ক্যালিফোর্নিয়ার জলপ্রপাতে নেমে আসা পূর্ণিমার চাঁদ! ভাইরাল ছবিটি কৃত্রিম

ফ্যাক্টচেক 
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ০৬
Thumbnail image

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্টিনেল রকের ঠিক পশ্চিমে ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের দক্ষিণ দিকে অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতের ওপর নেমে আসা একটি পূর্ণিমা—এমন ক্যাপশনে পূর্ণ চাঁদ ও জ্বলজ্বল করতে থাকা জলপ্রপাতের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ‘বিজ্ঞান পোস্ট: (মহাকাশ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি)’ নামের ১ লাখ ২৯ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ১৪ মার্চ আহিদা ইভা নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। অ্যাকাউন্টি গ্রুপের মডারেটর। পোস্টের ক্যাপশনে আরও লেখা হয়েছে, ‘প্রতি বছর কয়েক দিনের জন্য মনে হয় যেন চাঁদ জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে নেমে যাচ্ছে।’ 

ক্যালিফোর্নিয়ার জলপ্রপাতে নেমে আসা পূর্ণিমার ভাইরাল ছবিটি এডিটেড। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে স্ক্রিনশটএই পোস্ট আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫০০ শেয়ার হয়েছে। এতে রিয়েকশন পড়েছে ২০ হাজারের বেশি। কমেন্টবক্সে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ছবিটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। কেউ কেউ অবশ্য ছবিটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করেছেন।

ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসে ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ছবিটি ‘লাভা মুন’ নামে পরিচিত। ছবিটির মূল স্রষ্টা রিসভ্যান (Risvan) নামে একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট। ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই নিজের ইনস্টাগ্রামে ‘লা লুনা (La Luna)’ ক্যাপশনে ছবিটি প্রথম পোস্ট করেন তিনি।

রিসভ্যান তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ওই সময় ভাইরাল ছবিটির প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন। রিসভ্যান জানান, ছবিটি তিনি তৈরি করেছিলেন দুটি আলাদা ছবির সমন্বয়ে। এর মধ্যে ঝরনার ছবিটি হলো ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত হর্সটেইল ঝরনার। এই ছবি তুলেছিলেন মার্কেইন বি নামের আরেকজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী। ‘লা লুনা’ ছবিটিতে থাকা চাঁদের ছবিটি নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওয়েবসাইট থেকে। অর্থাৎ রিসভ্যানের ঝরনা ও পূর্ণিমার ছবিটি কোনো বাস্তব ছবি নয়। এটি দুটি ভিন্ন ছবির সমন্বয়ে তৈরি করা। লা লুনা শিরোনামের ভাইরাল ছবিটিতে একজন মানুষকে ঝরনার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। 

হর্সটেইল ঝরনা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নির্দিষ্ট কিছু সময় ‘অগ্নি ঝরনা’য় রূপ নেয়। ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ওয়েবসাইট রিসভ্যান ওই বছরের ২৭ জুলাই ছবিটি এনিমেশন আকারেও শেয়ার করেছিলেন। 

লা লুনা ছবিটি যে দুটি দুটির সমন্বয়ে তৈরি করা হয়, স্নোপসের প্রতিবেদন থেকে আলাদা সেই দুই ছবি পাওয়া যায়। 

আর ঝরনার পাশে একজন দাঁড়িয়ে থাকার প্রসঙ্গে স্নোপস জানায়, ছবিতে থাকা ওই ব্যক্তির উপস্থিতি সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। রিসভ্যান নিজেও এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে ধারণা করা যায়, ওই ব্যক্তি রিসভ্যানই। এমন অনেক ডিজিটাল আর্ট পাওয়া যায়, যেখানে ডিজিটাল আর্টিস্টরা নিজেদের ছবি যোগ করে দেন। 

হর্সটেইল ঝরনার ভাইরাল ছবিটি এডিটেড হলেও বাস্তবে ঝরনাটি বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় ‘অগ্নি ঝরনা’য় রূপ নেয়। এই ‘অগ্নি ঝরনা’ দেখা যায় সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ বিকেলের দিকে। তবে অবশ্যই পরিষ্কার আকাশ আর ঝলমলে রোদ থাকতে হয় এবং সূর্যের আলো একটি নির্দিষ্ট কোণে ঝরণার পানির ওপর পড়তে হয়। তবেই দেখা মেলে আগুনঝরা হর্সটেইল ঝরনার।

প্রসঙ্গত ‘বিজ্ঞান পোস্ট: (মহাকাশ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি)’ নামের গ্রুপটি থেকে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় অবস্থিত ন্যাট্রন হ্রদ নিয়ে কিছু তথ্য প্রচার করে দাবি করা হয়, এই হ্রদে কোনো প্রাণী পড়লেই সেটি পাথর হয়ে যায়। তবে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়।

আরো পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত