার পোস্টটি কপি করতেছেন, আপনাদের দুইটা হাতে ধরে বলি, প্লিজ ডোন্ট ডু দিস, করে থাকলে দয়া করে ডিলিট করে দিন। ছবিগুলো গত বছরের পয়লা ফাল্গুনে তোলা ছিল, ছবিগুলো তোলার জন্য তারা আমাকে ভালো অঙ্কের পারিশ্রমিকও দিয়েছিল, কিন্তু আমি পোস্ট করার আগে যেহেতু পারমিশন নিইনি, তাই আমি এখন হুমকির মুখে।’

পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘পোস্টটি বাংলাদেশব্যাপী ভাইরাল হয়ে যাবে, এটা আমি ভাবিইনি, আমি গতকাল রাতেই ডিলিট করে দিছি, তারপরও এখন অবধি অনেকে তা পোস্ট করে যাচ্ছেন। আপনি হয়তো পপুলার বা রিচ, রিঅ্যাক্ট পাওয়ার জন্য দিচ্ছেন। কিন্তু এতে আমার ক্ষতি হচ্ছে...আপনি আমাকে চিনেন না, জানেন না, সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন মানুষ আমি, আপনি কি জেনে বুঝে আমার ক্ষতি করবেন? জানি করবেন না; কারণ, আপনি একজন মানবিক ও ভালো মানুষ। তাই বলছি, প্লিজ ডিলিট করে দিন।’ 

এই পোস্ট থেকে ধারণা করা যায়, ছয় নারীর ভাইরাল ছবিগুলো এই পেজ থেকেই প্রথমে পোস্ট করা হয় এবং ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো মুছে দেওয়া হয়েছে।

একসঙ্গে ছয় বান্ধবী বিসিএস ক্যাডার দাবিতে ফেসবুকে ভাইরাল হয় ‘চিত্রকথা-Chitro Kotha’ নামের পেজ থেকে। ছবি: ফেসবুকছবির নারীদের খোঁজে 
আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ এই পর্যায়ে ছবির নারীদের পরিচয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করে। এ উদ্দেশ্যে ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলোর কমেন্ট বক্স যাচাই করে ছবিতে থাকা অন্তত দুজন নারীর পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁদের একজন শরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শামসুন নাহার এবং আরেকজন নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাছিবা খান। 

তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, শামসুন নাহার বিসিএস ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর বর্তমান কর্মস্থলে যোগ দেন। হাছিবা খান বিসিএস ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর বর্তমান কর্মস্থলে যোগ দেন।

অর্থাৎ ছবিতে থাকা নারীদের মধ্যে অন্তত দুজন বর্তমানে আলাদা জেলায় কর্মরত এবং তাঁদের বিসিএস ব্যাচও আলাদা। 

ভাইরাল গল্পটির সত্যতা জানতে তাঁদের দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

একসঙ্গে ছয় বান্ধবী বিসিএস ক্যাডার দাবিতে টিকটকে ছড়িয়ে পড়া গল্পটি বানোয়াট। ছবি: টিকটকশরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শামসুন নাহার বলেন, ‘ছবিগুলো যেসব তথ্য দিয়ে ভাইরাল করা হয়েছে, বিষয়গুলো আসলে তেমন না। আমরা একেক সময়ে জয়েন করেছি, সিনিয়র, জুনিয়র আছি। ফটোগ্রাফার তো এত কিছু জানে না, হয়তো ভুলে লিখছে।’ 

নরসিংদী জেলার মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘আমি এর আগে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় ছিলাম। ওই সময় এসি ল্যান্ড, ইউএনও, ডিসি অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারসহ কয়েকজন কলিগ শরীয়তপুর সার্কিট হাউসে ফুলের বাগানে স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কিছু ছবি তুলি।’

হাছিবা খান বলেন, ‘যে ছেলেটি আমাদের ছবি তুলেছে, সে আমাদের পারমিশন ছাড়াই তার মতো করে লিখে দিল, ছবিগুলোতে আমরা ছয় বান্ধবী, ইত্যাদি। বিষয়টি আসলে তা না। পরে আমি ছেলেটিকে ছবিগুলো ডিলিট করে দিতে বলি এবং সে ডিলিট করে দেয়। আসল কথা, এটা ফেক নিউজ। আমরা কেউ বান্ধবী না, কলিগ। ছবিগুলো তোলা হয়েছিল আমাদের পারসোনাল ছবি হিসেবে।’

মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খানের কথায় বোঝা যায়, ভাইরাল গ্রুপ ছবিটি যখন তোলা হয়, তখন ওই ছয় নারীই শরীয়তপুর জেলায় বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের অনেকে পরবর্তী সময় বিভিন্ন জেলায় বদলি হয়েছেন। তাঁদের বিসিএস ব্যাচও আলাদা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত