সচিবালয়ে হিন্দুধর্মাবলম্বী সচিবের সংখ্যা ৪০০, মাদ্রাসার উপসচিবও হিন্দু! সত্যটা কী

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১: ০৬
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ০৯

‘সচিবালয়ে মুসলিম নেই বললেই চলে। ৪০০ জন হিন্দু সচিব, মাদ্রাসার উপসচিবও হিন্দু’—এই দাবিতে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর’ নামে ৩ লাখ ১৬ হাজার সদস্যের ফেসবুক গ্রুপে এই পোস্ট দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা দেড়টা পর্যন্ত এতে প্রায় দেড় হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে। এটি শেয়ার হয়েছে সাড়ে সাত শ বারের বেশি। 

এটি ছাড়াও ফেসবুকের আরও একাধিক গ্রুপ, পেজ ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে তথ্যটি প্রচার হতে দেখা গেছে। কোনো পোস্টে ‘মাদ্রাসার উপসচিব হিন্দু’ লেখা একটি ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। ছবিটিতে একটি নামফলকে সুবোধ চন্দ্র ঢালী নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উপসচিবের নাম রয়েছে। 

‘মাদ্রাসার উপসচিব হিন্দু’ দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট। ছবি: ফেসবুকফেসবুকে ভাইরাল তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে সচিবদের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়।

তালিকাটিতে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এটি সবশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি হালনাগাদ করা হয়েছে। তালিকাটিতে মোট ৮৭ জন সচিব বা সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নাম আছে। তালিকাটিতে কারও ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও নামের ধরন দেখে বোঝা যায়, এই ৮৭ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। বাকি ৮২ জনই ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

এই পাঁচজন হলেন—বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) সুকেশ কুমার সরকার ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া।

অর্থাৎ সরকারের সচিবদের সংখ্যা এবং তাঁদের ধর্ম পরিচয় নিয়ে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। 

সুবোধ চন্দ্র ঢালী কি মাদ্রাসার উপসচিব? 

অনুসন্ধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের নভেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দুটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ’ অপরটি ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ’।

পরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিং বিডিতে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যাত্রা শুরু’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ আনুষ্ঠানিক যাত্রা ‍শুরু করে। একই দিনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবেদনটি থেকে সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের নামের তালিকা পাওয়া যায়। এখানে সুবোধ চন্দ্র ঢালীকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি-১-এর উপসচিব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুদের প্রাধান্য দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০২২ সালে ছড়িয়ে পড়া দাবির বিপরীতে ওই সময় একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার। ওই সময় দেখা যায়, সুবোধ চন্দ্র ঢালীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা দাবি করা হয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে রিউমার স্ক্যানার জানায়, সুবোধ চন্দ্র ঢালী ওই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের উপসচিব (কারিগরি-২) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। 

সুবোধ চন্দ্র ঢালী কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের উপ-সচিব (কারিগরি-২) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ছবি: রিউমর স্ক্যানারের সৌজন্যে বর্তমানে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে কর্মরত উপসচিবদের মধ্যে সুবোধ চন্দ্র ঢালীর নাম নেই। বিভাগটির মাদ্রাসা-১-এর উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাছিনা আক্তার।

এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তালিকায় উপসচিব পদে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ সুবোধ চন্দ্র ঢালী বর্তমানে মাদ্রাসার উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন না এবং আগেও তিনি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসার দায়িত্বে ছিলেন না। ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তাঁকে সবশেষ বিভাগটির কারিগরি-২-এর উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। 

স্পষ্টত, ‘সচিবালয়ে মুসলিম নেই বললেই চলে। ৪০০ জন হিন্দু সচিব, মাদ্রাসার উপসচিবও হিন্দু।’—দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত